কীভাবে হলো দেশের নাম (এশিয়া)
ড. মোহাম্মদ আমীন
ফিলিপিনস (Philippines)
ফিলিপাইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত ৭,১০৭টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র। দ্বীপসমূহের মধ্যে ১১টি বড় দ্বীপ মোট আয়তনের ৯৪%। আয়তন বিবেচনায় ফিলিপাইন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ।
স্প্যানিশ ফেলিপিনাস শব্দ হতে ফিলিপাইন বা ফিলিপিনস নামের উদ্ভব। যার অর্থ অস্ট্রিয়ার প্রিন্স ফিলিপ এর ভূমি (Lands of Prince Philip of Austria)। অভিযাত্রী রুই লোপেজ ডি ভিলালোবোস (Ruy Lopez de Villalobos) ভবিষ্য-রাজা স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপ এর সম্মানার্থে ১৫৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তার উপর অর্পিত লেতে (Leyte) ও সমর দ্বীপপুঞ্জের নাম রাখেন ফেলিপিনাস। পরে পুরো এলাকাটির নাম রাখা হয় ফেলিপিনাস বা অস্ট্রিয়ার রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের জমি। ফিলিপ শব্দটি গ্রিক ফিলিপ্পস (Phílippos) হতে আগত। এর অর্থ ঘোড়া-প্রমিক (lover of horses)।
ফিলিপাইনের মোট আয়তন ৩,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার বা ১,১৫,৮৩১ বর্গমাইল। জলীয় ভাগ ০.৬১%। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, ফিলিপাইনের জনসংখ্যা ১০,২২,৩৬,৭০০ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যা ৩৪০.৭৯। আয়তনের দিক হতে ফিলিপাইন পৃথিবীর ৭৩-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার দিক হতে ১২-তম। আবার জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ৪৩-তম জনবহুল দেশ। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, ফিলিপাইনের জিডিপি (পিপিপি) ৭৫১.৭৭০ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৭,৪১২ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৩৩০.২৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার, সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৩,২৫৬ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম পেসো। এর সরকারি নাম ফিলিপাইন প্রজাতন্ত্র এবং রাজধানীর নাম ম্যানিলা।
ফিলিপাইনের জনসংখ্যার ৩৩.৮ ভাগ ভিসাইয়ান, ২৭.৭% তাগালোগ, ৯.৮% বিকোলানো, ৫.১% মরো, ৩.১% কাপামপানগান, ১.৭% ইগোরোট, ১.৪% পাঙ্গাসিনেস, ১.২% চায়নিজ, ১.১ জাম্বোয়ানগিনো, ৮.১% অন্যান্য এবং ০.২% বিদেশি। ফিলিপাইন হচ্ছে এশিয়ার একমাত্র খ্রিষ্টান-প্রধান দেশ।
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল শহর বলা হয়। মাত্র ৩৮.৫৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ শহরে ১৬,৬০,৭১৪ জন লোক বাস করে। প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৩,০৭৯ বা প্রতিবর্গমাইলে ৫৫,৪৪৬ জন। ফিলিপাইনের ১১ মিলিয়ন লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করে। যা ফিলিপাইনের মোট জনসংখ্যার ১১%। চায়নার পর এশিয়ান-আমেরিকান গ্রুপের মধ্যে ফিপিেিনাদের সংখ্যা দ্বিতীয়। মানব পাচার ফিলিপাইনের একটি বড় সমস্যা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ফিলিপাইনের বহু সংখ্যক নাগরিক দেহব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। ফিলিপাইনের ৩,৭৫,০০০ নারী ও বালিকা যৌনব্যবসায় নিয়োজিত। অকিাংশের বয়স ১৫-২০। আবার ১১ বছর বয়সেরও অনেকে রয়েছে। ফিলিপাইন হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম নার্স সরবরাহকারী দেশ। বিশ্বের ২৫% নার্স ফিলিপাইন সরবরাহ করে। অনেকে নার্স সরবরাহের আড়ালে যৌনকর্মী সরবরাহ করে থাকে।
ফিলিপাইন ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন স্পেন হতে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ আত্মশাসনের অধিকার লাভ করে। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুলাই ব্রিটেন হতে স্বাধীন হয় এবং ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সংবিধান গ্রহণ করে। ফিলিপাইন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম দেশ, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে।
এটি পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যার জাতীয় পতাকাকে যুদ্ধের সময় উপরের অংশকে নিচে এবং নিচের অংশকে উপরে তুলে (upside down) উত্তোলন করা হয়। ফিলিপাইনের (Philippine) জাতীয় প্রতীক বানর খেকো ঈগল। এটি সব ঈগলের চেয়ে বৃহত্তম এবং ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এটাকে জাতীয় পাখি ঘোষণা করা হয়। এটি ৩.৩ ফুট বা এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। এর পাখার দৈর্ঘ্য ৭ ফুট। তবে ঈগলটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। ১৮০-৫০০টির মতো আছে। এটি হত্যা করলে অর্থদ-সহ ১২ বছরের কারাদ-ের বিধান রয়েছে। ফিলিপাইনের জেলিফিস হ্রদে ১৩ মিলিয়নের অধিক জেলিফিস রয়েছে।
ফিলিপিনো ভাষা ও ইংরেজি ভাষা ফিলিপাইনের সরকারি ভাষা। ফিলিপিনো ভাষা ফিলিপাইনের প্রায় ৬০% লোকের মাতৃভাষা। প্রায় ৩৫% লোক দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ফিলিপিনো ভাষায় কথা বলেন। এ দেশের প্রায় ৫০% লোক দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ইংরেজি ব্যবহার করেন। এছাড়াও ফিলিপাইনে প্রায় ১০০টি স্থানীয় ভাষা প্রচলিত। তন্মধ্যে সেবুয়ানো (প্রায় ২৫%), ইলোকানো ( ১১%), হিলিগেনন (প্রায় ১০%), এবং বিকোলানো (প্রায় ৭%) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
ফিলিপাইনের লোকেরা ১৩ নাম্বারকে আনলাকি বলে এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে। খাবার টেবিলে ১৩ জন নিয়ে বসে না। ঘরের প্রবেশ পথে ৩ দিয়ে বিভাজ্য সংখ্যক পা ফেলে না। কুসংস্কারাচ্ছন্ন ফিলিপিনিরা পবিত্র বৃহস্পতিবার অথবা পবিত্র সপ্তাহে শুভ শুক্রবার এবং ইস্টার দিবসের পূর্ব সপ্তায় ভ্রমণ করে না, স্নান করে না। ফিলিপিনো রীতি অনুযায়ী উপহার প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে তা খুলে দেখা অশোভনীয়।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম জুতো ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে ফিলিপাইনের ম্যারিকিনা শহরে বানান হয়েছিল। এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৭.৪ ফুট, প্রস্থ ৭.৯ ফুট এবং উচ্চতা ৬.৫ ফুট। পৃথিবীর দশটি বৃহত্তম শপিং মলের মধ্যে ৩টি ফিলিপাইনে। ফিলিপাইন নারিকেল এবং পেঁপে ও ম্যাঙ্গোস্টিন-জাতীয় মৌসুমী ফল রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে পালওয়ান সাগরে ফিলিপিনো ডুবুরিরা পৃথিবীর বৃহত্তম মুক্তা আবিষ্কার করে। যার নাম পার্ল অব লাও জু (Pearl of Lao Tzu) বা আল্লার মুক্তা। এর ওজন ১৪ পাউন্ড বা ৬.৩৫ কেজি, ৯.৫ ইঞ্চি লম্বা ও ডায়ামিটার ৫.৫ ইঞ্চি। এর মূল্য ৪০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। বলা হয়, এটি ৬০০ বছরের পুরানো।
ফিলিপাইনের নিকটবর্তী প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত মিন্দানাও ট্রেঞ্চ পৃথিবীর মহাসাগরসমূহের মধ্যে দ্বিতীয় গভীরতম স্থান। এর গভীরতা ৬.৫ মাইল। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে জার্মান জাহাজ এমডেন ( Emden) এটি আবিষ্কার করে। ফিলিপাইনকে টেক্সট রাজধানী বলা হয়। প্রতিদিন ৩৫ মিলিয়ন ফিলিপিনো প্রায় ৪৫০ মিলিয়ন এসএমএস আদান-প্রদান করে থাকেন। এ পরিমাণ এসএমএস মেসেজ এর সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্র ও পুরো ইউরোপের মধ্যে প্রতিদিন যে টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করা হয় তার চেয়ে অধিক।
নর্থ কোরিয়া ( North Korea) : ইতিহাস ও নামকরণ
পাকিস্তান (Pakistan) : ইতিহাস ও নামকরণ
প্যালেস্টাইন (Palestine) : ইতিহাস ও নামকরণ
ফিলিপিনস (Philippines) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।