ইউসুফ খান
একটা অনলাইন অভিধানে লিখেছে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’ এই বাগধারাটার মানে – যে কৃশ বা রোগা তারই আস্ফালন বেশি। কথাটা মনে হয় ঠিক নয়।
দড় মানে দঢ় দৃঢ় ডাঁটো টনকো tough rigid কড়া শক্ত। পুঁথির বানানে দঢ় দড় দুটোই ছিলো। পেয়ারা পাকার আগে সেটা শক্ত এবং কাঁচা মানে দড়+কচ্চা > দড়কচা > দরকাঁচা থাকে। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি অনেক বেশি সলিড এবং টনকো হয়। বাঁশ চেঁছে কঞ্চির মতো সরু করে তৈরি করা ছিপ বড়ো

মাছের টানে মট করে ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু কঞ্চির ছিপ অনেক টনকো, বেঁকে ধনুক হয়ে যাবে কিন্তু চট করে ভাঙবে না। তাই বলা হয় বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়। এটা লিটেরাল মানে, কিন্তু বাগধারাটা আছে ফিগারেটিভ মানেতে।
মানুষের ক্ষেত্রে দড় মানে কড়া শক্ত পোক্ত দক্ষ সেয়ানা বিচক্ষণ। ‘কাজে নেই, কথায় দড়’, ‘অকাজে বউড়ি দড়, লাউ কুটতে খরতর’।
মানুষের রেফারেন্সে বাঁশ হচ্ছে মূল মানুষটা আর কঞ্চি হচ্ছে তার শাখা। শাখা মানে মান্যে ছোটো, তা সে যে কোনও সাবঅর্ডিনেট জুনিয়র হতে পারে। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনি পোষ্য পারিষদ চামচা কর্মচারী যে কেউ হতে পারে। শাখা মানুষ যখন মূল মানুষটার চেয়ে কড়া বিচক্ষণ অনমনীয় এবং প্রোঅ্যাক্টিভ প্রতিক্রিয়াশীল হয় তখন বলা হয় – বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়।
‘নিচুমাঠের পাঁচকাঠাটা আমার নামে লিখিয়ে নেবো বলে ধলাকত্তাকে প্রায় হাত করে ফেলেছি, তখন ওনার ছোটো বউমা এসে বাগড়া দিয়ে দিলো। হুঁঃ যত্তসব, বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়, মালিকের চেয়ে শালিক বড়ো’। মূল বৃক্ষ কত্তামশাই সাদাসিধে মানুষ, শাখা বউমা বিচক্ষণ অনমনীয় এটাই আসল কথা। কত্তামশাই রোগাসোগা মানুষ, কিন্তু ওনার ছোটো বউমা মোটাসোটা এটা হতেই পারে। বউমা শাখা মানুষ বলে মানুষটাকে সরু হতে হবে এমন কথা নেই।
‘আমার অফিসে ঢুকতে রোজ দশ মিনিট দেরি হয়। কই বড়ো সাহেব তো কিছু বলেন না, ওনার পিএ-র গায়ে ফোস্কা পড়ে কেন? বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় দেখছি।’ পিএ কৃশ হতে হবে বা তাকে আস্ফালন করতে হবে এমন দাবি কেউ করছে না। পৃথুলা পিএ চুপচাপ থেকেও পেছনে কঞ্চি কেন বাঁশও দিতে পারে।
(ত্রুটি মার্জনীয়, শুদ্ধি প্রার্থনীয়)
উৎস: বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
কলকাতা. ২০২০ অগাস্ট ০৩