Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
বাংলা ভাষার নতুন শব্দ – Dr. Mohammed Amin

বাংলা ভাষার নতুন শব্দ

ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রাশাসনিক পরিভাষা কমিটির বাংলায় আত্তীকরণ করা কিছু শব্দ
যেসব বিদেশি শব্দ প্রশাসনিক পরিভাষায় সরাসরি ঢুকিয়ে বাংলায় আত্তীকরণ করা হয়েছে সেগুলো হলো : এডহক, অ্যাডমিরাল এজেন্সি, ব্যাংক ড্রাফট, ব্যাংক নোট, ব্যানার, বার কাউন্সিল, ব্যারিস্টার, ব্যাটেলিয়ান, ব্যাটারি, ব্যাটারি চার্জ, বিল, ব্রিফকেস, ব্রডব্যান্ড, বাজেট, ক্যাডেট, ক্যাডার, ক্যাডার সার্ভিস, ক্যাম্প, ক্যাপ্টেন, কপি, ক্যাশবই, সিনিয়র ক্যাম্প রেজিস্টার, ক্যাসেট, চার্টার অ্যাকাউন্টান্ট, চেক/ব্যাংক চেক, সিভিল, সিভিল সার্ভিস, সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট, ক্লিনিক, কোচিং সেন্টার, কমিশন এজেন্ট, কমনওয়েল্থ, কম্পাউন্ডার, কম্পিউটার, কনফারেন্স, কনস্টেবল, কনসাল, কনসাল অফিস, কন্টেইনার সার্ভিস, কর্পোরেশন, কালভার্ট, ডিজিটাল, ডিপ্লোমা, ডিভিশন বেঞ্চ, ই-মেইল, এস্টাব্লিসমেন্ট, ম্যানুয়াল, ইস্টেট, এক্সচেঞ্জ ফি, ফেলোসিপ ফাউন্ডেশন, গ্যালারি, গ্যারেজ, ব্রড গেজ, মিটার গেজ, গেজেট, গেজেটেড

গত ১৮ বছরে বাংলায় সরকারিভাবে দুই হাজার ৫০০ নতুন শব্দ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যার সবকটিই বিদেশি। মান বা প্রমিত বাংলার বাইরে অঞ্চলভেদে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নিত্যব্যবহৃত আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা থেকে একটি শব্দও নতুন সেই তালিকায় স্থান পায়নি। ভাষা বিশেষজ্ঞদের অভিম, অপ্রয়োজনীয় শব্দ আত্তীকরণ না-করা ভালো। বিদেশি শব্দকে গ্রহণ করতে হবে; কিন্তু দেখতে হবে সেই শব্দটি আমাদের জন্য কতটা জরুরি।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ (বাবাকো) প্রশাসনিক পরিভাষা তৈরি করে। ১৮ বছর পর বাবাকো নতুন করে প্রশাসনিক পরিভাষা প্রকাশ করেছে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে। এর আগে ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে প্রাশাসনিক পরিভাষা প্রকাশ করা হয়েছিল। নতুন পরিভাষা কোষটির প্রকাশনা বিষয়ক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‘অনেক নতুন শব্দ নতুন কলেবরে প্রশাসনিক পরিভাষায় অন্তর্ভুক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় প্রায় ২৫০০ নতুন শব্দ অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষ প্রশাসনিক পরিভাষা পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণ প্রকাশ করেছে।’

বিদেশি শব্দ প্রশাসনিক পরিভাষায় সরাসরি ঢুকিয়ে আত্তীকরণ করা শব্দ

অফিসার, গার্ল গাইড, গ্রেড, গার্ড ফাইল, হার্ডডিস্ক ইনবক্স, ইনস্টিটিউট, ইন্টারনেট, কিটবক্স, লেবেল, ল্যাপটপ লে-অফ, লে-আউট, লেভেল ক্রসিং, লাইসেন্স, লাইফ ভেস্টা, লাইন, লক আউট, মেসার্স, মেইলবক্স, মেইন ট্রেন, ম্যানহোল, মাস্টার রোল, মিটার, মিল, মিস্ড কল, মিশন, মিকচার, মোবাইল ফোন, মডেম, মানিঅর্ডার, মনিটর, মনোগ্রাম, মাদারবোর্ড, মাউস, নোটারি পাবলিক, নোট শিট, নোটিশ, অফিসিয়েলিং আউটবক্স, ওভারড্রাফট, প্যাকেট, প্যানেল, পার্শেল, পাসওয়ার্ড, পে-অর্ডার, পে-রোল, পে-স্লিপ, পারমিট, পেট্রোল, ফোন, ফটো, ফটোপ্রিন্ট, ফটোকপি, পিকেটিং প্লাকার্ড, প্লাস্ট, প্লাটফর্ম, প্লাটুন, পোর্টফোলিও, পোস্টাল অর্ডার পাওয়ার অব এটর্নি, প্রেসক্লিপিং, প্রেসকাটিং, প্রাইজবন্ড, প্রমিসরি নোট, প্রটোকল, রাডার, লটারি, রেস পুলিশ, র্যালি, রেকর্ড, রেফারি, রিমান্ড, রোটারি ক্লাব, রয়্যালটি, রবার স্ট্যাম্প, রানওয়ে, সেলুন, স্কেল, স্কল, সার্চ লাইট, সীট-বেল্ট, সেক্টর, সিনেট, সেপটিক ট্যাংক সার্ভিস, সার্ভিস চার্জ, সেটেলমেন্ট, শেয়ার সার্টিফিকেট, শেয়ার হোল্ডার, শুটিং, শর্ট সার্কিট, শো-রুম সাটস ট্রেন, স্লিপ প্যাড, স্লোগান, স্লুইস গেইট, সলিসিটর, স্পিড বোট, স্পাইরাল বাইন্ডিং, স্পন্সর, স্টেডিয়াম, স্ট্যাম্প, স্টেশন, স্ট্রং-রুম, সাব-পোস্ট অফিস, সাব-এজেন্সি, সিম্পোজিয়াম, সিন্ডিকেট, সিনথেটিক, ট্যাগ, ট্যানারি, টেলিগ্রাম মনিঅর্ডার, টেলিফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলেক্স, টেরেস্ট্রিয়াল, টেস্ট, টেস্ট রিলিফ, টাইমস্কেল, টিস্যু পেপার, টয়েলেট, ট্রেড-ইউনিয়ন. ট্রফি ট্রান্সফর্মার, ট্রলার, ট্রেজারি বিল, ট্রাইব্যুনাল, ট্রাংক কল, ট্রাস্ট, টাইফয়েড, ইউনিয়ন, ইউনিট, ভল্ট, ভাইস চেয়ারম্যান, ভিটামিন, ভোল্ট, ভাউচার, ওয়েবসাইট ইত্যাদি।

কিছু কিছু শব্দ ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমতো যেকোনটিই ব্যবহার করতে পারবে। যেমন ‘একটিং প্রেসিডেন্ট’-এর দুইটি বাংলা করা হয়েছে। ‘অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট’ ও ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি’। এ ধরনের আরো শব্দ রাখা হয়েছে। যেমন—মর্গ/শবাগার, বাসা/কোয়ার্টার, প্রতিবেদক/রিপোর্টার, সিদ্ধান্ত/রুলিং, সাইরেন/সংকেত বাঁশি, স্টক/মজুদ, এক্স-রে রিপোর্ট/রঞ্জন রশ্মি প্রতিবেদন, উড়োজাহাজ/বিমান, ব্যাংক জামানত/ ব্যাংক গ্যারান্টি, অঙ্গন/ ক্যাম্পাস, ক্যাপশন/ পরিচয়জ্ঞাপক বিবরণ, সার্টিফিকেট/ সনদ, ডেসপাচ/প্রেরণ করা, ডাউনপেমেন্ট/ক্রয়মূল্যের প্রাথমিক পরিশোধযোগ্য অংশ, এন্ট্রি ফি/প্রবেশ মূল্য, ইরেজার/মুছিয়া ফেলা, নিশ্চিহ্ন করা, দ্রুত টেলিগ্রাম/তারবার্তা, প্রধান কার্যালয়/প্রধান অফিস, হাইজ্যাক/ছিনতাই, হট লাইন/সরাসরি লাইন, হাইব্রিড/সংকর, জেলখানা/কারাগার, এজমালি/যৌথ ভূসম্পত্তি/জয়েন্ট ইস্টেট, জার্নাল/পত্রিকা ইত্যাদি। কিছু ইংরেজি-বাংলা মিলিয়ে শব্দ করা হয়েছে। যেমন—ব্যাংকের পাসবই, বাণিজ্যিক এজেন্ট, কাউন্টার বিলি, তলবী ড্রাফট, জরুরী ওয়ার্ড ইত্যাদি।

সাধারণ্যের মুখে বহুল প্রচলিত কিছু নতুন শব্দ
গত দুই বা তিন দশকে অনেক ইংরেজি শব্দ বাংলাভাষী মানুষের মুখে মুখে মিশেছে, যার প্রতিটির প্রচলিত বাংলা রয়েছে। যেমন—প্রফেসর (অধ্যাপক), হাই (সালাম/আদাব/নমস্কার), সরি (দুঃখিত), মর্নিং ওয়াক (সকালের ব্যায়াম বা হাঁটা), দাঁত ব্রাশ (দাঁত মাজা), বাথরুম (গোসলখানা), টয়লেট (পায়খানা), লাঞ্চ (দুপুরের খাবার), ডিনার (রাতের খাবার), কিচেন (রান্নাঘর), ড্রইং রুম (বৈঠক ঘর), বেডরুম (শোবার ঘর), ডাইনিং রুম (খাবার ঘর), টিচার (শিক্ষক), ক্লাস লেকচার (শ্রেণী বক্তৃতা), হোম ওয়ার্ক (বাড়ির কাজ), ক্লাশ ওয়ার্ক (শ্রেণীর কাজ), ক্লাশ রুম (শ্রেণী কক্ষ), ড্যাডি (বাবা), মাম (মা), আঙ্কেল (চাচা, মামা, খালু, ফুফু), আন্টি (চাচি, খালা, মামি, ফুফু), ফ্রেন্ড (বন্ধু), গেস্ট (অতিথি, মেহমান), ওকে (ঠিক আছে), থ্যাঙ্কস (ধন্যবাদ), প্লিজ (দয়া করে), ওয়েলকাম (স্বাগতম), প্রিন্ট মিডিয়া (সংবাদপত্র), জিকে (জেনারেল নোলেজ) ইত্যাদি।
অবজ্ঞা ও বিরক্তি প্রকাশে তরুণ-তরুণীরা নতুন নতুন শব্দযুগল ব্যবহার করছে। যেমন—মাঞ্জা মারা, হুদাই প্যাচাল, তেলবাজ, চালবাজ, পল্টিবাজ, কুফালাগা, গুষ্ঠি কিলাই, তারছিড়া, বেইল নাই, মাইনকাচিপা, আরে মামু, প্যাচগি মারে, সুইসাইড খামু, আল্টামডান, কইছে তরে, যাইগা বাদ দে, কঠিন চেহারা, ঠ্যাক দিছে ইত্যাদি।

তরুণ প্রজন্ম বিকৃত করে শব্দ উচ্চারণ করছে বেশি। শুধু আধুনিকতার দোহাই দিয়ে তারা এটা করছে। টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন, নাটক ও চলচ্চিত্রে বিশেষ করে বিকৃত ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। বিজ্ঞাপনের কথা যেমন—‘খাইলেই দিশ খোশ’, ‘এক্সট্রা খাতির’, ‘আবার জিগায়’ ইত্যাদি এখন তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে। কিছু নাটকের নাম এবং সংলাপে দেখা যাচ্ছে বিদেশি শব্দের ছড়াছড়ি। যেমন—ফার্স্ট ডেট, হাইজফুল, ছাইয়্যা ছাইয়্যা, লাভ ডট কম, সিটি বাস ইত্যাদি। নাটকের সংলাপে বলা হচ্ছে, মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে, ফাইস্যা গেছি মাইনকার চিপায়, ফিল্মি কথা বাদ দাও, এক্সটা খাতির নাই, ফিল্মি ডায়ালগ মারতাছ।
বাজে শব্দ বিকৃত বাক্য

বেসরকারি রেডিওগুলো বিকৃত বাক্য ও শব্দ ব্যবহার করে বাংলা ভাষাকে বিকৃতির চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। কথাবন্ধু (রেডিও জকি) নামে একটি চরিত্র তৈরি হয়েছে, যারা এই বিকৃতি করছে। এদের বাংলা উচ্চারণ ইংরেজির মতো। উদাহরণ—‘হ্যালো…ও…ও…ফ্রেন্ডস, কেমন আছ তোমরা? হোপ দিস উইকে তোমরা ম্যানি ম্যানি ফান করেছ, উইথ লটস অফ মিউজিক। অ্যনিওয়ে, এখন তোমাদের সাথে আছি কুল ফ্রেন্ড জারা অ্যান্ড আছে জোশ সব মিউজিক ট্রাক অ্যান্ড লটস আড্ডা, সো ফ্রেন্ডস ঝটপট জয়েন করে ফেলো আমাদের আড্ডায় এন্ড ফেবারিট গান শুনতে মোবাইলের ম্যাসেজ অপশনে গিয়ে লিখো….।’ অন্য এক ‘কথাবন্ধু’ বলছে, ‘ডিয়ার ফ্রেন্ডস এখন প্লে করছি ২১শে ফেব্রুয়ারির স্পেশাল ট্রাক—আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি… তো শুনতে থাকো আর এনজয় করো অ্যান্ড অফ কোর্স একুশের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করো।’


গবেষণা, প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন, মাতৃভাষা জ্ঞান, প্রাত্যহিক প্রয়োজন, শুদ্ধ বানান চর্চা এবং বিসিএস-সহ যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অতি প্রয়োজনীয় কয়েকটি লিংক :

শুবাচ লিংক

শুবাচ লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২