ড. মোহাম্মদ আমীন
নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে সেরা কলেজ নির্বাচন-সভা চলছে। ‘বাংলাদেশ এবিসিডি’ কলেজের অধ্যক্ষ কামাল হোসেন গর্বিত ভঙ্গিমায় বললেন, আমার কলেজ গত পাঁচ বছর যাবৎ বাংলাদেশের সেরা কলেজ নির্বাচিত হয়ে আসছে। এবারও ইনশাআল্লাহ সেরা কলেজ হবে।
কেন এবং কীভাবে? মন্ত্রী মহোদয় জানতে চাইলেন।

কামাল সাহেব বললেন, গত বছর আমার কলেজ থেকে দেড় হাজার ছাত্রছাত্রী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। বাংলাদেশের আর কোনো কলেজ থেকে এককভাবে এত বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী জিপিএ ফাইভ পায়নি।
ভর্তি করিয়েছিলেন কয় জন? মন্ত্রী মহোদয়ের পরবর্তী প্রশ্ন।
কামাল হোসেন উপস্থিত অধ্যক্ষগণের প্রতি কিছুটা উপহাস ঢেলে গর্ব-গলায় বললেন, দুই হাজার। সবার এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ ছিল। সবাই ধনী ও শিক্ষিত অভিভাবকের ছেলেমেয়ে- বড়ো বড়ো চাকুরে, আমলা, পেশাজীবী। আমার কলেজে জিপিএ ফাইভের নিচে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হয় না। আমাদের রেকর্ড আছে। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি।
মন্ত্রী মহোদয় বললেন, আপনার কলেজ জিপিএ ফাইভ নিল ২০০০, দেশকে ফেরত দিল দেড় হাজার। বাকি পাঁচশ কোথায়? কীভাবে আপনার কলেজ শ্রেষ্ঠ হয়; কীভাবে করেন মূল্যায়ন? ৫০০ ছাত্রছাত্রীর শিক্ষামান আর ভবিষ্য-প্রত্যাশা শেষ করে দিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি কতটুকু যৌক্তিক? অন্তত যা নিয়েছেন তা ফেরত দেবেন তো, নাকি?
সবার শেষে সভার এক কোনায় চুপচাপ বসে থাকা চরাঞ্চল কলেজের অধ্যক্ষ সফিক সাহেবকে মন্ত্রী বললেন, আপনার কলেজের ফলাফলের কী খবর?
সফিক সাহেব বিনয়ের সঙ্গে বললেন, গত বছর আমার কলেজ থেকে বারো জন ছাত্রছাত্রী জিপিএ ফাইভ পেয়েছে।
কয় জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছিল?
মোট চারশ জন। এসএসসিতে তাদের কারও জিপিএ ফাইভ ছিল না। আমাদের কলেজে জিপিএ ফাইভ পাওয়া কোনো ছাত্রছাত্রী ভর্তি হওয়ার জন্য আসে না। ধনী লোকের সন্তানসন্ততিরাও ভর্তি হয় না।সব জিপিএ ফাইভ ভালো কলেজে ভর্তি হবে। গরিব কলেজ, বৃষ্টি পড়ে ছাদ বেয়ে। বর্ষায় ডুবে যায় মাঠ। গ্রীষ্মে রোদ আসে আগুনের হলকা হয়ে। অবকাঠামোগত সুবিধা নেই বললেই চলে। যারা ভর্তি হয় তারা সবাই গরিব; দিনমজুর এবং কৃষক পরিবারের।
সভার সবাইকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বললেন, সফিক সাহেব নিয়েছেন শূন্য জিপিএ ফাইভ, ফেরত দিলেন বারো। কামাল সাহেব নিলেন দুই হাজার, ফেরত দিলেন দেড় হাজার। কামাল সাহেব ৫০০ দিলেন গায়েব করে। আপনারাই বলুন কোন কলেজ শ্রেষ্ঠ?
কামাল সাহেব ছাড়া সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন, চরাঞ্চল কলেজ।
মন্ত্রী মহোদয় চরাঞ্চল কলেজকে সর্ববিবেচনায় শ্রেষ্ঠ কলেজ ঘোষণা করে বললেন, আমি কামাল সাহেব-সহ দৃশ্যমান সংখ্যা হিসেবে অধিক সংখ্যক জিপিএ ফাইভ প্রাপ্ত প্রথম দশ কলেজের দশ অধ্যক্ষকে সফিক সাহেবের চরাঞ্চল কলেজে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুপারিশ করছি।
উপসংহার: সংখ্যা দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব পরিমাপ শ্রেষ্ঠত্বের বরখেলাপ। শ্রেষ্ঠত্ব কর্মকীর্তিতে ভাস্বর হয়। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আসলে শিক্ষিত বা ধনী অভিভাবকের অধিক নম্বর পাওয়া সন্তানসন্ততির কৃতিত্বকে কাজে লাগিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব ধারণ করে। চরাঞ্চল কলেজের মতো নিজের গুণে শ্রেষ্ঠ হওয়ার সামর্থ্য তাদের দেখা যায় না।
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
তিনে দুয়ে দশ: শেষ পর্ব ও সমগ্র শুবাচ লিংক