বাংলা ভাষার মজা
ড. মোহাম্মদ আমীন
বিধবা
বিধ্ব+আ= বিধবা। বাংলা ভাষায় ‘বিধবা’ একটি আশ্চর্যজনক শব্দ। বৈয়াকরণ জ্যোতিভূষণ চাকী তাঁর ‘বাগর্থ কৌতুক’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩, চতুর্থ মুদ্রণ, জানুয়ারি ২০১৩) লিখেছেন, “এটি (বিধবা) আদৌ কোনো স্ত্রীবাচক শব্দ নয়। শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ — ‘যার কোন পুরুষ বন্ধু নেই।” অর্থাৎ, যার কোনো পুরুষ বন্ধু নেই— নর হোক বা নারী হোক সেই বিধবা। সে হিসেবে, কোনো পুরুষ লোকের যদি কোনো পুরুষ বন্ধু না-থাকে তাহলে তাকে বিধবা বলা যায়। বস্তুত পুরুষ বন্ধুহীন মানুষকে নির্দেশ করার জন্যই ‘বিধবা’ শব্দটির জন্ম হয়েছিল।
শব্দের জন্মোদ্দেশ্য অনেক সময় নানা কারণে পরিবর্তন হয়ে যায়। বিধবার ভাগ্যেও এমন পরিবর্তন ঘটেছে। পুরুষের পুরুষ বন্ধু থাকবে না—এমন ঘটনা বর্তমান কালের মতো আগেও ছিল বিরল। তাই শব্দটির ওই অর্থে ব্যবহার ক্রমশ কমে আসতে থাকে। ফলে ‘বিধবা’ নিশ্চিহ্ন হওয়ার প্রান্তে চলে যায়। এমন একটি সুন্দর শব্দকে মৃত্যু হতে বাঁচানোর জন্য বৈয়াকরণগণ বিধবা শব্দের নতুন অর্থ নির্ধারণ করার চেষ্টা করলেন। তারা দেখলেন— পুরুষ মানুষের পুরুষ বন্ধু না-থাকার ঘটনা বিরল, কিন্তু নারী মানুষের পুরুষ বন্ধু না-থাকার ঘটনা প্রচুর। অর্থাৎ পুরুষ বন্ধুহীনের ঘটনা সাধারণত নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং পুরুষের ক্ষেত্রে তা একটি ব্যতিক্রম।
তাই ‘বিধবা’ শব্দটির ব্যবহার কেবল নারীদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। এজন্য শব্দটি উভয়লিঙ্গের ধারক হয়েও পরে সামাজিক কারণে পুরুষত্ব হারিয়ে সম্পূর্ণ নারীত্ব অর্জন করে নেয়। তখন, আসলেই নারীর কোনো পুরুষ বন্ধু থাকত না, পুরুষ বন্ধু বলতে কেবল স্বামীই থাকত বা তাকেই নারীর একমাত্র পুরুষ বন্ধু গণ্য করা হতো। তাই স্বামীহীন হলে নারীদের পুরুষ বন্ধুহীন ধরে নিয়ে বিধবা ডাকা শুরু হয়ে যায়। ফলে বিধবা শব্দের অর্থ হয়ে গেল— বিশেষ্যে যে নারীর স্বামী মৃত এবং বিশেষণে পতিহীনা।আসলে ‘বিধবা’ শব্দের অর্থ ব্যুৎপত্তিগত অর্থ — পুরুষ বন্ধুহীন নারী।
বাংলা ভাষার প্রশস্তি গেয়ে রচিত প্রথম কবিতা
বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.