বাংলার সব বর্ণ নিয়ে লেখা একটি ছড়া বাক্য

ড. মোহাম্মদ আমীন

সংযোগ: https://draminbd.com/বাংলার-সব-বর্ণ-নিয়ে-লেখা-এ/

বাংলার সবগুলো বর্ণ নিয়ে গঠিত ছড়া এবং বাক্য

ড. মোহাম্মদ আমীন

শুবাচি খন্দকার শাহিদুল হক বাংলা বর্ণমালার সবকটি বর্ণ একবার ব্যবহার করে খুব সহজ-সরল শব্দ-বাক্যে শুবাচের জন্য একটি ছড়া লিখেছেন। ছড়াটি শুবাচে প্রকাশ করা হয়েছিল। এরকম বাক্য নিয়ে শুবাচ লিটল ম্যাগের প্রথম সংখ্যায় প্রবন্ধ রয়েছে। দেখুন শুবাচের জন্য লেখা শাহিদুল হকের সেই অনবদ্য ছড়াটি—

ঘূর্ণিঝড়ে ঊষা বক্ষে ঈগল অনুঃ ছায়া ঐ
প্রৌঢ় ঋভু মঞ্চে উঠে ঔদার্য খোঁজে ওই।

ডিঙা ঢং তফাৎ আশা
এ ধারটা থেকে হাসা। 

শুবাচি বিধুভূষণ শুবাচের মাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাভাষার ৫০টি বর্ণের প্রত্যেকটি বর্ণকে একবার মাত্র ব্যবহার করে  আর  একটি ছড়া রচিত হয়েছে। সেটির লেখক বলন কাইজি, যা প্রথম আলো ব্লগে  প্রকাশিত হয়। তবে এটি শাহিদুল হকের ছড়ার মতো এত সহজ ও সাবলীল এবং ছন্দময় নয়।
“দীর্ঘপথ ঢাকা ঔর্ণে
শেষে উঠে যাচ্ঞা ফড়িঙে
ঊর্ধ্বরেতাঃ ওঁৎ ঋভু মাঝখানে
এই অডং জটলা ছঈ সহায় আগঢ় ঐ।”

ইংরেজিতে এমন বাক্যকে বলা হয় প্যানগ্রাম (Pangram)। ইংরেজি ভাষায় বহুল ব্যবহৃত প্যানগ্রাম— The quick brown fox jumps over the lazy dog. বাক্যটি বিশ্বব্যাপী খুবই জনপ্রিয়  এবং পরিচিত এ বাক্যটি টাইপিং শেখার জন্য হরদম ব্যবহার করা হতো। এখন ব্যবহার করা হয় কম্পিটার টাইপিং শেখার কাজে। এটি এমন একটি ইংরেজি বাক্য যেখানে ইংরেজি বর্ণমালার ২৬টি বর্ণই রয়েছে। তবে, অনেকগুলো বর্ণ এবং যুক্তাক্ষর থাকায় বাংলায় এমন বাক্য লেখা তত সহজ নয়।

যে বাক্যে কোনো বর্ণমালার সবকটি বর্ণ অন্তত একবার হলেও থাকে, তাকে প্যানাগ্রাম ( pangram বা holoalphabetic বাক্য) বলে। ইংরেজি ভাষার বহুল ব্যবহৃত প্যানাগ্রাম: “The quick brown fox jumps over the lazy dog”. এটি ৩৫টি বর্ণ নিয়ে গঠিত।  ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে ছোটো প্যানগ্রাম হলো:  Glib jocks quiz nymph to vex dwarf. এই বাক্যটি ২৭টি বর্ণ নিয়ে গঠিত।
  ইংরেজি ভাষার কয়েকটি প্যানগ্রাম:
  1. Glib jocks quiz nymph to vex dwarf. (27 letters)
  2. Sphinx of black quartz, judge my vow. (29 letters)
  3. How vexingly quick daft zebras jump! (30 letters)
  4. Two driven jocks help fax my big quiz. (30 letters)
  5. The five boxing wizards jump quickly. (31 letters)
  6. Go, lazy fat vixen; be shrewd, jump quick. (31 letters)
  7. Pack my box with five dozen liquor jugs. (32 letters)
  8. When zombies arrive, quickly fax Judge Pat. (35 letters)
  9. Sympathizing would fix Quaker objectives. (36 letters)
  10. Watch “Jeopardy!”, Alex Trebek’s fun TV quiz game. (37 letters)
  11. Amazingly few discotheques provide jukeboxes. (40 letters)
  12. By Jove, my quick study of lexicography won a prize! (41 letters)
  13. My girl wove six dozen plaid jackets before she quit. (43 letters)
  14. Fred specialized in the job of making very quaint wax toys. (48 letters)
  15. Farmer Jack realized that big yellow quilts were expensive. (50 letters)
  16. Brown jars prevented the mixture from freezing too quickly. (50 letters)
  17. Intoxicated Queen Elizabeth vows Mick Jagger is perfection. (51 letters)

৩৯টি বর্ণের একটি বাক্যে সবগুলো স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে /-কার/চিহ্ন-সহ অনুস্বর, বিসর্গ ও চন্দ্রবিন্দুর প্রয়োগ দেখিয়ে শাহিদুল একটি বাক্য রচনা করেছেন। বাক্যটি ‘শুবাচ লিটল ম্যাগ’ প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে ( পৃষ্ঠা: ২৮)। বাক্যটি হলো :

“ঊনিশে কার্তিক রাত্র সাড়ে আট ঘটিকায় ভৈরবনিবাসী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণগ্রস্ত অভাবী দুঃস্থ প্রোঢ় কৃষক এজাজ মিঞা হাতের কাছে ঔষধ থাকিতেও ঐ ঋণের ডরেই চোখে ঝাপসা দেখিয়া বুকের যন্ত্রণায় ঈষৎ কাঁপিয়া উঠিয়া উঠানে বিছানো ধূসর রঙের ফরাশের উপর ঢলিয়া পড়িলেন।’’

[ঊনিশে বানানে রচয়িতা ঊ ব্যবহার করেছেন।]

 উপরের বাক্যে কোনো বর্ণ বা চিহ্ন একাধিক বার ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বাংলা বর্ণমালার সবগুলো বর্ণ ও চিহ্ন কমপক্ষে একবার হলেও ব্যবহার করে বাক্যটি চয়ন করা হয়েছে। আমার জানামতে এটি এই প্রকৃতির লেখা সবচেয়ে সহজ ও সরল বাক্য।প্রসঙ্গত, গোষ্ঠীবিধি ভঙ্গ করায় শাহিদুল হককে শুবাচ থেকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তারপরও শুবাচ শাহিদুল হকের অবদান  কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে। 

পুনশ্চ: শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ) গোষ্ঠীতে বাংলা পরিষদ প্রদত্ত প্রাসঙ্গিক লেখনীটি গুরুত্বের দাবি রাখে। পাঠকদের জন্য তা নিচে অবিকল তুলে ধরা হলো:

The quick brown fox jumps over the lazy dog এমন একটি ইংরেজি বাক্য যেখানে ইংরেজি বর্ণমালার ২৬ টি বর্ণই বিদ্যমান। অনেকেই জানতে চান বাংলায় এরকম কোন বাক্য আছে কি-না।

প্রথমেই বলে নিই এধরণের বাক্য ও বাক্য তৈরিকে ইংরেজিতে প্যানগ্রাম বলা হয়ে থাকে। বাংলায় এর পরিশব্দ করা হয়েছে শুক্তিবাক্য। শুক্তি বা ঝিনুক তার বুকে মূল্যবান মুক্তো আগলে রাখে। এ কারণেই প্যানগ্রামকে বাংলায় শুক্তিবাক্য বলা হয়ে থাকে যেহেতু ৫০ টি মুক্তোও এটি ধারণ করে রাখে।বাংলায় শুক্তিবাক্য তৈরির প্রচেষ্টা তেমন একটা পরিলক্ষিত হয়নি। তবুও আমরা তিনটি শুক্তি সংগ্রহ করেছি।

১. প্রথমবারের মতো শুক্তি তৈরির প্রচেষ্টা দেখা যায় ১৯৯৩ সালে, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘প্রসঙ্গ বাংলাভাষা’ বইয়ে ভারতীয় ভাষাবিদ মনোজকুমার দ গিরিশের লেখা ‘বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ণমালা’ প্রবন্ধে। শুক্তিবাক্যটি হলো-

//*বিষণ্ণ ঔদাসীন্যে ঊষাবৌদি বাংলাভাষায় প্রচলিত ঈশপের নিখুঁত গল্পটির অর্ধেক বলতেই ঋতু ভুঁইঞা আর ঐন্দ্রিলা দারুণ হৈ-হৈ করে উঠল—ওঃ, ব্যাস্ এবার থামো বুঝেছি বড্ডো পুরানো ঢঙের কেমন এক গল্প যার নীতি বাক্য হল–“মূঢ় আড়ম্বর ও আত্মশ্লাঘার ফল জীবনে বিঘ্ন ও বৃহৎ ক্ষতি”—তাই না, এ্যাঁ?*//

২. জিকোর তৈরি একটি বাংলা শুক্তি যেখানে বাংলা ৫০টি বর্ণই বিদ্যমান- //*বর্ষণমুখর দিন শেষে, ঊর্দ্ধপানে চেয়ে যখন আষাঢ়ে গল্প শোনাতে বসে ওসমান ভুঁইঞা, ঈষান কোণে তখন অন্ধকার মেঘের আড়ম্বর, সবুজে ঋদ্ধ বনভূমির নির্জনতা চিরে থেকে থেকে ঐরাবতের ডাক, মাটির উপর শুকনো পাতা ঝরে পড়ে ঔদাসীন্যে, এবং তারই ফাঁকে জমে থাকা ঢের পুরোনো গভীর দুঃখ হঠাৎ যেন বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে ধূসর জীবনে রঙধনু এনে দেয়।*//

৩.অজ্ঞাত কোন উৎস হতে সংগৃহীত ও কিছুটা সংস্কারকৃত আরেকটি শুক্তি যা মূলত সাধুভাষায় রচিত- //মহারাজ ঊষাকালে বৃহৎ ঐরাবতে রাজপথের অর্ধেক প্রদক্ষিণ করতঃ হঠাত্‍ উক্তি করিলেন, “এই ঢোল‌ পাখোয়াজ, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঝংকার ও সৌরভ মন্দ্রিত আড়ম্বরপূর্ন রঙিন জীবনের ছত্রতলে যে বিষণ্ণ দারিদ্র তাহা কি ঈষৎ ঔদাসীন্য, অপ্রচলিত বৈদেশিক নীতি নাকি বারভুঁইঞার সহিত পুরাণো এবং আত্মঘাতী ডামাডোলের ফসল?”// মূল অনুচ্ছেদে ঢ়,ড,ঝ ইত্যাদি বর্ণ অনুপস্থিত থাকায় তা একটি লিপোগ্রাম ছিলো। পরবর্তীতে পরিষদ ঢ়, ড ও ঝ যুক্ত করেছে।

৪. এগুলোর পাশাপাশি আমরা একটি কবিতাও সংগ্রহ করতে পেরেছি। শ্যামল চন্দ্র দাসের লেখা মূল কবিতাটিতে ঔ বর্ণটি অনুপস্থিত ছিলো কিন্তু পরবর্তীতে সাকিব নূর আশরাফ সেখানে ঔ বর্ণটি যুক্ত করেন।

হৃদয়ের চঞ্চলতা বন্ধে ব্রতী হলে
জীবন পরিপূর্ণ হবে নানা রঙের ফুলে।
কুঞ্ঝটিকা প্রভঞ্জন শঙ্কার কারণ
লণ্ডভণ্ড করে যায় ধরার অঙ্গন।
ক্ষিপ্ত হলে সাঙ্গ হবে বিজ্ঞজনে বলে
শান্ত হলে এ ব্রহ্মাণ্ডে বাঞ্ছিতফল মেলে।
আষাঢ়ে ঈশান কোনে হঠাৎ ঝড় উঠে
গগন মেঘেতে ঢাকে বৃষ্টি নামে মাঠে
ঊষার আকাশে নামে সন্ধ্যার ছায়া
ঐ দেখো থেমে গেছে পারাপারে খেয়া।
শরৎ ঋতুতে চাঁদ আলোয় অংশুমান
সুখ দুঃখ পাশা পাশি সহ অবস্থান।
যে জলেতে ঈশ্বর তৃষ্ণা মেটায়
সেই জলেতে জীবকুলে বিনাশ ঘটায়।
রোগ যদি দেহ ছেড়ে মনে গিয়ে ধরে
ঔষধের সাধ্য কি বা তারে সুস্থ করে?

—————–

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

Language
error: Content is protected !!