বাংলা ব্যকরণ সমগ্র
ড. মোহাম্মদ আমীন
পদ প্রকরণ
পদ
‘পদ’ বাংলা ব্যাকরণে বর্ণিত একটি সংজ্ঞাবাচক শব্দ। বাংলা ব্যাকরণ মতে বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকে পদ বলে। সহজ কথায় বিভক্তিযুক্ত শব্দকেই পদ বলে। বাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দই বিভক্তিযুক্ত। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দগুলোকে পদ হিসেবে নির্ধারণ করার সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশুদ্ধ শব্দ হিসেবে পাওয়া যায় না। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু ধ্বনি পাওয়া যায়। ওই সকল শব্দ লিখিত আকারে প্রকাশের সময় বাড়তি বর্ণ যুক্ত করতে হয়। যেমন : ‘দেশ’ একটি বিশুদ্ধ শব্দ। কিন্তু ‘ দেশের মানুষ’ যখন লেখা হয়, তখন ‘ দেশ’ শব্দের সঙ্গে অতিরিক্ত ‘র’ যুক্ত হয়। ফলে ‘দেশ’ শব্দটি বিশুদ্ধ রূপ হারিয়ে ফেলে। বাংলা ভাষায় ‘ দেশের’ শব্দটি ভুল বলে বিবেচনা করা হয় না। মূল শব্দের সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত বর্ণ বা বর্ণগুচ্ছকে বিভক্তি বলা হয়। পদ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে বিভক্তিকে বাদ দিয়ে মূল শব্দ অনুসন্ধান করতে হয়। যেমন ‘ দেশের’ শব্দটির পদ নির্ণয় করার জন্য প্রথমে এর অন্তঃস্থ-র বাদ দিয়ে ‘দেশ’-কে বিশুদ্ধ শব্দ হিসাবে বিবেচনায় আনতে হবে। এক্ষেত্রে ‘দেশ’ শব্দটি পদ হবে আর অন্তঃস্থ-র হবে ‘ দেশ’ পদের বিভক্তি । যেসব শব্দের সাথে কোনো বাড়তি বর্ণ পাওয়া যায় না, তা হবে বিভক্তিহীন। ব্যাকরণে বিভক্তিহীন শব্দকেও বিভক্তিযুক্ত বলা হয়। একে বলা হয় শূন্য বিভক্তি।
যে শব্দটিতে আপাত দৃষ্টিতে কোনো বিভক্তি চিহ্ন দৃশ্যমান হয় না সেটিতে শূন্য বিভক্তি আছে। অর্থাৎ কাজের অন্তর্গত প্রতিটি শব্দই কোনো না কোনো বিভক্তিযুক্ত। যেমন- বর্তমান, বাস্তব, তাড়না, মানুষ, অস্থির; মানুষ, প্রাণ, রূপ, চিন্তা, স্তুপ, চাপা, পড়, আছ। এগুলো সবই শব্দ। এদের প্রত্যেকের স্বতন্ত্র অর্থ রয়েছে। এ শব্দগুলো যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন এদের রূপ পরিবর্তিত হয় এবং সম্প্রসারিত অর্থও প্রকাশ করে। অর্থাৎ এ শব্দগুলো একটি সম্প্রসারিত বা পরিপূর্ণ ভাব প্রকাশের জন্যে যখন বাক্যে ব্যবহৃত হয় তখন অপর কোনো বর্ণনা বর্ণ সমষ্টির সাহায্যে একটি শব্দের সঙ্গে অপর শব্দের সম্পর্ক স্থাপন করে। একটি শব্দের সঙ্গে অপর শব্দের সম্পর্ক স্থাপনের জন্যে যে বর্ণ বা বর্ণ সমষ্টি যুক্ত হয় সেগুলোকে বরে বিভক্তি। এ বিভক্তিগুলোই বাক্যের অন্তরর্গত শব্দকে পদে রূপান্তরিত বা পরিবর্তিত করে। অতএব, বিভক্তিযুক্ত শব্দই পদ।
আমরা উপরের শব্দগুলোকে বাক্যে ব্যবহার করলে দেখব বর্তমানের বাস্তবের তাড়নায় মানুষ অস্থির মানুষের প্রাণের রূপ চিন্তার স্তুপে চাপা পড়ে আছে।
বর্তমান এর বাস্তব + এর তাড়না + য় মানুষ + ০ অস্থির + ০; মানুষ + এর প্রাণ + এর রূপ + ০ চিন্তা + র ¯তূপ + এ চাপা + ০ পড় + এ মাছ + এ
উপরের বাক্যে-এর, -য় ০ (শূন্য)-এর -এ, এগুলো বিভক্তি। যে শব্দে বিভক্তির চিহ্ন স্পষ্ট নয় সে শব্দগুলো ০ (শূন্য) বিভক্তিযুক্ত পদ হিসেবেই বিবেচিত হয়। সুতরাং নিঃসন্দেহে সংজ্ঞায়িত করা যায় যে, বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দই এক একটি পদ বা বিভক্তিযুক্ত শব্দই পদ।
১.১ ॥ পদের প্রকারভেদ বা শ্রেণিবিভাগ বা পদ প্রকরণ :
পদ প প্রধান্তত পাঁচ প্রকার : ১. বিশেষ্য ২. বিশেষণ ৩. সর্বনাম ৪. অব্যয় ও ৫. ক্রিয়া।
১.২॥ বিশেষ্য (Noun)
যে পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বস্তু, জাতি, বিষয়, স্থান, ভাব, গুণ ও কার্যের নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্যপদ বলে। যেমন : কামাল, মানুষ, গোরু , ঢাকা, বাঙালি, গণিত, সততা, পাঠ প্রভৃতি।
প্রকৃতি, ধরণ ও বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় বিশেষ্য পদকে প্রধানত ছয়ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন :
১. ব্যক্তিবাচক : যে পদ দ্বারা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু, বা স্থানের নাম বোঝায় তাকে ব্যক্তিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- মাহবুবা, সিরাজুমমুনীরা, নাফিমা, তৃণা, জাকিরুল, সেতার, গীটার, ঢাকা, কুমিল্লা, নবীনগর ইত্যাদি।
২. জাতিবাচক : যে বিশেষ্যপদ দ্বারা কোনো জাতি ভুক্ত সকল প্রাণী, সম্প্রদায় বা পদার্থ বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- বাঙালি, ফরাসি, ইংরেজ, জার্মান, গরু, পাখি, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান (খ্রিস্টান), গাছ, আকাশ, পাহাড়, নদী, মাছ ইত্যাদি।
৩. বস্তুবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্যপদ দ্বারা কোনো বস্তুর নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- দুধ, পানি, খাতা, কলম, বস্ত্র, স্বর্ণ, রৌপ্য, লৌহ ইত্যাদি।
৪. সমষ্টিবাচক বিশেষ্র : যে বিশেষ্য পদ দ্বারা কোনো দল, গোষ্ঠী, বা সমষ্টির নাম বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- সমিতি, জনতা, বাহিনী, সভা, দল ইত্যাদি।
৫. গুণবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্যপদ দ্বারা কোনো বস্তুর দোষ গুণ বা অবস্থার নাম বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- তারুণ্য, সততা, মূর্খতা, মমতা, সৌন্দর্য ইত্যাদি।
৬. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য : যে পদ দ্বারা ক্রিয়ার ভাব বা কোনো কার্যের নাম বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বা ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন- ঘুমানো, বর্জন, গ্রহণ, পাঠ, গসন ইত্যাদি।
১.৩ ॥ বিশেষণ
যে পদ দ্বারা বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের দোষ, গুণ, বৈশিষ্ট্য, অবস্থা, সংখ্যা, প্রকার, পরিমাণ বা ধরন বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে। লাল, লাখ, ভালো, তাড়াতাড়ি ইত্যাদি।
বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিশেষণ পদকে ৪টি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. বিশেষ্যের বিশেষণ ২. বিশেষণের বিশেষণ ৩. ক্রিয়া বিশেষণ ৪. ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ।
১. বিশেষ্যের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ দ্বারা বিশ্বেষ্যের গুণ, অবস্থা, বা সংখ্যা বা অবস্থা বোঝায় তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে। যেমন- সুন্দরী বালিকা, পাকা আম, কোটি টাকা, রূপালি ইলিশ ইত্যাদি।
বিশেষ্যের বিশেষণকে আরও কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
ক. গুণবাচক : সৎলোক উপকারি বন্ধু, অসৎ ব্যবসায়ী ইত্যাদি।
খ. অবস্থাবাচক : মুমূর্ষু ব্যক্তি, অসুস্থ স্ত্রী, বিপদগ্রস্ত নারী ইত্যাদি।
গ. সংখ্যাবাচক : এক লাখ টাকা, লাখ জনতা ইত্যাদি। (লক্ষ অর্থ লাখ এবং লক্ষ অর্থ খেয়াল করা)
ঘ. বৈশিষ্ট্য বাচক : লাল শাড়ি,, সবুজ পাহাড়, হরিৎ বৃক্ষ ইত্যাদি।
ঙ. সর্বনাম বাচক : সেই লোকটি, যার কথা, ঐ এলাকা ইত্যাদি।
চ. অংশবাচক : দুই তৃতীয়াং জল, সিকি ভাগ ইত্যাদি।
২. বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ দ্বারা বিশেষণের অবস্থা বোঝায় তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন- ছেলেটি খুব ভালো ছাত্র। মেয়েটি খুবই সুন্দরী ইত্যাদি।
৩. ক্রিয়া বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ দ্বারা ক্রিয়ার প্রকৃতি বা অবস্থা বোঝায় তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন- এমন ভালো মানুষ কখনও দেখিনি এমন সুস্বাদু ফল কখনো খাইনি ইত্যাদি।
৪. ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ দ্বারা ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষ অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন- আপনাকে খুব তাড়াতাড়ি আসতে হবে। ছেলেটি অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে চলে গেল।
১.৪॥ সর্বনাম
যে পদ বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। যেমন- তৃণা ভালো ছাত্রী। সে নিয়মিত ক্লাশে উপস্থিত থাকে। এখানে ‘সে’ হচ্ছে বিশেষ্য। আমি, তুমি, সে, তিনি, তাহা, এ, এই, ইনি, উনি, ইহা, উহা, ও, ঐ কে, কেহ, কোন, প্রভৃতি বাংলা ভাষার সর্বনাম।
বিভক্তি ও বচনভেদে সর্বনামগুলো নিম্নরূপে পরিবর্তিত হয়-
একবচন : আমি, তুমি, যে, তিনি, উহা, উনি, ইনি, যিনি, কে ইত্যাদি একবচন।
বহুবচন : আমরা, তোমরা, আপনারা, তাঁহারা, ইহারা, যাহারা, কাহারা, এগুলো ইত্যাদি বহুবচন।
বিভক্তি বেদে পরিবর্তন : আমাকে, তোমাকে, তাহাকে, যাহাকে, উহাকে, আমার, তাহার, যাহার, সে, উহার ইত্যাদি।
সর্বনামের শ্রেণি বিভাগ :
১. ব্যক্তিবাচক বা পুরুষবাচক : আমি, তুমি, যে, তিনি, আমরা, তোমরা তারা, এরা, ওরা ইত্যাদি।
২. আত্মবাচক : আপনি, নিজ, নিজ, নিজে, যোদ, স্বয়ং ইত্যাদি।
৩. ব্যতিহারিক : আপনা আপনি, নিজে নিজে, আপসে, পরস্পর ইত্যাদি।
৪. সাকল্যবাচক : সকল, সমুদয়, সমূহ, অর্থাৎ ইত্যাদি।
৫. সামীণ্যবাচক : এ, এই, এরা, ইনি, ইনারা উনারা, এরা, ইহারা ইত্যাদি।
৬. অনির্দিষ্ট বাচক : কোনো, কিছু, কেহ, কেউ ইত্যাদি।
৭. দূরত্ববাচক : ঐসব, ওসব, উহা, উনি, ঐ ইত্যাদি।
৮. সংযোগবাচক : যারা, তারা, যে, যিনি।
৯. অন্যাদিবাচক : অপর, পর, অন্য ইত্যাদি।
১০. অনিশ্চয়বাচক যৌগিক সর্বনাম (ঈড়সঢ়ড়হহফ রহফরভরহরঃব ঢ়ৎড়হড়ঁহ) কেউ-না-কেউ, যে- কেউ, আর ক্,ে কে-ই-বা, অন্যকিছু, আর কিছু ইত্যাদি অনিশ্চয় বাচক সর্বনাম। যেমন-
এই দুঃসময়ে কেউ-না- কেউ তো থামবেই, এটাই মানবধর্ম।
এমন সহজ কাজ ‘যে- কেউ’ করতে পারবে।
আপনাদের সঙ্গে কি আর কেউ যাবে?
এই বৃষ্টি ভেজা অন্ধকার রাত কে-ই-বা’ আসবে?
তোমাকে কিছু টাকা দেওয়া হল, আর অন্য কিছু চেয়ো না।
তোমাকে একশত টাকা এবং কিছু খাবার দেওয়া হল ‘আর কিছু’ লাগবে?
এই দুদিনে ‘যা-কিছু’ পারেন দান করেন।
অসুখ-বিসুকে ‘যা-তা’ খাওয়া যায়?
সৈয়দ নিছার আলী তিতুমীর ‘যে-সে’ লোক ছিলেন না।
লতিফুর রহমান মাহেব যে কোনও’ দিন থামতে পারেন।
মাপেক্ষ সর্বনাম বা প্রতি নির্দেশক সর্বনাম :
যত-তত, যখন-তখন, যেখানে- সেখানে, যে- সে, যেমন- তেমন, যিনি তিনি, যার তার ইত্যাদি জোড়া সর্বনামগুলো একই শব্দে ব্যবহৃত হয়ে দুটো বাক্যের মধ্যে সংযোগ সাধন করে। এসব সর্বনামকে বরে সাপেক্ষ সর্বনাম বা প্রতিনির্দেশক সর্বনাম। যেমন-
যত চাও তত লড তরণী পরে।
যখন সমস্যা সৃষ্টি হবে, তখন দেয়া যাবে কি করা যায়। যখন ও গল্প করতে শুরু করতো, তখন কাউকে কথা বলার সুযোগ দিতো না।
যেই কথা সেই কাজ
যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়
এ অনুষ্ঠানে যিনি আসবেন তিনি একজন নাট্যকার।
এ দুর্বৃত্তদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই আটক করতে হবে। যেমন কর্ম তেমন ফল।
যে এখানে বেড়াতে আসবে সে আমার ছোট ভাই।
যার নুন খাব সারাজীবন নতার গুণ গাব
* সর্বনাম ও বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত ‘কী’ এর ব্যবহার সর্বনাম ও বিশেষণ পদ হিসেবে ব্যবহৃত ‘কী’ শব্দটির বানানে দীর্ঘ-ঈ- কার হয়। যেমন-
ক. তুমি এখন কী করছো? (কোন কাজ করছো)
খ. তুমি কী খাবে? (চা, কফি, না ভাত এরকম)
গ. তুমি এখন কী পড়ছ? (ইংরেজি, বাংলা, কিংবা অন্য বিষয়)
ঘ. শরীর সুস্থ রাখার সঠিক পন্থাটা কী? কোন পন্থা)
ঙ. তাঁর কাছে তোমার কী প্রয়োজন?
চ. কী গান আমি কী শুনাব আজি এ আনন্দ ধাসে।
ছ. আহা কী আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।
তবে অব্যয় পদ হিসেবে ব্যবহৃত ‘কি’ শব্দের বানানে সর্বদাই হ্রস্ব-ই-কার হয়। যেমন-
ক. তুমি কি এখন ভাত খাবে?
খ. তুমি আগামী কাল স্কুলে যাবে কি?
গ. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘চোখের বালি’ উপন্যাসটি পড়েছ কি?
১.৫॥ অব্যয় পদ (Invariants)
যে শব্দের কোনো ব্যয় বা পরিবর্তন হয় না অর্থাৎ বাক্যের সর্বত্র সবসময় অপরিবর্তিত থাকে থাকে এ সব পদকে অব্যয় বলে। অথবা যে সব শব্দ বা পদ বচনে- লিপে-বিভক্তিতে কোনো রকম পরিবর্তিত হয় না সে সব শব্দ বা পদকে অব্যয় পদ বলে। যথা- এবং, কিন্তু, অতচ, তবু, তথাপি, ও, আর, তাই, সুতরাং, অতএব, বরং, কিংবা, অথবা, নতুবা অন্যথা, নচেৎ, বা, না হয়, নয়তো, যদি, যদিও, ফলত, যেন, তো বটে ইত্যাদি। এসকল শব্দ বা পদ নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাক্যে ব্যবহৃত হয়।
দুটো বাক্য বা বাক্যাংশের মধ্যে সংযোগ সাধন করা এবং বাক্যের শোভা বর্ধন করা অব্যয়ের কাজ। এসব অব্যয় পদের মধ্যে কোন বিভক্তির চিহ্ন যুক্ত হয় না এবং এদের লিঙ্গান্তর কিংবা একবচন বা বহু বচন ও হয় না।
বাংলা ভাষায় তিন প্রকার অব্যয় শব্দ রয়েছে : ক. বাংলা অব্যয় খ. তৎসম ব্যয় (গ) বিদেশি অব্যয়।।
ক. বাংলা অব্যয় শব্দ : আর, আবার, ও, হা, না, কিন্তু, এবং সুতরাং, অতএব,
খ. তৎসম বা সংস্কৃত অব্যয় : সদা, যদি, যথা, হঠা, সহয় যদ্রপি, তথাপি, অর্থাৎ, দৈবাৎ, বরং, পুনশ্চ, বারংবার, বস্তু, আপাতত, ইত্যাদি।
গ. বিদেশি অব্যয় শব্দ : আলবত, বহুত, খুব, সাবাস, মহিরি, মারহাবা, থামা ইত্যাদি।
অব্যয়ের প্রকারভেদ : অব্যয় পদকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. সমুচ্চয়ী অব্যয় ২. পদান্বয়ী অব্যয় ৩. অনন্বয়ী অব্যয় ৪. অনুকার অব্যয়।
১. সমুচ্চয়া অব্যয় : যে অব্যয়পদ বাক্যস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্য একটি পদের অথবা একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সঙ্গে অপর একটি বাক্য বা বাক্যাংশের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায় তাকে সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে।
সমুচ্চয়ী অব্যয় তিন প্রকার। যথা ক. সংযোজন অব্যয় খ. বিয়োজন অব্যয় গ. সংকোচন অব্যয়।
সংযোজক অব্যয়গুলো হল : ও, এবং, আর, সুতরাং, তাই, তথা, অধিকন্তু ইত্যাদি।
উদাহরণ : লতিফ ভাই অত্যন্ত পরোপকারী একজন মানুষ, তাই সকলেই তাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে।
বিয়োজক অব্যয়গুলো হন : কিংবা, নতুবা, অথবা, অন্যথা, কিন্তু নচেৎ, না, বা, না-হয়, নয়, তো, কি- কি ইত্যাদি
যেমন-
ক. তিনি স্কুল কলেজে লেখাপড়া করেন নি। কিন্তু জ্ঞান অর্জন করেছেন নিরলসভাবে।
খ. ঢাকায় খুব সাবধানে চলবে, নতুবা যে কোনো মুহূর্তে বিপদে পড়তে পার।
গ. মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।
ঘ. কি উপন্যাস কি পাঠক সাহিত্যের উভয় শাখায় তিনি খ্যাতিমান।
ঙ. যথাসময়ে বাড়ি ভাড়া দিবেন নচেৎ বাড়ি ছেড়ে দিবেন। এখানে কিন্তু, নতুবা, কিংবা, কি কি, নচো অব্যয়গুলো দুটি বাক্যের বিয়োজন ঘটিয়েছে।
সংকোচক অব্যয় : সংকোচক অব্যয় পদগুলো হল : কিন্তু, অথচ, পরন্ত, বরং, তবু, তথাপি, বরঞ্চ, তবে ইত্যাদি।
সংকোচক অব্যয় বাক্যের অর্থকে সংকুচিত করে দেয়। যেমন-
ক. লোকটি উচ্চ শিক্ষিত অথচ ইতর প্রকৃতির।
খ. সে এমন একটা মারাত্মক অন্যায় করল তবু তার বিচার হল না।
এখানে অথচ, ও তবু অব্যয় পদ দুটো বাক্যের অর্থকে সংকুচিত করেছে।
২. পদান্বয়ী অব্যয় বা অনুসর্গ অব্যয় : বাংলা ভাষায় যে অব্যয় শব্দগুলো কখনও স্বাধীনভাবে পদরূপে, আবার কখনও শব্দ বিভক্তির ন্যায় বাক্যে ব্যবহৃত হয়ে বাক্যের অর্থ প্রকাশে সাহায্য করে, সেগুলোকে অনুযর্গ অব্যয় বা পদান্বয়ী অব্যয় বলে। যেমন- প্রতি, বিনট, ব্যতীত, দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে, চেয়ে ইত্যাদি।
উদাহরণ : মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন
ক. মন দিয়া কর সবে বিদ্যা উপার্জন
খ. আমার কর্তৃক এ কাজ হবে না সাধন
গ. কুকুর হতে সাবধান
ঘ. দুঃখ বিনা মুখ লাভ হয় কি সহীতেু?
৩. অনন্বয়ী অব্যয় : যে অব্যয় পদগুলো বাক্যের অন্তগর্ত অন্য পদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ বা অন্বয় না রেখে স্বাধীনভাবেহ প্রকাশ করে তাদের অনন্বয়ী অব্যয বলে। যেমন-সরি সরি, আলবত, নিশ্চয়ই, যখন, বেশতো, নাঃ, হায়, ছিঃ ইত্যাদি।
উদাহরণ :
ক. মরি মরি! কী চমৎকার সুন্দরী! (উচ্ছাস প্রকাশ)
খ. আলবত আমি যাব। (সম্মতি প্রকাশে)
গ. উঃ! মাথায় প্রচ- লেগেছে (যন্ত্রণা প্রকাশে)
ঘ. ছিঃ এমন একটি জঘন্য কাজ তুমি করলে! (ঘৃণা প্রকাশে)
ঙ. কি যন্ত্রণা! এত বিরক্ত করছে কেন লোকটা! (বিরক্তিসূচক)
চ. আপনি যা বলছেন তা সঠিকই হবে। (সমর্থনসূচক)
৪. অনুকার অব্যয় : বাংলা ভাষায় অনকরণে সৃষ্ট ব্যক্তি, বস্তু ও প্রাণীর ক্রিয়া ও অনুভূতি প্রকাশক অর্থহীন অথচ দ্যোতনা সৃষ্টিকারী কতকগুলো শব্দ পাওয়া যায়, এগুলোকে অনুকার অব্যয় বা ঋণাত্মক অব্যয় বলে। যেমন- ভনভন, কনকন, শনশন, শোঁ শোঁ, পতপত, শাঁশাঁ ইত্যাদি।
উদাহরণ :
ক. কেমন কনক কনে শতি পড়েছে।
খ. পতপত করে উড়ছে আমাদের জাতীয় পতাকা।
গ. শোঁ শোঁ করে বাতাস বয়ে চলেছে।
যোজক
যেসব শব্দ বা পদ একটি বাক্যের সঙ্গে অন্য একটি বাক্যের কিংবা বাক্যে অবস্থিত একটি পদের সঙ্গে অন্যপদের সংযোজন, বিয়োজন বা সংকোচন ঘটায়, তাদেরকে যোজক বা সমুচ্চয়ী অব্যয় বা সম্বন্ধবাচক অব্যয় বলে। যেমন- ‘ও’ ‘এবং’ যে, ‘আর’ ‘কিন্তু’, ‘সুতরাং ‘তবু’, তথাপি’, ‘অথবা, ‘নতুবা’, ‘তাই’, ‘অধিকন্তু’, কি, ‘যদি’, ‘যদি’, ‘কিংবা’, ‘অথচ’, ‘বরং’, ‘বরঞ্চ’ ইত্যাদি।
যোজক বা সমুচ্চয়ী অজয় নিম্নোক্তভাবে ব্যবহৃত হয়।
ক. সংযোজক অব্যয় : সংযোজক অব্যয়গুলো হলো : এবং, ও, আর, তাই, তথা, অধিকান্ত, সুতরাং।
বাক্যে প্রয়োগ : তিনি সৎ তাই সকলে তাকে সম্মান করে। করিম এবং কামাল খালাতো ভাই। জামাল আর আমি এক সাথে চলি।
খ. বিযোজক অব্যয় : বিয়োজক অব্যয়গুলো হলো : কিংবা, কিন্তু, বা, অথবা, নতুবা, নয়তো, ইত্যাদি।
বাক্যে প্রয়োগ : কামাল কিংবা জামাল এ দুজনের একজন তো অবশ্যই এ ঘটনার জন্য দায়ী। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু সফল হতে পারিনি।
গ. সংকোচক অব্যয় : সংকোচক অব্যয়গুলি হল- অথচ, তবু, তথাপি, বরং, বরঞ্চ ইত্যাদি
বাক্যে প্রয়োগ : তিনি জ্ঞানী, অথচ অসৎ ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তিনি বিদ্বান, অথচ তাঁর কোনো প্রকাশনা নেই। লোকটি খুব অভাবে আছে তবু সুযোগ পেয়েও চুরি করেনি।
ক্রিয়া-বিশেষণ
সংজ্ঞা : যে বিশেষণ পদ দ্বারা ক্রিয়ার বিশেষ অবস্থা বোঝায় তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। অথবা বিশেষণ পদ ক্রিয়া সংঘটনের ভাব কাল ও রূপ নির্দেশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বরে। যেমন- সে দ্রুত দৌড়াতে পারে। এখানে দ্রুত শব্দটি হচ্ছে ক্রিয়া বিশেষণ।
তেমনি তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো। মেয়েটি ভালো গায়। ভদ্রলোক আস্তে হাঁটে। তুমি হনহন করে কোথায় যাচ্ছ? উপরের বাক্যগুলোতে তাড়াতাড়ি এবং ভালো, আস্তে, হনহন, শব্দগুলো ক্রিয়া বিশেষণ।
বাক্যে নিম্নোক্ত উপায়ে ক্রিয়া-বিশেষণের ব্যবহার লক্ষ করা যায়
১. বিভক্তি চিহ্ন ব্যতিত ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন- জলদি এসো। ভালো বলেছ। একটি যদি পাই অমনি করে সাপুসসুপুস খাই। উপযুক্ত বাক্যে জলদি, ভালো, সাপুসসুপুস ক্রিয়া বিশেষণ।
২. বিভক্তি চিহ্ন যোগে ক্রিয়া-বিশেষণ। যেমন- তিনি সাইকেলে চড়ে বিশ্ব ভ্রমণ করলেন।
৩. অসামিকা ক্রিয়া যোগে ক্রিয়া বিশেষণ। যেমন- মিটমিট করে করিয়া ইয়া তারাগুলো জ্বলছে। লোকটি চেঁচিয়ে কথা বলে।
আবেগ শব্দ
যে সকল শব্দ বাক্যের অন্য পদের সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ না রেখে বিভিন্ন আবেগসূচক ভাব প্রকাশে ব্যবহৃত হয়, সেসকর সম্পর্কে আবেগ-শব্দ বলে। এসব শব্দকে অনন্বয়ী অব্যয় ও বলা হয়। এই আবেগ শব্দগুলি বাক্যের মূল সংগঠনের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। লক্ষ করা যায়, অনেক আভিধানিক শব্দও আবেগ শব্দ হয়ে প্রকাশিত হয়। যেমন- বাহ্! যার!, মরিমরি! কী রূপ মাধুরী!, উঃ!, পালা!, ছিঃ! ইত্যাদি।
ক্রিয়ারকাল (Tense)
ক্রিয়ার কাল : ক্রিয়া সম্পাদনের সময়কে ক্রিয়ার কাল বলে। অর্থাৎ সময়ে ক্রিয়া সংঘটিত বা সম্পাদিত হয় বা হয়েছিল বা হবে বা বর্তমানে হচ্ছে এ ধরনের সময়কেই ক্রিয়ার কাল বলে। যেমন- আমি যাই। তুমি গিয়েছিল। সে যাবে ইত্যাদি।
ক্রিয়ার কালের প্রকারভেদ : ক্রিয়ারকাল প্রধানত তিন প্রকার। যথা ১. বর্তমান কাল ২. অতীত কার ৩. ভবিষ্যৎ কাল।
এদের প্রতেকটি কালকে আবার কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে :
বর্তমান কাল : বর্তমান কাল চার প্রকার। যথা-
ক. সাধারণ বর্তমান বা নিত্যবত্ত বর্তমান
খ. ঘটমান বর্তমান
গ. পুরাঘটিত বর্তমান
ঘ. বর্তমান অনুজ্ঞা
২. অতীত কাল : অতীত কাল চার প্রকার। যথা-
ক. সাধারণ অতীত
খ. ঘটমান অতীত
গ. পুরাঘটিত অতীত
ঘ. নিত্যৎবৃত্ত অতীত
৩. ভবিষ্যৎ কাল : ভবিষ্যৎ কাল চার প্রকার যথা-
ক. সাধারণ ভবিষ্যৎ
খ. ঘটমান ভবিষ্যৎ
গ. পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
ঘ. ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা
১.১॥ বিভিন্ন প্রকার কালের পরিচয়
বর্তমানকাল :
ক. সাধারণ বর্তমান কাল : যে ক্রিয়া বর্তমানে সাধারণভাবে ঘটে তার কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলে। যেমন- তৃণা স্কুলে যায়। বর্ণ বই পড়ে। বৃষ্টি চিঠি লিখে।
নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল : যে ক্রিয়া সাধারণভাবে নিত্য বা সব সময় ঘটে অর্থাৎ ক্রিয়া সংঘটনে স্বাভাবিকতা বা অভ্যস্তা বোঝালে সাধারণ বর্তমানকালে ক্রিয়াকে নিত্যবৃত্ত বর্তমান কাল বলে। যেমন সকালে সূর্য উঠে। সন্ধ্যায় সূর্য অস্ত যায়। (স্বাভাবিকতা)
আমি প্রত্যহ সকালে চা খাই। (অভ্যস্ততা)
আমি রোজ বিকেলে হাঁটতে চাই। (মজস্ততা)
নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালের বিশিষ্ট প্রয়োগ :
ঐতিহাসিক বর্তমান কাল : ঐতিহাসিক বর্তমান কালে অতীত অর্থে বর্তমান। অতীত কালের কোন ঐতিহাসিক ঘটনার বর্ণনায় অনেক ক্ষেত্রে নিত্য বর্তমান কালের প্রয়োগ বা ব্যবহার হয়। এরূপ ক্ষেত্রে সাধারণ বতৃমান বা নিত্যবৃত্ত বর্তমান কালকে ঐতিহাসিক বর্তমান কাল বলে। যেমন- ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। ৫৭০ খ্রীষ্টাব্দে হযরত মোহাম্মদ (সা.) মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৪৮৬ খ্রীষ্টাব্দে নবদ্বীপে শ্রীচৈতন্য দেবের জন্ম হয়।
খ. ঘটমান বর্তমান : যে ক্রিয়ার কাল শেষ হয় নি, এখনো চলছে এরূপ ার্থ বোঝালে ঘটমান বর্তমান হয়। যেমন-
ছন্দা গান গাইছে।
রাফিন, রিজন বল খেলছে।
গ. পুরাঘটিত বর্তমান : যে ক্রিয়ার কার্য কিছুক্ষণ পূর্বে ঘটেছে, কিন্তু এর ফল বা প্রভাব এখনো বর্তমান, এরূপ অর্থে পুরাঘটিত বর্তমান কাল হয়। যেমন-
বৃষ্টি আমাদের বড়ই উপকার করেছে।
ঝড় আমাদের ভীষণ ক্ষতি করেছে।
ঘ. বর্তমান অনুজ্ঞা : বর্তমানে কোনো ক্রিয়া সম্পাদনের আদেশ, উপদেশ, আশীর্বাদ, অভিশাপ, অনুরোধ, প্রার্থনা প্রভৃতি বোঝানোর জন্য বর্তমান অনুজ্ঞা ব্যবহৃত হয়। যেমন-
সদা সত্য কথা বলো
আল্লাহ তোমাকে দীর্ঘজীবী করুন।
২. অতীতকালের চারটি রূপ :
ক. সাধারণ অতীত : যে ক্রিয়া সাধারণভাবে অতীতে অর্থাৎ বর্তমান কালের পূর্বে সংঘটিত হয়েছে, তার সংঘটন কালই সাধারণ অতীত কাল। যেমন- বিড়াল ইঁদুরটিকে ধরল। পুলিশ সন্ত্রাসী ছেলেটিকে মেরে ফেলল। বাতিটি নিভে গেল। লিটন চলে গেল ইত্যাদি।
খ. ঘটনাম অতীত : অতীতে কোনো চলছিলো এবং তখনো কাজটি শেষ হয় নি; এরূপ অর্থে ঘটমান অতীত ব্যবহৃত হয়। যেমন-কাল সন্ধ্যায় আমরা টেলিভিশনে খেলা দেখছিলাম। সকালে প্রচুর বৃষ্টি পড়ছিল।
গ. পুরাঘটিত অতীত : যে ক্রিয়া অতীতে ঘটেছে এবং এর প্রভাবও শেষ হয়ে গেছে, তার কালকে পুরাঘটিত অতীত কাল বলে। যেমন- দায়িত্বটি আমি পালন করেছিলা। প্রিন্সিপাল স্যার আমাদের বাড়ি গিয়েছিলেন। আমি ঐ কাজটি করেছিলাম।
ঘ. নিত্যবৃত্ত অতীত : অতীতকালে যে ক্রিয়া সাধারণভাবে এবং সচরাচর ঘটতো, তার কাল নিত্যবৃত্ত অতীতকাল। যেমন-
আমরা রোজ সকাল দশটায় ফেকালবি যেতাম।
প্রতিদিন বিকেলে আমরা শহীদ মিনারে আড্ডা দিতাম।
৩. ভবিষ্যৎকালের চারটি রূপ :
ক. সাধারণ ভবিষ্যৎ : যে কাজ হয়নি, ভবিষ্যতে হবে – এমন বুঝালে সাধারণ ভবিষ্যৎ কাল হয়। যেমন-
আমি ভাত খাব। ঐশী গান গেয়ে শোনাবে।
খ. ঘটমান ভবিষ্যৎ : যে ক্রিয়ার ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটতে থাকবে, আমি হাঁটতে থাকবো। তোমরা গান গাইতে থাকবে।
গ. পুরাঘটিত ভবিষ্য : ভবিষ্যৎকালে কোনো ক্রিয়া সংঘটিত হবে এবং শেষ হয়ে থাকবে, এরূপ বোঝালে সেটি পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ কাল বলে। যেমন-
আমি আপনার আশায় সংবাদটি পৌঁছে দিব।
আমার কথা হয়তো মনে পড়ে থাকবে।
ঘ. ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা : ভবিষ্যতে কোনো কাজ করা রজন্যে আদেশ, উপদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা ইত্যাদি বোঝালে ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা হয়। যেমন- ক্লাশে সবসময় মনোযোগ দেবে।
প্রত্যহ ভোরে ঘুম থেকে উঠবে।
১.২॥ পুরুষ ও কাল ভেদে ক্রিয়ার রূপের পরিবর্তন।
বাক্যে ব্যবহারের সময় পুরুষ ও কাল ভেদে ক্রিয়ার রূপের পরিবর্তন হয়। যেমন- বর্তমান কালে :
উত্তম পুরুষে – ‘করি’
মধ্য পুরুষে – ‘কর’
নাম পুরুষে- ‘করে’
অতীত কালে :
উত্তম পুরুষে- ‘করেছিলাম’
মধ্যম পুরুষে- ‘করেছিলেন’
নাম পুরুষে- ‘করেছিল’
ভবিষ্যৎ কালে :
উত্তম পুরুষে- ‘করব’
মধ্যম পুরুষে- ‘করবে’
নাম পুরুষে- ‘করবে’।