প্রাকৃতিক দুর্যোগ : ভূমিকম্প : ভূমিকম্পের ইতিহাস : কারণ : ভুমিকম্পের কেন্দ্র : ভূমিকম্প জোন

ড. মোহাম্মদ আমীন

ভূমিকম্প

ভূত্বকের নিচে টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার ফলে ভূপৃষ্ঠে যে কম্পন অনুভূত হয়, তাকে ভূমিকম্প বলে। টেকটনিক প্লেট ছাড়াও আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতেও ভূমিকম্প হতে পারে। ভূ-অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চয় ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূ-পৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূ-ত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প বলে। ভূমিকম্পের ফলে ভূত্বকের উপরে থাকা স্থাপনা কম্পন সহ্য করতে না পারলে ভেঙ্গে পড়ে। সবচেয়ে বেশী ভূমিকম্প হয় প্রশান্ত মহাসাগরের বহিঃসীমানায়।

ভূমিকম্পের কারণ

ভূপৃষ্ঠজনিত, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং শিলাচ্যুতি ভূমিকম্পের উৎপত্তির প্রধান।তাছাড়া ভূপাত, তাপ বিকিরণ, ভূগর্ভস্থ বাষ্পএবং হিমবাহের প্রভাব ভূমিকম্পের কারণ হয়ে উঠে।

ভূমিকম্পের কেন্দ্র

পৃথিবীর অভ্যন্তরে যেখান থেকে ভূকম্প-তরঙ্গ সৃষ্টি হয়, তা ভূমিকম্পের কেন্দ্র। এই কেন্দ্র থেকে কম্পন ভিন্ন ভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শিলার পীড়ন-ক্ষমতা সহ্যসীমার বাহিরে চলে গেলে শিলায় ফাটল ধরে ও শক্তির মুক্তি ঘটে। তাই সাধারণত ভূমিকম্পের কেন্দ্র চ্যুতিরেখাংশে অবস্থান করে। সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে এই কেন্দ্র অবস্থান করে। তবে ৭০০ কিমি. গভীরে গুরুমণ্ডল (গধহঃষব) থেকেও ভূ-কম্পন হতে পারে। গভীর ভূমিকম্প হয় ৩০০ কিলোমিটারের অধিক গভীরতায়। মাঝারি ভূমিকম্প হয় ৬০-৩০০ কিমি পর্যন্ত।

ভুমিকম্পলিখন পরিমাপক যন্ত্র

ভূমিকম্প পরিমাপক বা ভূকমম্পন লিখন যন্ত্রের নাম সিসমোগ্রাফ। ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণায়ক যন্ত্রেরর নাম রিখটার স্কেল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা যায় : ১ হতে ১০ পর্যন্ত। মার্সেলি স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা মাপা যায় : ১ হতে ১২ পর্যন্ত। ঘন ঘন ভূমিকম্প হয় বলে জাপানকে ভূমিকম্পের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের ফলে বদলে গিয়েছে- ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ।

বাংলাদেশে ভূমিকম্প

বাংলাদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০০টিরও বেশি ভূমিকম্প হয়েছে। তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। এতে প্রতীয়মান হয়, বিগত ৩০ বছরে ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে।

 বাংলাদেশের ভূমিকম্প জোন

বাংলাদেশের ৪৩ ভাগ এলাকা ভূমিকম্পের উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে (জোন-১), ৪১ ভাগ এলাকা মধ্যম (জোন-২) এবং ১৬ ভাগ এলাকা নিম্ন ঝুঁকিতে ( জোন-৩) রয়েছে। মাত্রাভেদে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার অবস্থান নিম্নরূপ:

জোন-১: পঞ্চগড়, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সম্পূর্ণ অংশ এবং ঠাকুরগাঁও, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজারের অংশবিশেষ।

জোন-২: রাজশাহী, নাটোর, মাগুরা, মেহেরপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী এবং ঢাকা।

জোন -৩: বরিশাল, পটুয়াখালী, এবং সব দ্বীপ ও চর।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : ঝড় : বজ্রপাত : কালবৈশাখী ঝড় : জলোচ্ছ্বাস : বজ্রঝড় ও আশ্বিনের ঝড়

প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বাংলাদেশের বন্যা : ইতিহাস : প্রথম বন্যা কমিটি

——————————————————————————-

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয় সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

শুদ্ধ বানান চর্চা/১

শুদ্ধ বানান চর্চা/২

শুদ্ধ বানান চর্চা /৩

 

Language
error: Content is protected !!