Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
বাংলা একাডেমির বানান সমস্যা অফুরান – Dr. Mohammed Amin

বাংলা একাডেমির বানান সমস্যা অফুরান

খুরশেদ আহমেদ
প্রিয় বাংলা একাডেমি ও প্রিয় শুবাচি,
আমার আজকের আলোচ্য বিষয়:
না অ-অন্ত্য, না ও-অন্ত্য, বরং অ এবং ও-য়ের মাঝখানের কোনো এক অসংজ্ঞায়িত-স্বর-অন্ত্য, যেমন ‘করব’, ‘করত’, ‘করল’—এ-ধরনের ক্রিয়ারূপগুলোর প্রমিত-বানান-সমস্যা।
১। উত্তম পুরুষ সাধারণ ভবিষ্যৎ (যেমন, আমি করব) এবং প্রথম পুরুষ সাধারণ অতীত (যেমন, সে করল) ও নিত্যবৃত্ত অতীত (যেমন, সে করত) রূপগুলোর বানান অ-কারান্ত হবে, না কি ও-কারান্ত হবে, তা নিয়ে সমস্যা আছে।
২। ও-কার-পন্থিরা লিখতে চান ‘করবো’, ‘করলো’, ‘করতো’ ইত্যাদি; অ-কার-পন্থিরা সমর্থন করেন ‘করব’, ‘করল’ ও ‘করত’ ইত্যাদি।
৩। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম [পরিমার্জিত সংস্করণ ২০১২] এ-ধরনের ক্রিয়ারূপগুলোর বানান লিখতে অ-কারান্ত ও ও-কারান্ত রূপের মিশ্রণ ঘটিয়েছে: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লিখেছে অ-কারান্ত, অবশিষ্ট ক্ষেত্রে লিখেছে ও-কারান্ত।
৪। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম—৫.১ থেকে ৫.১০—নিচে-উল্লেখ-করা ধাতুগুলোর সংশ্লিষ্ট ক্রিয়ারূপ লিখেছে এভাবে:
৫.১ উঠ্‌ ধাতু: উঠব, ওঠাব, উঠত, ওঠাত, উঠল, ওঠাল। [অ-কারান্ত ১০০%; ও-কারান্ত ০%।]
৫.২ কর্ ধাতু: করব, করাব, করত, করল, করাতো, করালো। [অ-কারান্ত ৬৭%; ও-কারান্ত ৩৩%।]
৫.৩ কাট্ ধাতু: কাটব, কাটাব, কাটত, কাটল, কাটাত, কাটাল। [অ-কারান্ত ১০০%; ও-কারান্ত ০%।]
৫.৪ খা ধাতু: খাব, খাওয়াব, খেতো, খেলো, খাওয়াত, খাওয়াল। [অ-কারান্ত ৬৭%; ও-কারান্ত ৩৩%।]
৫.৫ দি ধাতু: দেবো, দেওয়াব, দিত, দিলো, দেওয়াত, দেওয়ালো। [অ-কারান্ত ৫০%; ও-কারান্ত ৫০%।]
৫.৬ দৌড়া ধাতু: দৌড়াব, দৌড়াত, দৌড়াল। [অ-কারান্ত ১০০%; ও-কারান্ত ০%।]
৫.৭ যা ধাতু: যাব, যাওয়াব, যেত, গেল, যাওয়াত, যাওয়াল। [অ-কারান্ত ১০০%; ও-কারান্ত ০%।]
৫.৮ শিখ্ ধাতু: শিখব, শেখাব, শিখত, শিখল, শেখাত, শেখাল। [অ-কারান্ত ১০০%; ও-কারান্ত ০%।]
৫.৯ শু ধাতু: শোব, শোয়াব, শুতো, শুলো, শোয়াত, শোয়াল। [অ-কারান্ত ৬৭%; ও-কারান্ত ৩৩%।]
৫.১০ হ ধাতু: হব, হওয়াব, হতো, হলো, হওয়াত, হওয়াল। [অ-কারান্ত ৬৭%; ও-কারান্ত ৩৩%।]
ওপরে উল্লেখ-করা ৬৭টি ক্রিয়ারূপের মধ্যে ৫৭টি—বা ৮৫%—অ-কারান্ত; অবশিষ্ট ১০টি—বা ১৫%—ও-কারান্ত।
৪। কোনো কোনো বানান অ-কারান্ত, অন্যগুলো ও-কারান্ত; কিন্তু প্রমিত বানানে কেন এমন মিশ্রণ থাকবে তা ব্যাখ্যা করেনি এবং করার প্রয়োজন মনে করেনি বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম।
৫। প্রমিত বানানে ওপরে উল্লেখ-করা ৬৭টি ক্রিয়ারূপের মধ্যে কোনটি লিখতে হবে অ-কারান্ত, আর কোনটি ও-কারান্ত, তা মনে রাখা, বিশেষ করে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যার অনুপস্থিতিতে, যে-কোনো শিক্ষার্থীর মতো আমার জন্যও একটা চ্যালেঞ্জ।
৬। কেউ কেউ বলেন, একই বানানে ভিন্নার্থক শব্দ আছে বলে লেখা হয়েছে, যেমন, ‘হল’-র পরিবর্তে ‘হলো’, যাতে ইংরেজি ‘hall’-এর সঙ্গে কেউ ‘হল’-কে গুলিয়ে না ফেলেন।
অথচ, এই ‘হলো’ রূপটি দেখামাত্র আমার চোখের পর্দায় যে-শব্দটি ভেসে ওঠে সেটা হল ‘hollow’।
আমি নিশ্চিত, এখানে অব্যবহিত আগের বাক্যের ‘হল’-কে আপনি ‘hall’ পড়েননি এবং, সুতরাং, বিভ্রান্ত হননি।
৭। বিচ্ছিন্নভাবে যে-কোনো একটি শব্দ, যেমন অভিধানে সংকলিত যে-কোনো একটি শব্দ, বহু-সংখ্যক অভিধার্থ নিয়েও অনির্দিষ্ট ও অকেলাসিত; বলা যায়, নিষ্প্রভ, নিষ্প্রাণ।
শব্দের অর্থ স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট হয় যখন শব্দটি বাক্যে প্রযুক্ত হয়। বাক্যে প্রযুক্ত শব্দকে বাংলা ব্যাকরণে আমরা বলি ‘পদ’।
‘পদ’-এর অর্থ সুনির্দিষ্ট হয় বাক্যের অন্যান্য পদের সাপেক্ষে; ওই বাক্যের পূর্বাপর অন্যান্য বাক্যের সাপেক্ষে; প্রসঙ্গ-প্রতিবেশের সাপেক্ষে।
৮। “ওর সঙ্গে ঝগড়া করতে যেয়ো না, ঝামেলা হবে; ও হল এ-এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী।”—এ-বাক্যে যিনি ‘হল’ ক্রিয়ারূপটিকে ‘hall’ পড়েন ও ‘hall’-অর্থে বোঝেন, তিনি নিশ্চয়ই আমার লেখার উদ্দিষ্ট পাঠক নন।
৯। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ
[দ্বিতীয় খণ্ড ।। প-হ; প্রথম প্রকাশ ১৩৪০-৫৩; কলিকাতা: সাহিত্য অকাদেমী]  ‘প্রকৃতি’ শব্দটির অর্থ অন্তর্ভুক্ত করেছে ৩৩টি; সে-কারণে ‘প্রকৃতি’ শব্দটিকে ৩৩টি—প্রকৃতি১, প্রকৃতি২, প্রকৃতি৩ ইত্যাদি—বানান-রূপে প্রকাশ করার নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন নেই। অনলাইন অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি (OED) ইংরেজি শব্দ run-এর অর্থ অন্তর্ভুক্ত করেছে ৬৪৫টি বা তারও বেশি। অর্থ-পার্থক্যের কারণে একটি শব্দের বানান ভিন্ন রূপে প্রকাশ করতে হলে বোধ করি জগতের সকল কাগজেও কুলুবে না।
১০। ক্রিয়ারূপের অন্ত্যে ও-কার দেওয়া-না-দেওয়ার প্রশ্নে আমার পছন্দ পবিত্র সরকারের পরামর্শ, যখন তিনি তাঁর বানান-বোধিনী/একটি অভিনব বানান অভিধান (বাংলা প্রকাশ, প্রথম প্রকাশ একুশে বইমেলা ২০১৫) বইটিতে বলেন, “… যাকে ভাষার লেখার ‘ইকনমি’ বলে সেটাই মেনে চলুন, অকারণে ক্রিয়াপদে ও-কার দেবেন না।”
এ প্রসঙ্গে তাঁর পুরো অনুচ্ছেদটি পড়ুন:
ক্রিয়ার নিত্যবৃত্ত অতীত, শুদ্ধ অতীত আর ভবিষ্যৎ রূপের শেষে ও-কার দেবেন না- করত (করতো নয়), করল (করলো নয়), করব (করবো নয়)/[।] উচ্চারণ অনুযায়ী বানান আমরা বিশেষ্য-বিশেষণে লিখি না যখন, ক্রিয়াতে কেন খামোখা লিখতে যাব? যদি কেউ বলেন যে ক্রিয়াগুলি তদ্ভব শব্দ, তাহলে আমরা বলব বিশেষ্য বিশেষণে প্রচুর তদ্ভব শব্দ আছ [আছে], সেগুলির ক্ষেত্রে কী করি দেখুন- যেমন চরকি (চোরকি লিখি না), লগি (লোগি লিখি না), পড়ুয়া (পোড়ুয়া লিখি না)। তা হলে কেন ক্রিয়াপদে বলতো, শুনতো, হাসবো, ভাসলো লিখতে যাব? এমনকি হোলো হোতো লেখারও দরকার নেই, কারণ ‘হল’ ক্রিয়াপদের সঙ্গে ইংরেজি hall-কে কেউ গুলিয়ে ফেলবে না, আর হত ক্রিয়াপদের সঙ্গে ‘নিহত’ বিশেষণের গুলিয়ে যাবারও সম্ভাবনা খুব কম। কেউ ‘হলো’ লেখেন। কিন্তু, আবার বলি, উচ্চারণ অনুযায়ী লিখতে হলে ‘হোলো, হোতো’ লিখতে হবে। কাজেই যাকে ভাষার লেখার ‘ইকনমি’ বলে সেটাই মেনে চলুন, অকারণে ক্রিয়াপদে ও-কার দেবেন না।
১১। এ-পোস্টে আলোচিত সকল ক্রিয়ারূপকে প্রমিত বানানের স্বীকৃতি দিয়ে হয় অ-কারান্ত লেখা যেতে পারে, না হয় ও-কারান্ত লেখা যেতে পারে—দুটি বিকল্পের মধ্যে যে-কোনোটি আমার জন্য গ্রহণযোগ্য; কিন্তু কিছু রূপ অ-কারান্ত লিখব, বাকি রূপগুলো লিখব ও-কারান্ত, কোনো ব্যাখ্যা ছাড়া, সে-অবস্থাটা আমার জন্য সমস্যা-সংকুল।
প্রিয় বাংলা একাডেমি, এ-সমস্যা থেকে মুক্তি চাই!