অশ্রুজল:অনেকে বলেন ‘অশ্রুজল’ শব্দটি বাহুল্য ও অপপ্রয়োগ। এ প্রসঙ্গে তাদের বক্তব্য ‘অশ্রু’ ও ‘জল’ সমার্থক। ‘অশ্রু’ ও ‘জল’ পৃথকভাবে সমার্থক হলেও ‘অশ্রুজল’ ভিন্ন অর্থদ্যোতক একটি নতুন শব্দ। তাই ‘অশ্রুজল’ শব্দটি বাহুল্য— এটি আদৌ ঠিক নয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘অশ্রুজল’ শব্দটিকে প্রমিত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ওই অভিধানমতে শব্দটির অর্থ— চোখের জল। তাই নির্দ্বিধচিত্তে ব্যবহার করুন ‘অশ্রুজল’।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ও বইমেলা : বই আর গ্রন্থ পরস্পর সমার্থক। তাই ‘বইমেলা’ মানে ‘গ্রন্থমেলা’। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বই নিলয়’ রাখা হলে সেটিকে `Book House’ বলা যায় না, তেমনি বলা যায় না ‘গ্রন্থ নিলয়’।কেননা, ‘নাম’ হচ্ছে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পরিচায়ক, এর কোনো ভাষান্তর সাধারণত হয় না। এটি কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তুকেই নির্দেশ করে। সমার্থ শব্দ নিয়ে কোনো নামকে প্রকাশ করা মানে, ওই নামকে বিকৃত করা। কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বইঘর’ হলে তাকে কেউ ‘গ্রন্থঘর’ বলে না, বলা হয় না ‘পুস্তকঘর’ কিংবা পুথিঘর বা বুকহাউজ, এমন বলাও উচিত নয়; কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে পরিচালিত ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ আমাদের অনেকের মুখে ‘বইমেলা’ হয়ে যায়।‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ একটি নাম। এটাকে বিকৃত করে ‘বইমেলা’ বলা সমীচীন নয়। তারপরও বলে যাচ্ছি। এটি আমাদের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তার দুর্বল একটা দিক।
একুশে ফেব্রুয়ারি: কেউ কেউ বলেন— ২১শে ফেব্রুয়ারি মানে ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ নয়। তাদের মতে— এখন এই ২১ সংখ্যাটিকে যদি বানান করে লেখা হয় তাহলে হবে ‘একুশ’। এর সাথে যখন ‘শে’ যুক্ত করা হয় তখন সংখ্যাটি হয় ‘একুশশে’ অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির ২১০০তম দিনে ভাষাশহিদেরা

জীবন দিয়েছেন – যা সম্পূর্ণ ভুল। তাই সঠিক বানান হবে ২১এ ফেব্রুয়ারি। এটি একটি প্রচলিত হাস্যকর ধারণা। ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, একুশে ফেব্রুয়ারি বা ২১শে ফেব্রুয়ারি শুদ্ধ সিদ্ধ ও প্রমিত।
ধূমপান নিষেধ: কেউ কেউ বলেন, ‘ধূমপান নিষেধ’, ‘প্রবেশ নিষেধ’ প্রভৃতি বাক্যে ‘নিষেধ’ শব্দটি অপপ্রয়োগ। এই অনেকের বক্তব্য

ব্যাকরণমতে আদৌ ঠিক নয়। এক্ষেত্রে ‘নিষেধ’ ও ‘নিষিদ্ধ’ দুটোই শুদ্ধ সিদ্ধ ও প্রমিত।বরং ‘নিষেধ’ শব্দটি যেমন বহুল প্রচলিত। তেমনি ব্যাকরণগতভাবেও শুদ্ধ।বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] গ্রন্থে ‘নিষেধ’ শব্দটিকে বিশেষ্যও বলা হয়েছে আবার বিশেষণও বলা হয়েছে। সে হিসেবে ‘ধূমপান নিষেধ’ ও ‘ধূমপান নিষিদ্ধ’ দুটো প্রকাশভঙ্গিই শুদ্ধ। তাহলে, কোনটি লিখব? যে-কোনো একটি লিখতে পারেন।তবে, আমি লিখি- নিষেধ।
শহিদ মিনার: শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নির্মিত মিনার বা শহিদদের নিমিত্ত মিনার বা শহিদের স্মরণে মিনার— প্রভৃতি অর্থ প্রকাশের জন্য ‘শহিদমিনার’ বা ‘শহিদ মিনার’ কথাটি ব্যবহার করা হয়। তাই সমাসবদ্ধ পদ হিসেবে শহিদমিনার হবে, শহিদ মিনার নয়। কারণ সমাসবদ্ধ শব্দে ফাঁক
রাখা যায় না। তাই ‘শহিদ মিনার’ কথাটি শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হবে ‘শহিদমিনার’ বা ‘শহিদ-মিনার’। তাদের এ ধারণা সঠিক নয়। ‘শহিদ মিনার’ কথাটি অশুদ্ধ নয়, বরং ব্যাকরণগতভাবে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ও প্রমিত। কারণ, এটিও সমাসবদ্ধ পদ। সমাসবদ্ধ পদকে ফাঁক রেখে লিখলে তাকে বলা হয় অসংলগ্ন সমাস। যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি, নিখিল ভারত মুসলিম যুব সংহতি প্রভৃতি।

উভয়মতে ‘সঠিক’ শব্দটি পুরোপুরি সঠিক। তাই নির্দ্বিধচিত্তে লিখুন— সঠিক শব্দের ব্যবহার পুরোপুরি সঠিক।
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩
ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন