বাংলায় প্রথম বিজ্ঞান বইয়ের লেখক, যতিচিহ্নের প্রবর্তক, বিজ্ঞান আলোচনার পথিকৃৎ. বাংলায় লেখা প্রথম বিজ্ঞান বই, বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের প্রথম গ্রন্থ
ড. মোহাম্মদ আমীন
বাংলায় প্রথম বিজ্ঞানবিষয়ক বইয়ের লেখক অক্ষয়কুমার দত্ত। প্রখ্যাত কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ছিলেন তাঁর নাতি। অক্ষুয়কুমার দত্তকে ভারতে বিজ্ঞান আলোচনার পথপ্রদর্শক বা পথিকৃৎ বলা হয়। উনিশ শতকের বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবেও তিনি খ্যাত।
১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই জুন কলকাতায় তত্ত্ববোধিনী সভার উদ্যোগে তত্ত্ববোধিনী পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত হয়। অক্ষয়কুমার দত্তদিকদর্শন প্রকাশনী লি:পাঠশালার শিক্ষক নিযুক্ত হন। তিনি পড়াতেন ভূগোল ও পদার্থবিদ্যা। এ বিষয়ে বাংলা ভাষায় কোনো পাঠ্যগ্রন্থ না থাকায় তিনি পাঠশালার শিক্ষার্থীদের জন্য ভূগোল (১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দ ) ও পদার্থবিদ্যার (১৮৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) বই লেখেন।
ভূগোল বাংলা ভাষায় লেখা প্রথম বিজ্ঞানবিষয়ক বই। এ বইয়ের মাধ্যমে অক্ষয়কুমার দত্ত বাংলায় যতিচিহ্নের প্রবর্তন করেন। তবে পদার্থবিদ্যা পরে প্রকাশিত হলেও, এটি বাংলা ভাষায় রচিত বিশুদ্ধ বিজ্ঞানের প্রথম গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।
অক্ষয়কুমার দত্ত ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় নবদ্বীপের চুপী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা পীতাম্বর দত্ত এবং মাতা দয়াময়ী দেবী। অল্প বয়সে তিনি ইংরেজি, বাংলা, সংস্কৃত, ফার্সি ও জার্মান ভাষায় পাণ্ডিত্য অর্জন করেন।
বহুভাষাবিদ পণ্ডিত জেফ্রয়ের কাছে তিনি গ্রিক, ল্যাটিন, জর্মান, ফরাসি ও হিব্রু ছাড়াও পদার্থবিদ্যা, ভূগোল, জ্যামিতি, বীজগণিত, ত্রিকোণমিতি, সাধারণ বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। আমিরউদ্দীন মুন্সির কাছে শিখেন ফারসি ও আরবি।
তাঁর প্রথম বিজ্ঞানবিষয়ক বই ভূগোল । এটি তত্ত্ববোধিনী পাঠশালার পড়াশোনার জন্য ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্ববোধিনী সভার উদ্যোগে প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় বই বাহ্যবস্তুর সহিত মানব-প্রকৃতির সম্বন্ধ বিচার (১ম ভাগ)। এটি ১৮৫২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয়। এরপর এই বইয়ের ২য় ভাগ, চারুপাঠ (তিনভাগ), ধর্মনীতি, ভারতবর্ষীয় উপাসক-সম্প্রদায় (দুই ভাগ) ইত্যাদি প্রকাশিত হয় । চারুপাঠ শিশুপাঠ্য বই হিসেবে একসময় জনপ্রিয় ছিল।