বাংলা বানানে দ্বিত্ব
ড. মোহাম্মদ আমীন
দ্বিত্ব কী যুক্তিপূর্ণ? অবশ্যই যুক্তপূর্ণ। যেমন : আল্লাহ্, দত্তক, লজ্জা, মজ্জা, আব্বা, আম্মা, বৃক্ক, বেখাপ্পা, আড্ডা, চট্টগ্রাম, জগদ্দল,

সত্তর, উচ্চারণ, আক্কেল, ইজ্জত প্রভৃতি। কিন্তু অভিন্ন ব্যঞ্জনের দ্বিত্বের উপর আবার রেফ কোনোভাবে, কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্য নয়।বাংলা বানানে এটি রীতিমতো হাস্যকর। তবে এক সময় এই অযৌক্তিক ও হাস্যকর কাজটিই করা হতো। বাংলায় সার্বিক বিবেচনায় এরকম দ্বিত্ব কোনোভাবে যৌক্তিক না হওয়ায় এবং উচ্চারণের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় আধুনিক পণ্ডিতগণ তা রহিত করে দিয়েছেন। অতএব ভুলেও আর কখনো বাংলা বানানে অভিন্ন ব্যঞ্জনের দিত্বে রেফ দেবেন না। যেমন : ধর্ম্ম, কর্ম্ম, চর্চ্চা, কার্ত্তিক প্রভৃতি বানান যেমন ভুল তেমনি অযৌক্তিক। লিখুন ধর্ম, কর্ম, চর্চা, কার্তিক প্রভৃতি। যদি কেউ এমন দ্বিত্ব লিখে থাকেন, তাহলে বুঝতে হবে ওটি ভুল বানান কিংবা প্রাচীন বাংলা।
প্রমিত বানান রীতি অনুযায়ী, তৎসম ও অ-তৎসম সকল শব্দে রেফের পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব রহিত। এর অর্থ একই ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্বের সঙ্গে রেফ হবে না। যেমন- অর্চ্চনা, গর্জ্জন, কর্জ্জ, কোর্ত্তা, মর্দ্দ, অর্জ্জন, মূর্চ্ছা, সূর্য্য, কার্য্য প্রভৃতি হবে না; হবে অর্চনা, গর্জন, কর্জ, কোর্তা, মর্দ, অর্জন, মূর্ছা, সূর্য, কার্য লিখুন।
শুভাশীষ চিরকল্যাণ পাত্র মহাশয়ের ভাষায় বলা যায়, “ব্যাকরণ মানে ছাগলের মতো ‘ব্যা’ করা নয়। ব্যাকরণ মানে সব কিছু করণের বিশেষ নিয়ম (ব্যাকরণ=বি+আ+কৃ+অন) বা নামরূপ দ্বারা জগতীবিকাশন। সোজা কথায় সব কিছু কেমন করে করতে হবে তার নিয়মই ব্যাকরণ।” অতএব অকারণে একই বর্ণে দ্বিত্ব দিয়ে ছাগলের মতো ‘ব্যা’ করা সমীচীন হবে না। এরূপ অপ্রয়োজনীয় দ্বিত্ব ভাষা ও বানানকে মেদবহুল শরীরের উৎকট এবং স্থবির করে দেয়। এইরূপ অপ্রয়োজনীয় মেদকে যত দূরে সরিয়ে রাখা যায় তত ভালো। আমরা মিতব্যয়ী হব বানানে। তাহলে ভাষা হবে সুন্দর, সাবলীল ও যুগোপযোগী।
কখনো অভিন্ন ব্যঞ্জনের দ্বিত্বে রেফ দেবেন না।
লিংক:
বাংলা ব্যাকরণ সমগ্র : ধাতু ও ধাতুগণ