বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস: সুরা, লেজেগোবরে, সাতসমুদ্র, বিরাশি সিক্কার চড়

ড. মোহাম্মদ আমীন

সুরা:  সুরা একজন দেবী। ভারতীয় পুরাণমতে, সমুদ্র মন্থন হতে ‘সুরা’ দেবীর উদ্ভব। সুরা দেবী তাঁকে গ্রহণের মিনতি নিয়ে দেব ও দানবগণের কাছে যান। দানবগণ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন কিন্তু দেবগণ তাঁকে সাদরে গ্রহণ করেন। সুরাগ্রাহী নন বলে দানবরা ‘অসুর’ নামে অভিহিত হন।

লেজেগোবরে:  ‘লেজেগোবরে’ শব্দটির অর্থ নাকাল বা নাজেহাল। সাংঘাতিক বিপাকে পড়লে মানুষের ‘লেজেগোবরে’ অবস্থা হয়। আবার আকস্মিক ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হলেও মানুষ তার অবস্থাকে ‘লেজেগোবরে’ করে ফেলে। ‘লেজেগোবরে’ বাগ্‌ভঙ্গিটি এসেছে ভয়ে ভীত গোরুর নিরুপায় আচরণ থেকে। গোরু ভীষণ ভয় পেয়ে গেলে লেজ না-তুলেই গোবর ত্যাগ করে দেয়ে। ফলে মাছি-তাড়ানোর নান্দনিক লেজটি গোবরে গোবরে জবজবে তেলেভাজা ভেজিটেবল রোলের মতো হয়ে যায়। এই গোবরমাখা লেজের তখন যে অবস্থা হয় সেটাই ‘লেজেগোবরে’। গোরুর এই গোবর-মাখা লেজ থেকে লেজেগোবরে শব্দের উদ্ভব।
সাতসমুদ্র: ভারতীয় পুরাণে পৃথিবীর সমুদয় সমুদ্রকে সাতটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই সাতটি সমুদ্র হচ্ছে: লবণ, ইক্ষু, সুরা, সর্পি, দধি, দুগ্ধ, জল। এ সমুদ্রগুলি একত্রে ‘সপ্তসমুদ্র’ বা সাতসমুদ্র নামে পরিচিত।

বিরাশি সিক্কার চড়: সিক্কা মানে মুদ্রা, বাদশাহি আমল এবং পরবর্তীকালে কোম্পানি আমলের মুদ্রাও ‘সিক্কা’ নামে পরিচিত ছিল। ছোটবেলায় এক টাকার সেই অচল রৌপ্যমুদ্রা দিয়ে স্বর্ণকাররা এক তোলা অলঙ্কার মাপতে দেখেছি। আশি (৮০) তোলায় সের হতো। বিরাশি (৮২) তোলায় হতো ‘পাক্কা সের বা পাকি সের।’ এর চেয়ে পাক্কা ও ভারী একক আর ছিল না। এটাকে বলা হতো বিরাশি সিক্কা। চপেটাঘাতকারী হাতের ৮২ তোলা শক্তি; মানে পুরো শক্তি প্রয়োগ করে যে চড় মারে তা-ই ‘বিরাশি সিক্কার চড়’।

সূত্র: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমনি, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।
Language
error: Content is protected !!