বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সুরকার: গগন হরকরা

ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা লোকসঙ্গীতশিল্পী, সঙ্গীত রচয়িতা ও বিশিষ্ট বাউল গীতিকার গগন হরকরা বা গগনচন্দ্র দাস আনুমানিক ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে শিলাইদহের কসবা নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। জায়গাটি বর্তমান বাংলাদেশের শিলাইদহের নিকটস্থ আড়পাড়া গ্রাম। তাঁর পিতা-মাতা সম্পর্কে তেমন কোনো তথ্য জানা যায়নি। তবে তার একটি সন্তানের নাম কিরণ চন্দ্র ছিল।তিনি শিলাইদহের পোস্ট-অফিসে ডাক-হরকরার কাজ করতেন। পেশার কারণে তিনি লোকের কাছে ‘গগন হরকরা’ নামে পরিচিতি লাভ করেন।গগন হরকরা  ছিলেন বাউল ধর্মমতের অনুসারী। বাউলের মতো চলার পথে আপন মনে গান করতেন।

গগন হরকার গীতিকার ও সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন। তাঁর রচিত ‘‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে।/হারায়ে সেই মানুষে, তার উদ্দেশে দেশ বিদেশে বেড়াই ঘুরে’’ কুঠিবাড়িতে গগনের কণ্ঠে গানটি শুনে রবীন্দ্রনাথ মুগ্ধ হন। গগন হরকরার রচিত এই গানের সুর হতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  আমাদের বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা গানের  সুর সংগ্রহ করেছিলেন । রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে গগন হরকরার বিশেষ অন্তরঙ্গতা ছিল।  দুজনে  সংগীতচর্চা করতেন। রবীন্দ্রনাথের “যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক” এবং “আমার সোনার বাংলা” গান দুটি, গগন হরকরার যথাক্রমে “ও মন অসাড় মায়ায় ভুলে রবে”  এবং “আমি কোথায় পাব তারে” গান দুটির সুর নিয়ে রচিত হয়।

গগন হরকরা কার কাছ থেকে গান শিখেছিলেন তা জানা যায়নি। তবে তিনি লালনের গানের ভক্ত ছিলেন। লালন ও গগন পরস্পরের প্রতি ছিল গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও গগনের গানের ভক্ত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ গগনের কাছে গগন ও লালনের গান শুনতেন। রবীন্দ্রনাথের ডাকঘর ও অন্যান্য নাটকে অন্তরচারী ও মুক্তিকামী বাউলের যে পরিচয় পাওয়া যায়, তাতে গগন চরিত্রের ছাপ আছে বলে পন্ডিতগণ মনে করেন। রবীন্দ্রনাথের  ডাকঘর  নাটকের  প্রধান চরিত্র গগেন্দ্রনাথ ঠাকুর  নাম প্রমাণ করে যে, রবীন্দ্রনাথ গগন হরকার  জীবন থেকে প্রভাবিত হয়ে নাটকটি লিখেছিলেন 

শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক

Language
error: Content is protected !!