ড. মোহাম্মদ আমীন
অন্নদামঙ্গল কাব্যের (১৭৫২ খ্রি.) প্রধান চরিত্র ‘ঈশ্বরী পাটনী’র “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।” কথাটি বাংলা সাহিত্যে প্রতিটি বাঙালি পিতা-মাতার চিরন্তন প্রার্থনা-বাণী হিসেবে খ্যাত।

১. জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী (জননী ও জন্মভূমি স্বর্গ হতেও শ্রেষ্ঠ)।
২. আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।
৩. নগর পুড়িলে কি দেবালয় এড়ায়।
৪. মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।
৫. বড়র পিরীতি বালির বাঁধ/ ক্ষণে হাতে দড়ি ক্ষণেকে চাঁদ।
৬. অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ/ কোন গুণ নাহি তার কপালে আগুণ।
৭. অনেকের পতি তেঁই পতি মোর বাম। ৮. না রবে প্রাসাদ গুণ না হবে রসাল/ অতএব কহি ভাষা যাবনী মিশাল।
৯. কড়িতে বাঘের দুধ মেলে।
অষ্টাদশ শতকের শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি ভারতচন্দ্র রায় (১৭১২ – ১৭৬০ খ্রি.) অষ্টাদশ শতকের সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ ‘অন্নদামঙ্গল’-এর রচয়িতা। যা সাধারণ্যে অন্নদামঙ্গল কাব্য নামে পরিচিত।
অন্নদামঙ্গল কাব্যে যে দেবীর গুণকীর্তন করা হয়েছে তাঁর নাম অন্নপূর্ণা। নবদ্বীপের (বর্তমান নদীয়া) রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় বাংলা অঞ্চলে সর্বপ্রথম অন্নপূর্ণা

দেবীর পূজা প্রথা প্রচলন করেন। সেই পূজা-অর্চনা উপলক্ষ্যে রাজার আদেশে ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে ভারতচন্দ্র অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনা করেন। অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনার স্বীকৃতিস্বরূপরাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর সভাকবি ভারতচন্দ্র রায়কে ‘রায়গুণাকর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।অন্নদামঙ্গল কাব্য তিনটি খণ্ড নিয়ে গঠিত। এগুলি হল – ১. অন্নদামঙ্গল , ২. কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর কাব্য এবং ৩. মানসিংহ।
১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে মুদ্রাঙ্কিত অর্থাৎ প্রেসে ছাপা প্রথম বাংলা বই প্রকাশিত হয়। ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় ‘অন্নদামঙ্গল’।এটি বাংলা ভাষার প্রথম সচিত্র গ্রন্থ। বাঙালি শিল্পীদের আঁকা ৬টি ছবি এই গ্রন্থের সচিত্রকরণে ব্যবহৃত হয়েছিল। রায়গুণাকর ভারতচন্দ্র রায় ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সমাপ্তি ঘটে।
[আগুণ>আগুন]
——————————————-
শুবাচ গ্রুপের লিংক: www.draminbd.com
— — — — — — — — — — — — — — — — — — —
— — — — — — — — — — — — — — — — — — —
১. ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পবলিকেশন্স লি.
২. বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.