রাগ অনুরাগ
ড. মোহাম্মদ আমীন
‘রাগ’ শব্দের বর্তমান আভিধানিক অর্থ ক্রোধ, রোষ, গোস্সা, রঞ্জক-দ্রব্য প্রভৃতি। সংগীতেও একপ্রকার ‘রাগ’ আছে, সেটি অন্য রাগ—এ রাগের সঙ্গে রাগিণীও আছে। আবার অনুরাগও একপ্রকার রাগ।প্রণয়কেও রাগ বলা হয়।যেমন: পূর্বরাগ। তবে ‘রাগ’ বলতে আমরা সাধারণত ক্রোধ, রোষ, গোস্সা, ক্ষুব্ধ ইত্যাদি বুঝে থাকি।
প্রকৃতপক্ষে সংস্কৃত ‘রাগ’ শব্দের আদি ও মূল অর্থ ছিল : স্নেহ, প্রীতি, ভালবাসা (ভালোবাসা!), প্রেম, আদর প্রভৃতি। অনেকে এমন তথ্য নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু অনুরাগ, সংরাগ, পূর্বরাগ প্রভৃতি শব্দের অর্থের দিকে তাকালে তাদের বিস্ময় আর থাকবে না। ‘অনুরাগ’ শব্দের অর্থ ভালবাসা— যা প্রেম-প্রীতির চেয়েও গভীর। নানা কারণে ‘রাগ’ শব্দের মূল অর্থ উল্টে গেলেও ‘রাগ’ শব্দের সঙ্গে নানা শব্দগুচ্ছ (উপসর্গ) যুক্ত হয়ে যেসব শব্দ গঠিত হয়েছে সেগুলোর অর্থ এখনো মূল অর্থের মতো অবিকল রয়ে গিয়েছে। এ জন্য ‘রাগ’ যতই অনাকাঙ্ক্ষিত হোক না কেন, অনুরাগ বড়ো মধুর, নিঃসন্দেহে পরমভাবে কাঙ্ক্ষিত। কীভাবে ‘রাগ’ শব্দটির অর্থের এমন পরিবর্তন হলো?
সংস্কৃত হতে বাংলায় আসার প্রাক্কালে ‘রাগ’ শব্দটি তার মূল অর্থ ‘ভালোবাসা ও প্রেম-প্রীতি’ নিয়েই এসেছিল। কিন্তু বাঙালিরা সংস্কৃত ‘রাগ’ অর্থাৎ ভালবাসাকে তার মূল অর্থে ধরে রাখতে পারেনি। বাঙালিরা যেমন চঞ্চল তেমনি অতিমাত্রায় আবেগপ্রবণ জাতি। রাগতে রাগতে অর্থাৎ ভালবাসতে-বাসতে হয়তো ফতুর হয়ে যাওয়া বাঙালিরা সংস্কৃত ‘রাগ’-এর প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। এজন্য বউ রাগলেও স্বামী ভালোবাসার প্রাণ আর অনুরাগের ছোঁয়া দেখে।
এভাবে সংস্কৃত ‘রাগ’ তার আদি অর্থ হারিয়ে সম্পূর্ণ বিপরীত অর্থ ধারণ করে। কিন্তু তার উপজাত শব্দগুলোর অর্থ পরিবর্তন করার মতো বুদ্ধি বা বোধ কোনোটাই তখন তাদের ছিল না। তাই বাংলায় এখন ‘রাগ’ অর্থ ক্রোধ হলেও ‘অনুরাগ’ অর্থ প্রেম-প্রীতি, মায়া-মমতা আর ভালবাসা নির্দেশ করে।