ভূমিকা
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বা বিসিএস হলো বাংলাদেশ সরকারের সিভিল সার্ভিস। এটি প্রাক্তন সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস অব পাকিস্তান থেকে উদ্ভূত। যা ঔপনিবেশিক শাসনামলের ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী নিয়ন্ত্রিত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের উত্তরসূরি ছিল। স্বাধীনতার পর থেকে এটি সিভিল সার্ভিস অধ্যাদেশের দ্বারা বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস হিসাবে পরিচিতি হয়। এর মূলনীতি ও পরিচালনা পরিষদ বাংলাদেশ সরকারী কর্ম কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত হয়। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হলে বাংলাদেশ এক কেন্দ্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ফলে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের চাকরির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যায়। সংবিধানে সিভিল সার্ভিস শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি, তবে সকল শ্রেণির সিভিল সার্ভেন্টকে প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চাকরি সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক অধ্যায়ে (১৩৬ নং অনুচ্ছেদে) এ সংক্রান্ত বিধি সন্নিবেশিত করা হয়।
প্রশাসনিক ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটি
পাকিস্তান আমল থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সিভিল সার্ভিসকে পুনর্গঠিত করার লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম এ চৌধুরীকে পধান করে প্রশাসনিক ও চাকরি পুনর্গঠন কমিটি (এএসআরসি, ১৯৭৩) গঠন করা হয়। কমিটি (ক) সাবেক অল পাকিস্তান সার্ভিস, অন্যান্য কেন্দ্রীয় সুপিরিয়ার সার্ভিস এবং সাবেক প্রাদেশিক সার্ভিসের মধ্যকার পার্থক্য বিলোপ করে উচ্চতর ও নিম্নতর শ্রেণিগুলোর মধ্যকার পার্থক্যও বিলোপ এবং প্রত্যেক পেশার গ্রুপে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন গ্রেডিং প্রথা চালু (খ) বিভিন্ন গ্রুপের জন্য পদ সংরক্ষণের বর্তমান ব্যবস্থা বিলোপ এবং (গ) সকল সিভিল সার্ভেন্টকে একটি একক শ্রেণিহীন গ্রেডিং কাঠামোয় সংগঠিত করার সুপারিশ করে। তবে কমিটির সুপারিশ গৃহীত হয়নি।
শিল্প ব্যবস্থা সার্ভিস (আইএমএস)
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতসহ রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পের জন্য শিল্প ব্যবস্থা সার্ভিস (আইএমএস) নামে একটি ক্যাডার গঠন করা হয়। এই ক্যাডারের রিক্রুটমেন্ট করা হয়েছিল ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে। তবে বিধিবিধান প্রণীত হয়েছিল ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। সরকারি কর্ম কমিশন সরকারকে অভিমত দেয় যে আইএমএস-কে সরকারের নিয়োজিত ক্যাডার বলে গণ্য করা যায় না। ফলে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই নভেম্বর আইএমএস ক্যাডারকে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের সঙ্গে একিভূত করা হয়।
আবদুর রশিদ কমিশন
১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে বেতন ও চাকরি কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে আবদুর রশিদকে চেয়ারম্যান করে রশিদ কমিশন নামে পরিচিতি কমিশনটি গঠন করা হয়। কমিশন ১৪ স্তরের চাকরি কাঠামো সুপারিশ করে। যার মুল কাঠামো ছিল : (ক) প্রশাসনিক, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা ও বিশেষজ্ঞ গ্রুপ (‘এ’ লেভেল হিসেবে বর্ণিত); (খ) নির্বাহী ও মধ্যস্তরের ব্যবস্থাপনা গ্রুপ (‘বি’ লেভেল হিসেবে বর্ণিত); (গ) আধিকারিক, পরিদর্শনমূলক, কারিগরী ও সহায়ক গ্রুপ; এবং (ঘ) মেসেনজারিয়াল ও কাস্টোডিয়ান গ্রুপ।
সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি)
রশিদ কমিশন সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) নামে একটি পৃথক ক্যাডার সৃষ্টি করার প্রস্তাব দেয়- এই ক্যাডারে রিক্রুটমেন্ট হবে উপ-সচিব পর্যায়ে এবং তা সকল ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সরকারি কর্মকমিশন পরিচালিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে এই রিক্রুটমেন্ট হবে।
কোটা
বিভিন্ন শ্রেণির প্রার্থীর জন্য এতে শতকরা ৫০ ভাগ পদ সংরক্ষিত রাখা আছে। এদের মধ্যে আছে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান সন্ততি (৩০ শতাংশ), মহিলা (১০ শতাংশ), উপজাতীয় (৫ শতাংশ) এবং ১০ শতাংশ জেলা কোটা হিসেবে সংরক্ষিত। ১৯৯৭ সালে ১৭ মার্চ সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) এবং লোক প্রশাসন সংস্কার কমিশন (পিএআরসি, ২০০০) উভয়েই কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিকীকরণের সুপারিশ করেছিলেন, কিন্তু কোনো কাজ হয় নি।
বিসিএস-বর্তমান অবস্থা
বিসিএস এর ক্যাডার সংখ্যা হল ২৬টি। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা লাভের পর রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের একটি আইন দ্বারা নবজাতক দেশের সরকার ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস গঠিত হয়।
আরও দেখুন:
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ক্যাডার গঠন
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস-এর ইতিবৃত্ত
ড. মোহাম্মদ আমীন, বিসিএস(প্রশাসন), দশম ব্যাচ।