কোনটি শ্রেষ্ঠ : ভাষা না ব্যাকরণ
ড. মোহাম্মদ আমীন
ভাষা, ব্যাকরণের আগে এবং ব্যাকরণ, ভাষার পরে। তা জানা সত্ত্বেও ভাষা নিয়ে আলোচনায় অনেকে প্রশ্ন করে বসেন, “ভাষা আগে না কি ব্যকরণ আগে?” এই প্রশ্ন করে তারা বোঝাতে চান, ব্যাকরণ ভাষার পরে এসেছে, তাই ভাষা ব্যাকরণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। অতএব, ভাষা যেভাবে চলে, ব্যাকরণকেও সেভাবে চলতে হবে। তাহলে ব্যাকরণের কী প্রয়োজন? চলুক ভাষা যেভাবে ইচ্ছা এবং সুশৃঙ্খল নির্দেশনার অভাবে হারিয়ে যাক জঞ্জালে!
কেউ কেউ মনে করেন, নবীনপ্রজন্মের চেয়ে প্রবীণ প্রজন্ম শ্রেষ্ঠ ছিল। তাই অনেকে নির্বিচারে নবীনপ্রজন্মের বিরূপ সমালোচনা করে থাকেন। মুরুব্বিদের মুখে তরুণদের বদনাম কে না শুনেছে? নবীন প্রজন্মের দোষকীর্তন করার আগে প্রত্যেক প্রবীণের বোঝা উচিত, নবীন প্রজন্মের গঠনশৈলীর জন্য তারাই দায়ী। সন্তানের সমালোচনা করার আগে প্রত্যেক পূর্বপুরুষের মনে রাখা প্রয়োজন, তাদের পরিচর্যা ও নির্দেশনাই তাদের সন্তানের বর্তমান বিকাশ, অবস্থান, আচার ও প্রকাশ।
প্রয়োজনই আবিষ্কারের জননী। ভাষার উপর আমাদের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করে আদর্শ মান প্রদানের আবশ্যকতা থেকে ব্যাকরণ সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য অনেকে ব্যাকরণকে ভাষার শিক্ষক বলে থাকেন। কার্য-প্রায়োগিক সৌকর্ষ ও ভাষার সার্বিক মান রক্ষার অন্যতম নিয়ামক ব্যাকরণকে অবহেলা করে যারা ভাষাকে সংখ্যাঘরিষ্ঠ-মুখে ছেড়ে দিতে চান, তাদের আইন ও বিধিবিধান বিবর্জিত কোনো জনপদের পাশব প্রতিক্রিয়ার কথা খেয়াল রাখা সমীচীন। মাৎস্যন্যায় কথাটি তাদের হয়তো মনে আছে। তাদের সতর্ক থাকা উচিত, শিক্ষকের নির্দেশনা বঞ্চিত মনুষ্য শিশুর কী অবস্থা হতে পারে।
সুতরাং, কোনটা উত্তম এবং কোনটা অধম এই বিভাজনে না-গিয়ে আপনিই বলুন, ভাষা ও ব্যাকরণের সম্পর্ক, কার্যপরিধি, আচার-অনাচার কেমন হওয়া উচিত।
বাংলা ব্যাকরণ সমগ্র : ধাতু ও ধাতুগণ