এবি ছিদ্দিক
প্রেমের মধ্যে যে রস নিহিত, তাকে ‘আদিরস’ বলা হয়। সেই রস ভালে জুটেছে বলে মুরাদ দাড়িগোঁফ মুণ্ডন করে বেশ পরিচ্ছন্ন হয়ে চলে। মুরাদের দাড়িগোঁফের এই মুণ্ডনই হচ্ছে ‘খেউরি’। মুরাদ তার প্রিয়তমা সাফার সঙ্গে দেখা করতে যাবে। প্রিয়তমার সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার জন্যে সে পাজামা-পাঞ্জাবি পরেছে। তার পাজামাটি খুলে না-যায় মতো কোমর বরাবর একটি ফিতে রয়েছে। কোমরে পাজামা বাঁধার এই ফিতেটিই হচ্ছে ‘ইজারবন্ধ’। সে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখে, ডান পায়ের জুতোর তলা একদিকে খানিকটা আলগা হয়ে আছে। সে সোজা চলে যায় মুচির কাছে। মুচি লোহার সরু-সুচালো কী একটা দিয়ে মুরাদের জুতো সেলাই করে দেন। মুচি যে লোহার সরু-সুচালো জিনিসটি দিয়ে জুতো সেলাই করেছেন, সেটিই হচ্ছে ‘আরা’।
সেলাই করা জুতো পায়ে দিয়ে মুরাদ সোজা ফরেস্ট্রির সিঁড়িতে গিয়ে সাফার পাশে বসে। একটু পরেই মুড়িওয়ালা এলে দুজনে মিলে পাঁচ টাকার মুড়ি কেনে। সাফা মুড়ি গালে দিতেই দেখে যে, একটুও মচমচে নয়, বাতাস লেগে একেবারেই মিইয়ে গিয়েছে। এভাবে মুড়ির মিইয়ে যাওয়াকে ‘উদা’ বলে। উদা মুড়ি মুখে পুরে মেজাজ সপ্তমীতে চড়ায় মুরাদ মুড়ি বিক্রেতাকে কিছু কটু কথা শুনিয়ে দেয়। মুরাদের মতো যে কটু কথা বলে, সেই (সে-ই) হচ্ছে ‘পরুষভাষী’। তার কটু কথা শুনে মুড়িওয়ালা কেটে পড়তেই আরেক ব্যক্তির আগমন ঘটে। নতুন ব্যক্তি রাশির সাহায্য ছাড়াই অন্যের ভাগ্য গণনা করতে পারে। এরূপ ভাগ্যগণনাকারী ব্যক্তিকে ‘দৈবজ্ঞ’ বলা হয়। দৈবজ্ঞ অতিশীঘ্রই মুরাদ আর সাফার বিচ্ছেদের ভবিষ্যদ্বাণী শোনান।
দৈবজ্ঞ চলে যেতে-না-যেতেই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে রূপ নেয়— সাফা আজ ছাড়াছাড়ির সংবাদ নিয়ে শেষবারের মতো দেখা করতে এসেছে। সাফার কথা শুনে মুরাদের তখুনি প্রাণ ত্যাগ করতে ইচ্ছে হয়। কারও এরকম প্রাণত্যাগের ইচ্ছেই হচ্ছে ‘মুমূর্ষা’। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে সে সোজা বাসায় চলে যায়। সে এখন বুঝতে পারে— এতদিনে কেবল অবিদ্যার পেছনে সময় ব্যয় করেছে বলে এসব সাংসারিক ভ্রমে আচ্ছন্ন হয়েছিল৷ ‘অবিদ্যা’ হচ্ছে তা, যা মানুষকে আধ্যাত্মিক ও ঐশ্বরিক জ্ঞান দান করে না। মুরাদ এখন বিদ্যা অর্জনের নেশায় মত্ত।
সেদিনের মুমূর্ষার কথা মনে পড়লে অট্টহাসিতে তার চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে আসে। চোখে অশ্রু উৎপন্ন করে এমন বিকট হাসিকে ব্যাকরণে ‘অপহসিত’ সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা হয়। যে মুরাদ একসময় রমণীর প্রেমকে নিজের ধর্ম জ্ঞান করত, সেই (সে-ই) এখন ঘোর প্রেমবিরোধী। এরূপ নিজের ধর্মের বিরোধী হয়ে গিয়েছে বলে সবাই এখন মুরাদকে ‘কালাপাহাড়’ বলে সম্বোধন করে।
উৎস: এবি ছিদ্দিক, প্রেমিক থেকে কালাপাহাড়: এগারোটি শব্দের অর্থ, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)।
কিছু সাধারণ ভুল, যা অনেকে করেন খাসা খাসি, গিধড়, বেহেড লাপাত্তা গরহাজির
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৯ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৮ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৭ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৬ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৫ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/৪ Dr Mohammed Amin
এককথায় প্রকাশ শুবাচ অ-অ/২ Dr Mohammed Amin