বাংলা ভাষার মজা : বাংলা বানান কৌতুকে কৌতুকে সয়লাব
ড. মোহাম্মদ আমীন
১.
সৎ-মানুষ, সৎ-লোক, সৎ-নেতা, সৎ-অফিসার প্রমুখ অনাত্মীয় হলে বেশ ভালো। কিন্তু আত্মীয় যদি ‘সৎ’ হয় তাহলে ভালো না, খুবই খারাপ। এজন্য সৎছেলে, সৎভাই, সৎমা, সৎমেয়ে, সৎপুত্র, সৎমামা, সৎচাচা খুব খারাপ।
কেন?
২.
সহযাত্রী, সহকারী, সহচরী, সহপাঠী, সহযাত্রা, সহপাঠ শব্দগুলো সহজে বলা যায় কিন্তু ‘সহবাস’ শুনলে অনেকের মাথা লজ্জায় চক্কর দিয়ে ওঠে। কত সহজে
বলা যায়, ‘তার সঙ্গে সহযাত্রা করছি’, কিন্তু ‘তার সঙ্গে সহবাস করছি’ বলা যাবে কি অত সহজে? যাবে না।

কেন?
৩.
সমতুল্য, সমমূল্য, সমকণ্ঠ, সমকাল, সমবয়সী শব্দগুলো অনায়াসে বলে ফেলি কিন্তু ‘সমকাম’ বলতে গলায় আপনাআপনি জিহ্বা আটকে যায়। “সমবয়স্করা সমকণ্ঠে গাইছে” বললে কেউ কিছু মনে করবে না কিন্তু যদি বলা হয়, ‘‘সমকামীরা সমকণ্ঠে গাইছে” তাহলে অনেকে ব্রীড়ানত হয়ে পড়বে।
কেন?
৪.
আত্মীয়ের মধ্যে শালাশালির চেয়ে মধুর সম্পর্ক আর হয় না। তারপরও কেউ শালাশালি হতে চায় না। রাস্তায় পথ চলতে চলতে যে কাউকে ভাই, বন্ধু, বাবা, চাচা, খালা, মা, নানি, দাদি সম্বোধন করতে পারেন কিন্তু যদি শালা কিংবা শালি ডাকেন, তাহলে আপনার গতিতে দুর্গতি আসবে নিশ্চিত।
কেন?
৫.
সেদিন একটা স্ট্যাটাসে লিখলাম, ব্রহ্মচর্য মানে ‘যৌনসংযম’। কয়েকজন শুবাচি
মন্তব্য কলামে লিখলেন, ব্রহ্মচর্য মানে ‘যৌনসংগম’ নয়।
আপনি ভুল লিখেছেন।
আমি তো এমন লিখিনি, ভালো করে দেখুন।
তারপর তারা লিখলেন, ভুল হয়ে গেছে, চোখ টের পায়নি।
কেন?
৬.
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থ্যাচার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মৌনসম্মতি প্রদান করেছেন।

লিখল, থ্যাচার রুদ্ধদ্বার বৈঠকে
যৌনসম্মতি প্রদান করছেন। এমন ভুল অনেকের হয়।
কেন?
৭.
নদীতে এক হাজার ‘কুলি’ ফেলুন, কোনো অসুবিধা নেই। এজন্য কোনো মামলায় পড়তে হবে না। তওবাও করতে হবে না। কিন্তু কখনো যদি একটা ‘কুলি’ নদীতে ফেলে দেন, তাহলে মামলায় পড়তে হবে। প্রথম ‘কুলি’ মানে কুলকুচা এবং দ্বিতীয় ‘কুলি’ মানে মজুর। দুটোই কুলি কিন্তু অর্থে বিশাল পার্থক্য।
কেন?
৮.
চূত শব্দের অর্থ আম। চূত মা রানি আর খাব না” বাক্যের অর্থ মা রানি আমি আর আম খাব না। আম না-খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করা দূষণীয় কিছু নয়। কিন্তু আপনি যখন কাউকে চূত মা রানি বলবেন, তখন আপনি সহজে নিস্তার পাবেন বলে মনে হয় না। এটি মারাত্মক অশ্লীল গালি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এবং গালি হিসেবে ব্যবহারও হচ্ছে অহরহ।
কেন?
৯.
দুই বোনের বিয়ে হয়েছে একই বাড়িতে। বিয়ে করেছে একই বাপের দুই ছেলে। বড়ো বোনেকে বড়ো ছেলে এবং ছোটো বো্নকে ছোটো ছেলে। বড়ো বোন সপ্তাহ খানেকের জন্য বাবার বাড়ি বেড়াতে গেছে। এক বিকেলে ছোট বোনকে ফোন করে বলল, তোমার দুলাভাই এবং ছেলেমেয়ে কী করছে?
তুমি লাইনে থাক, আমি দেখে আসছি বলে ছোটো বোন বড়ো বোনের স্বামীর কক্ষে গিয়ে দেখেন, তিনি তার ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুমোচ্ছেন।
ছোটো বোন ফোনের রিসিভারে মুখ রেখে বলল, দুলাভাই মেয়েছেলে নিয়ে ঘুমাচ্ছে।
কী! এত অধঃপতন তার? আমি আসছি, জবাই করে দেব।
কেন?
১০
“পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছয়জন বয় স্কাউট পশ্চিম পাকিস্তানে যাচ্ছে”, গভীর রাতে পত্রিকা ছাপার পূর্ব-মুহূর্তে কবি আবদুস সাত্তার শিরোনামটি নিজ হাতে ঠিক করে দিয়ে বাসায় চলে গেলেন। কম্পোজিটর ভাবলেন সাত্তার সাহেব ভুল করে এমন শিরোনাম লিখেছেন। তিনি ‘সংশোধন’ করে দিলেন । পরদিন পত্রিকায় ছাপা হলো, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ছয়জন বয়স্কা উট পশ্চিম পাকিস্তানে যাচ্ছে”। সাত্তার সাহেব কম্পোজিটরকে ডেকে বললেন, ভুল করেছেন কেন?
উত্তর নেই।
১১.
সহকর্মী বললাম খুশি হলে। সহকারী, সহগামী, সহচারী, সহধর্মিণী, সহধর্মী, সহপাঠী, সহমর্মী, সহযাত্রী এমনকি সহ-অবস্থান পর্যন্ত বলে গেলাম, রাগলে না— শুধু সহবাস বলাতে লজ্জায় রেগে একদম চেরি ফুল। আমাকে বলো তো— কেবল ‘বাস’টা কী দোষটা করল ‘সহ’-এর সঙ্গে মিলে?
দোষ ‘বাস’-এর নয়।
কার?
বলতাম না।
বলো-না গো, দোষটা কার?
বাস’ এর আগে যেটা বসেবাসটাকে ঠেলছিল তার।
১২
হায়রে আমার ক্ষেত, হারিয়ে গেলি তুই,
এখন আমার কষ্ট অনেক, হচ্ছে খেতে ভুঁই।
একাডেমির ভারি মজা যা-ইচ্ছে-তাই করে
হতভাগা বাঙালিরা ক্ষেত হারিয়ে মরে।
এমন কষ্টকর গান কেন করছ খোকা? বাবাকে কি বকা দিয়েছে?
না।
তো কাঁদছ কেন?
বাবা শুধু খেতে যায়, ক্ষেতে যায় না।
কেন?
এখন ক্ষেতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলা একাডেমি নাকি সব ক্ষেত নষ্ট করে দিয়েছে। অভিধানেও রাখেনি। তাই সবাই শুধু খেতে যায়। এত খেতে যাচ্ছে বলে খেতে খেতে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।
তাই তো বলি— খাদ্যশস্য আর শাক-সব্জির দাম এত বেড়ে যাচ্ছে কেন।
আগে যেটা ক্ষেত ছিল, এখন তার বানান খেত।
১৩
শালা শব্দের উত্তম প্রয়োগ
শালার— শুবাচ এমন একটা গোষ্ঠী, একটা শব্দের বানানে তিলবৎ ভুল হলে শতশত পলি মেধামুগ্ধ চোখে তরোয়ালের মতো ধারালো কলম নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ভুল লিখতেও যদি ভূল না-কারতে পারি— তাহলে আমি করব-টা কী?
এখানেও কিন্তু ভুল আছে।
কয়টি?