বাংলা ভাষার উদ্ভব ও আর্য ভাষা

ভারতীয় আর্য ভাষা
আনুমানিক ১২০০ খ্রিষ্ট পূর্বাব্দে ভারতীয় আর্য ভাষার সৃষ্টি হয়। ভারতীয় আর্য ভাষার তিনটি স্তর ছিল। যথা- (১) প্রাশ্চাত্য বা ইরানিক শাখা, (২) মধ্যবর্তী বা দারদিক শাখা ও (৩) প্রাচ্য বা প্রাচীন ভারতীয় আর্য শাখা। প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার স্তরে (খ্রিষ্ট পূর্ব দ্বাদশ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত) বৈদিক ও সংস্কৃত ভাষা প্রচলিত ছিল। স্থানিক সমন্বয় এবং কথ্য প্রভাবের কারণে প্রাচীন ভারতীয় আর্য-ভাষা পরিবর্তিত হয়ে মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় (খ্রিষ্ট পূর্ব ষষ্ঠ শতক হতে খ্রিষ্টীয় দশম শতক পর্যন্ত) রূপান্তর ঘটে।
বাংলা ভাষার উদ্ভব
মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় পালি, প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ প্রচলিত ছিল। মধ্য-ভারতীয় আর্য ভাষা প্রথমে পালি ও পরে প্রাকৃত ভাষা নামে পরিচিহ্নিত হয়। অন্যদিকে অঞ্চল ভেদে প্রাকৃত ভাষা বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তৎমধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য শ্রেণি ছিল মাগধি প্রাকৃত। মাগধি প্রাকৃত এর প্রাচ্যতর রূপ ছিল গৌড় প্রাকৃত। এই গৌড় প্রাকৃত থেকে গৌড়ি অপভ্রংশের মাধ্যমে খ্রিস্টীয় সপ্তম শতকে বাংলা ভাষার উৎপত্তি ঘটে। কেউ কেউ বাংলা ভাষার উৎপত্তি খ্রিস্টীয় দশম শতক বলে উল্লেখ করে থাকেন। তবে অধিকাংশ গবেষকদের অভিমত, বাংলা ভাষার উৎপত্তি কাল খ্রিষ্টীয় সপ্তম বা ষষ্ঠ শতক।
বাংলা ভাষা
সংস্কৃত ভাষা থেকে নয়, পুর্বাঞ্চলের অপভ্রংশ রূপ বা গৌড় অপভ্রংশ হতে বাংলা ভাষার উৎপত্তি। বাংলা ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় মূল-ভাষা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত একটি স্বতন্ত্র ভাষা। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, আনুমানিক পাঁচ হাজার বছর পূর্বে মূল ভাষাটির অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। আড়াই হাজার খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থানিক পরিবর্তনের কারণে মূল ভাষা হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলো শাখা সৃষ্টি হয়। তম্মধ্যে আর্যশাখা অন্যতম।

Language
error: Content is protected !!