বাংলাদেশের দ্বীপ ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা/৪

সন্দ্বীপ
সন্দ্বীপ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে বঙ্গোপসাগরে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার একটি দ্বীপ উপজেলা। এটি বাংলাদেশের অত্যন্ত প্রাচীন একটি দ্বীপ। চট্টগ্রাম উপকূল ও সন্দ্বীপের মাঝখানে সন্দ্বীপ চ্যানেল অবস্থিত। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে নদীপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকু- উপকূলের দূরত্ব প্রায় দশ মাইল। নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড সন্দ্বীপ থেকে প্রায় ১২ মাইল পশ্চিমে। সন্দ্বীপের প্রায় বিশ মাইল পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপের অবস্থান। পঞ্চদশ শতকে সন্দ্বীপের আয়তন প্রায় ৬৩০ বর্গমাইল ছিল। এখন তা ৮০ বর্গমাইলের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। সন্দ্বীপের দৈর্ঘ্য ২৫ মাইল বা৪০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ৩-৯ মাইল বা ৫-১৫ কিলোমিটার। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত সন্দ্বীপ, নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

ছেঁড়া দ্বীপ
ছেঁড়া দ্বীপ হলো বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণের সর্বশেষ বিন্দু। দক্ষিণ দিকে এর পরে বাংলাদেশের আর কোনো ভূখ- নেই। সেন্ট মার্টিন থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনবিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে, যেগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘ছেঁড়াদিয়া’ বা ‘সিরাদিয়া’ বলা হয়ে থাকে। ছেঁড়া অর্থ বিচ্ছিন্ন বা আলাদা এবং ‘দিয়া’ অর্থ দ্বীপ। এটি মূল দ্বীপ-ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন বলেই এ দ্বীপপুঞ্জের নাম ছেঁড়া দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন্স থেকে ছেঁড়া দ্বীপ প্রায় আট কিলোমিটার দক্ষিণে। এ দ্বীপে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক পাথর। দ্বীপের প্রায় অর্ধেকই জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায়।

দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ কা পূর্বমংখ।
পূর্বাশা বা নিউ মুর আইল্যান্ড বঙ্গোপসাগরের অবস্থিত ভারতের ছোটো জনবসতিহীন সাগরমুখী দ্বীপ। এটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র বদ্বীপ অঞ্চলের উপকূলে অবস্থিত এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপকূলবর্তী দ্বীপ। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ের পর হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর মোহনার অদূরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ জেগে ওঠে। নদীর মোহনা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে একটি আমেরিকান স্যাটেলাইটে আড়াই হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ দ্বীপটির অস্তিত্ব ধরা পড়ে। পরে রিমোট সেন্সিং সার্ভে চালিয়ে দেখা যায়, দ্বীপটির আয়তন ক্রমেই বাড়ছে এবং একপর্যায়ে এর আয়তন ১০ হাজার বর্গমিটারে দাঁড়ায়। দ্বীপটির মালিকানা বাংলাদেশ দাবি করলেও ভারত ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে তাদের পতাকা ওড়ায়। ভারতের যুক্তি, ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের আন্তর্জাতিক জরিপ অনুযায়ী দক্ষিণ তালপট্টির পূর্ব অংশটির অবস্থান ভারতের দিকে, যা ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের ব্রিটিশ অ্যাডমিরালটি চার্টেও স্বীকৃত। ২০১০ খিষ্টাব্দের মার্চ মাসের, বিবিসি খবর অনুযায়ী দ্বীপটি বর্তমানে ২ মিটার সমুদ্রতলে নিমজ্জিত। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই জুলাই আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত এর রায় অনুযায়ী দ্বীপটি ভারতের সম্রু সীমায় পড়েছে।

হীরণ পয়েন্ট
হিরণ পয়েন্ট, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত পৃথিবীর সর্ববৃহৎ লোনাবন সুন্দরবনের দক্ষিণাংশের একটি সংরক্ষিত অভয়ারণ্য। এর আরেক নাম নীলকমল। হিরণ পয়েন্ট, ইউনেস্কো ঘোষিত অন্যতম একটি বিশ্ব ঐতিহ্য।এ অঞ্চলে হরিণের অবাধ বিচরণের জন্যই এ স্থানকে হিরণ পয়েন্ট বলা গয়। হিরণ পয়েন্ট থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে কেওড়াসুঠিতে রয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। এখান থেকে থেকে আশপাশের প্রকৃতি দেখার ব্যবস্থা রয়েছে। ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ২৪ শে অক্টোর বাংলাদেশের হিরণ পয়েন্ট থেকে ১৯শ শতাব্দের সর্বশেষ পুর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখা যায়। সূর্যগ্রহণটি ২মিনিট ১০সেকেন্ড স্থায়ী হয়েছিল।

সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড
সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড(ঝধিঃপয ড়ভ ঘড় এৎড়ঁহফ সধৎরহব ঢ়ৎড়ঃবপঃবফ ধৎবধ) বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত একটি মেরিন সংরক্ষিত এলাকা। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে অক্টোবর এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৩৮০০ হেক্টর এলাকা নিয়ে এই সংরক্ষিত এলাকাটি গঠিত। সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড হচ্ছে ১৪ কিলোমিটারব্যাপী বঙ্গোপসাগরের গভীর সমুদ্রের গভীর খাদ। এখানকার ডুবো গিরিখাত বঙ্গ পাখার অংশ। এটি গঙ্গা খাদ নামে পরিচিত। এখানে কয়েক প্রজাতির ডলফিন, হাঙ্গরসহ বিচিত্র জাতের বড়ো বড়ো মাছ পাওয়া যায়।এটি বিশ্বের ১১টি বড়ো উপত্যকার একটি। কথিত হয়, এখানেই ১৮৬৩ খ্রিষ্টাব্দে গ্যাডফ্লাই নামের ২১২ টন ওজন বিশিষ্ট একটি গানবোট ভারত থেকে ইংল্যান্ডে বিপুল পরিমাণ ধনরত্ন নিয়ে যাওয়ার সময় ঝড়ের কবলে পড়ে ডু্বে যায়।

Language
error: Content is protected !!