ড. মোহাম্মদ আমীন
কাজী ইমদাদুল হক ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাজী আতাউল হক আসামের জরিপ বিভাগে চাকরি করতে করতেন এবং পরবর্তীকালে তিনি খুলনার ফৌজদারি আদালতের মোক্তার নিযুক্ত হন তিনি ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে কাজী কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিএ পাশ এবং ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে বিটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।
১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দে কাজী ইমদাদুল হক কলকাতা মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে আসামের শিলং বিভাগে শিক্ষাবিভাগের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক হন। ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভূগোলের অধ্যাপক হন। এরপর ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা বিভাগে মুসলিম শিক্ষা সহকারী স্কুল পরিদর্শক হিসেবে যোগ দেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে কলকাতা ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বোর্ডের সুপারিন্টেনডেন্ট হন। আমৃত্যু তিনি এই পদে বহাল ছিলেন। শিক্ষাবিভাগে তার যোগ্যতাপূর্ণ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে ব্রিটিশ সরকার ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে খান সাহেব এবং ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে।
কাজী ইমদাদুল হক সাংবাদিকতার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। তার সম্পাদনায় নবনূর পত্রিকা প্রকাশিত হতো। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসে তার সম্পাদনায় শিক্ষাবিষয়ক মাসিক শিক্ষক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। পরবর্তী তিন বছর এই পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে।এছাড়াও তিনি বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই পত্রিকা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্যের কমিটিতে তিনি সভাপতি ছিলেন। কমিটির বাকি সদস্য: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (সম্পাদক), মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক (সম্পাদক), মোহাম্মদ রেয়াজউদ্দীন আহমদ, মঈনউদ্দীন হোসায়েন ও কমরেড মুজাফফর আহমদ।
কাজী ইমদাদুল হক কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য রচনা করেছেন। আবদুল্লাহ উপন্যাসের জন্য তিনি অধিক খ্যাত। তার রচিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে: আঁখিজল (১৯০০), মোসলেম জগতে বিজ্ঞান চর্চা (১৯০৪), ভূগোল শিক্ষা প্রণালী (দু’খণ্ড, ১৯১৩, ১৯১৬), নবীকাহিনী (১৯১৭), প্রবন্ধমালা (১৯১৮), কামারের কাণ্ড” (১৯১৯), আবদুল্লাহ (১৯৩২), আলেক্সান্দ্রিয়ার প্রাচীন পুস্তকাগার, আবদুর রহমানের কীর্তি, ফ্রান্সে মুসলিম অধিকার, আলহামরা, পাগল খলিফা প্রভৃতি।
‘আবদুল্লাহ’ উপন্যাসটি লেখকের জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ বা প্রকাশ হয়নি। তিনি এ উপন্যাসটি জীবনের শেষান্তে শুরু করলেও শেষ করে যেতে পারেননি। তার খসড়ার ভিত্তিতে উপন্যাসটি সম্পূর্ণ করা হয় এবং তা ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (আজকের বাংলা একাডেমি) আবদুল কাদিরের সম্পাদনায় প্রকাশ করে ‘কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলি’। বাংলাদেশের লেখক, সরকারি কর্মকর্তা ও উপদেষ্টা কাজী আনোয়ারুল হক (১৯০৯-২০০১) ছিলেন কাজী ইমদাদুল হকের পুত্র।
কাজী ইমদাদুল হক ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২০শে মার্চ কলকাতায় মারা যান।