ড. মোহাম্মদ আমীন
আদেশ ও নির্দেশ
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘আদেশ’(আ+√দিশ্+অ) শব্দের অর্থ— হুকুম, অনুমতি, উপদেশ, অনুশাসন প্রভৃতি। এবার অর্থানুসারে আদেশ শব্দের প্রয়োগ দেখুন:
আদেশ (হুকুম) : প্রধানমন্ত্রীর আদেশ ছাড়া কাজটি করা যাবে না।
আদেশ (অনুমতি) : প্রধানমন্ত্রীর আদেশ নিয়ে কাজটি করা হয়েছে।
আদেশ (উপদেশ) : গুরুজনের আদেশ মান্য করা উচিত।
আদেশ (অনুশাসন) : মহামান্য রাষ্ট্রপতি এ বিষয়ে সুস্পষ্ট আদেশ জারি করেছেন।
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘নির্দেশ’ (নির্+√দিশ+অ) শব্দের অর্থ – নির্ধারণ, স্থিরীকরণ, বিশেষভাবে প্রদর্শন, আদেশ, উপদেশ প্রভৃতি। এবার নির্দেশ শব্দের আভিধার্থিক প্রয়োগ দেখা যাক:
নির্দেশ (নির্ধারণ) : পাণিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের অনেক সূত্র নির্দেশ করে দিয়েছেন।
নির্দেশ (স্থিরীকরণ) : বিষয়টি অনুধাবনের জন্য এই প্রবন্ধের নির্দেশই যথেষ্ট।
নির্দেশ (বিশেষভাবে প্রদর্শন) : তথ্যসূত্রে প্রতিটি বিষয়ের উৎস নির্দেশ করা হয়েছে।
নির্দেশ (আদেশ) : প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছাড়া কাজটি করা যাবে না।
নির্দেশ (উপদেশ) : গুরুজনের নির্দেশ মান্য করা উচিত।
উপরের পর্যালোচনায় দেখা যায় আদেশ, উপদেশ, হকুম, অনুশাসন প্রভৃতি অর্থ প্রকাশে ‘আদেশ’ ও ‘নির্দেশ’ সমার্থক এবং সর্বক্ষেত্রে মোটামুটি উপযুক্ত। এ অর্থগুলো প্রকাশে ‘আদেশ’ বা ‘নির্দেশ’ যে-কোনো শব্দ যে-কোনো ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। বাক্যে কখন কোনটি শোভনীয় হবে, তা নির্ধারণ করার জন্য লেখকের বাঞ্ছাই ব্যাকরণিকভাবে শুদ্ধ গণ্য করা যায়। তবে নির্দেশ শব্দটি সাধারণত আদেশ শব্দের চেয়ে কঠিন এবং অধিকতর দাপ্তরিক। যেমন : “গুরুজনের নির্দেশ মান্য করা উচিত”, বাক্যটির চেয়ে “গুরুজনের আদেশ মান্য করা উচিত।” বাক্যটি অধিকতর শ্রুতিমধুর, প্রচলিত এবং শোভন ও নান্দনিক। সে হিসেবে ‘নির্দেশ’ শব্দের চেয়ে ‘আদেশ’ শব্দের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। তাই প্রাত্যহিক কাজে যেখানে উভয় শব্দ ব্যবহার করা যায়, সেখানে নির্দেশ শব্দের পরিবর্তে ‘আদেশ’ শব্দটি ব্যবহার করা সমীচীন। আমরা সাধারণত বলি, “মায়ের আদেশ”।
অনুরূপ তথ্য সমৃদ্ধ লিংক: বাংলা কোথায় কী লিখবেন আদেশ নির্দেশ অনুশাসন।
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক।