ড. মোহাম্মদ আমীন, বিসিএস (প্রশাসন), দশম ব্যাচ
মানবীয় আখ্যায়িকা ধারার প্রবর্তক: মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য যখন দেবদেবীর মাহাত্ম্য কীর্তনে সয়লাব তখন আরাকানের বৌদ্ধ রাজাদের সভায় বাংলা সাহিত্যচর্চার ব্যতিক্রমী নিদর্শন হিসেবে কবি দৌলত কাজী একটি নব ধারার সূচনা করেন। তিনি থিরি থুধর্ম্মা বা শ্রী সুধর্মার (১৬২২-১৬৩৮ খ্রি.) শাসনামলে লস্কর উজির বা সমরসচিব আশরাফ খানের অনুরোধে হিন্দি কবি সাধনের ‘মৈনাসত’ কাব্যের ভাবানুবাদ অবলম্বনে ‘সতীময়না ও লোরচন্দ্রানী’ কাব্য রচনা করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মানবীয় আখ্যায়িকা ধারার প্রবর্তন করেন।
মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি: কবি চন্দ্রাবতী মধ্যযুগের প্রথম মহিলা কবি। তিনি ছিলেন চিরকুমারী। ‘দস্যু কেনারাম‘ চন্দ্রাবতীর একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ঐতিহাসিক: সম্রাট হুমায়ুনের ভগ্নী গুলবদন উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ঐতিহাসিক। তিনি তাঁর ভাই সম্রাট হুমায়ুনের রাজত্বকালের ইতিহাস লিখে উপমহাদেশের প্রথম মহিলা ঐতিহাসিক হিসাবে খ্যাত হয়ে আছেন।
পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক: সৈয়দ হামজা পুঁথি সাহিত্যের প্রাচীনতম লেখক। মধ্যযুগের শেষদিকে পুঁথি সাহিত্য রচিত হয়। তাঁর জন্ম ১৭৩৩ খ্রিষ্টাব্দে। মধুমালতি, আমির হামজা (২য় খণ্ড) জৈগুনের পুঁথি ও হাতেমতাই সৈয়দ হামজার বিখ্যাত পুঁথি গ্রন্থ।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম যথার্থ ট্রাজেডি: ফারসি কবি জামির রচিত ‘লায়লী মজনু’ নামক কাব্যের ভাবানুবাদ অবলম্বনে দৌলত উজির বাহরাম খান ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ‘লায়লী মজনু’ নামক যে কাব্যটি রচনা করেন সেটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম যথার্থ ট্রাজেডি হিসেবে স্বীকৃত। এরপূর্বে বাংলা সাহিত্যে কোন যথার্থ ট্রাজেডি ছিল না।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম অলৌকিকতা-মুক্ত গ্রন্থ: ফারসি কবি জামীর ‘লায়লী মজনু’ নামক কাব্যের ভাবানুবাদ অবলম্বনে দৌলত উজির বাহরাম খান কর্তৃক ১৫৬০ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১৫৭৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রচিত বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ ‘লায়লী মজনু’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম অলৌকিকতা বিবরণ মুক্ত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত।
প্রাচীনতম লোকসাহিত্য ও প্রাচীনতম ছন্দ : লোকসাহিত্যের প্রাচীনতম সৃষ্টি ‘ছড়া’। বাংলা সাহিত্যে যত প্রকার লোকসাহিত্য আছে তম্মধ্যে ‘ছড়া’ প্রাচীনতম। ছড়ার ছন্দ বাংলা কবিতার প্রাচীনতম ছন্দ। ছড়ার পূর্বে বাংলা সাহিত্যে অন্য কোন ছন্দ ছিল না। তাই ছড়াকে বাংলা লোকসাহিত্যের উৎস বলা হয়।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম মৌলিক-কাব্য: শ্রী সুধর্মা (রাজত্বকাল ১৬২২-১৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দ) এর শাসনামলে কবি মরদন (অনুমান ১৬০০-১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দ) রচিত ‘নসীরনামা’ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম মৌলিক-কাব্য। সে হিসেবে কবি মরদনকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মৌলিক কবি বলা যায়।
মধ্যযুগের প্রথম মৌলিক কাব্য: চট্টগ্রামের কবি দৌলত কাজীর ‘সতী ময়না ও লোর চন্দ্রানী’ কাব্য গ্রন্থকে মধ্যযুগের প্রথম মৌলিক কাব্য বলা হয়।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম জঙ্গনামা বা যুদ্ধকাব্য
জঙ্গনামা বা যুদ্ধকাব্য সংক্রান্ত্র সাহিত্য সৃষ্টির বিষয়ে মধ্যযুগের মুসলিম কবিগণ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এর পূর্বে অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের লেখায় জঙ্গনামা জাতীয় কোনো ধারণা প্রকাশ পায়নি। পনের শতকে রচিত জৈনুদ্দিনের ‘রসুল বিজয়’ মধ্যযুগের প্রথম জঙ্গনামা বা যুদ্ধকাব্য। অতএব, জৈনুদ্দিনের ‘রসুল বিজয়’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম যুদ্ধকাব্য।