বার্বাডোস (Barbados ) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)

ড. মোহাম্মদ আমীন

বার্বাডোস (Barbados )

আদিবাসী আরাওয়াকান (Arawakan) ভাষী একটি উপজাতির তথ্যগ্রন্থ হতে জানা যায়, বার্বোডাস এর প্রাচীন নাম ছিল

প্রকাশক: পুথিনিলয়। উত্তর আমেরিক।

ইচিরুগানিয়াম (Ichirouganaim)। এর ইংরেজি অর্থ রাঙ্গা মাটির সাদা দাঁত (Red land with white teeth) অথবা বাহিরে সাদা দন্তখচিত লাল পাথরের দ্বীপ অথবা দাঁত (Redstone island with teeth outside) বা প্রবাল প্রাচীর (reefs)। ভূখণ্ডটিতে প্রচুর লাল মাটি বা লাল পথর ছিল, যার চারিদিকে ছিল দাঁতের ন্যায় প্রচুর সাদা মাটি। মূলত এগুলো ছিল প্রবাল প্রাচীর। তাই এলাকাটি উপজাতীয়দের নিকট ইচিরুগানিয়াম নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে নামটি পরিবর্তিত হয়ে বার্বাডোস ধারণ করে।

 কেন এ পরিবর্তন তা নিয়ে অনেক প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে। তবে তথ্যভিত্তিক কোনো বিবরণ এখনও পাওয়া যায়নি। অনেকে মনে করেন, বার্বাডোস পর্তুগিজ শব্দ। এর অর্থ ব্রাজিলের পথে। পর্তুগিজরা ব্রাজিলে  আসার পথে আলোচ্য ভূখণ্ডটি দেখতে পান। কিন্তু এখানে আসার বা এমন একটি ভূখণ্ড খুঁজে পাওয়ার কোনো প্রত্যাশা তাদের ছিল না। পথে অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া গিয়েছে। তাই এর নাম হয় বার্বাডোস বা ব্রাজিলের পথে।

 অনেকে মনে করেন, পর্তুগিজ শব্দ লাস বারবাডাস (Las Barbadas) হতে বারবাডোস নামের উৎপত্তি। এর অর্থ দাড়িওয়ালা বা শ্মশ্রুবেশী একজন (Bearded ones)। ১৫১৯ খ্রিস্টাব্দে বারবোডাস নামটি সর্বসাধারণ্যে দলিল হিসেবে প্রচারিত হয়। কথিত হয়, দ্বীপের ডুমুর বৃক্ষ (fig tree) হতে নামটির উৎপত্তি। দ্বীপের ডুমুর গাছ এমনভাবে প্রকৃতিকে আবিষ্ট করে রাখত যে, দেখলে মনে

প্রকাশক: পুথিনিলয়। ওশেনিয়া ও অ্যান্টার্কটিকা।

হত কোন শ্মশ্রুধারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে। আবার অনেকে মনে করেন, জনপদটির আদিম কারবিস (Caribs) অধিবাসীরা লম্বা দাঁড়ি রাখতো। তাদের দাঁড়ি ছিল যেমন ঘন তেমনি আকর্ষণীয়। তাই আদিবাসীর দাঁড়ি বা বারবাডাস হতে জনপদটির নাম হয় বারবাডোস। প্রবাদ যেটিই সত্য হোক না কেন, দাঁড়ি হতে যে বারবোডাস নামের উৎপত্তি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

আবার কেউ কেউ বলেন দেশটির সমুদ্রের ঢেউয়ে প্রবাল প্রাচীর সাদা সামুদ্রিক ফেনায় অপূর্ব হয়ে উঠতো। মনে হতো, যা দেখলে মনে হতো সাদা শশ্রুমণ্ডিত কোনো লোক। কোন উইরোপীয়ান প্রথম এ দেশে এসেছেন, সে নিয়ে গ্রহণযোগ্য কোনো তথ্য নেই। তবে অনেক মনে করেন,  স্পেনিশরাই প্রথম এখানে আগমন করেন। আবার অনেকের মতে, ব্রাজিলে যাবার পথে পর্তুগিজরাই প্রথমে এখানে এসেছিলেন। আর একটি তথ্যমতে, বাহামার ডাকনাম বিম(Bim) বা বিমসাইর( Bimshire)। এর উৎস অনিশ্চিত হলেও অনেকে তথ্যটি দিয়ে থাকেন। ন্যাশনাল কালচারাল ফাউন্ডেশন অব বারবাডোস এর একটি ব্যাখ্যা হতে জানা যায়, বিম  এমন একটি শব্দ, যা ক্রীতদাসদের মুখে শোনা যেত এবং শব্দটি ইগবো (Igbo ) ভাষার শব্দ বি মু (be mu  ) হতে উদ্ভুদ। যার অর্থ আমার বাড়ি, আত্মীয়-স্বজন, দয়ালু প্রভৃতি।

বার্বাডোসের মোট আয়তন ৪৩৯ বর্গকিলোমিটার বা ১৬৬ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ নগণ্য।২০১০ খ্রিস্টাব্দের জপির অনুযায়ী দেশটির মোট জনসংখ্যা ২,৭৭,৮২১ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব ৬৬০/বর্গমাইল।  ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, জিডিপি (পিপিপি) ৭.০৫৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৬,০১৫ ইউএস ডলার। অন্যদিকে জিডিপি (নমিনাল) ৪.৪৯০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ১৬,১৫১ ইউএস ডলার। আয়তন বিবেচনায় বার্বাডোস পৃথিবীর ২০০-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু মোট জনসংখ্যা বিবেচনায় এর স্থান ১৮১। অন্যদিকে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ১৫-তম জনবহুল দেশ। বার্বাডিয়ান ডলার এর মুদ্রা কিন্তু মার্কিন ইউএস ডলার ব্যাপকভাবে চালু আছে।

জনসংখ্যার মধ্যে ৯২.৪% কৃষ্ণ, ৩.১% মিশ্রবর্ণ, ২.৭% হোয়াইট, ১.৩%পূর্ব-ইণ্ডিয়ান এবং ০.৪% অন্যান্য। ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ৭৪.৪% খ্রিস্টান, ৪.৮% অন্য্যা এবং ২০.৮ ভাগ অনির্ধারিত। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ নভেম্বর দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। রাজধানী ব্রিজটাউন। বার্বাডোসের সর্বোচ্চ পাহাড়ের উচ্চত ১,১০০ ফু। যা ২৭২০ ফুট উঁচু পথিবীর সর্বোচ্চ ভবন বরুজ খালিফার অর্ধেকেরও কম।

বারবাডোস প্রতিবছর ৫৭ মিলিয়ন রাম সরবরাহ করে। বারবাডোসের হোলটাউন (Holetown) নামক স্থানে প্রথম ইউরোপীয়

প্রকাশক: পুথিনিলয়। ইউরোপ

অভিবাসী অবতরণ করেন। জায়গাটির প্রকৃত নাম ছিল জেমসটাউন। রাজা প্রথম জেমস এর নামানুসারে নামটি রাখা হয়েছিল।  বারবাডেসের রাজধানী ব্রিজটাউনের প্রাচীন নাম ছিল ইন্ডিয়ান ব্রিজ। ইন্ডিয়ানেরা এ ব্রিজ নির্মাণ করেছিল। তাই নাম রাখা হয় ইন্ডিয়ান। ১৬৫৪ খ্রিস্টাব্দে নামটি পরিবর্তন করে ব্রিজটাউন রাখা হয়।  বারবাডোসের প্রথম দাস ছিল  হোয়াইট। তাদের ইন্ডেনটিউরড সার্ভেন্সট (Indentured Servants) বা চুক্তিভিত্তিক ভৃত্য বলা হতো। রাজার বিরাগভাজন হলে শাস্তিস্বরূপ অনেককে এখানে চাকর হিসাবে পাঠিে দেওয়া হতো। বারবাডোসে রয়েছে কমনওয়েলথ দেশসমূহের মধ্যে তৃতীয় প্রাচীনতম সংসদ।

বারবাডোস ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ধনী ও জনবহুল দেশের অন্যতম। পশ্চিম গোলার্ধে মাথাপিছু আয় বিবেচনায় আমেরিকা ও কানাডার পর এর স্থান। এটি পৃথিবীর সুন্দর দেশসমূহের অন্যতম। প্রতিবছর এ দেশে ৫ লক্ষ পর্যটক ভ্রমণ করেন। বারবাডোসে প্রতিদিন কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইংল্যান্ড হতে বিমান আসে। যুক্ত যুক্তরাজ্যের সাউথ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্য প্রথম বারবাডিয়ানদের বসতি দ্বারা জনপদ হিসাবে যাত্রা শুরু করে। সাউথ ক্যারোলিনার প্রথম গভর্নর ছিলেন বারবাডিয়ান। ১৮৪৬ খ্রিস্টাব্দের একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, তখন সেখানে ৪৯১ টি চিনির চালু-খামার এবং ৫০৬টি বায়ুকল (windmills) ছিল। এখনও এখানে প্রচুর চিনির খামার রয়েছে। এখানে প্রচুর বেজি রয়েছে। ইঁদুর ও সাপের দৌরাত্ম্য কমানোর জন্য এবং চিনি ক্ষেতকে ইঁদুরের আক্রমণ হতে রক্ষার জন্য ভারত থেকে মাঝে মাঝে মাঝে বেজি আমদানি করা হয়। চলার পথে বেজি কারও পথ মাড়িয়ে গেলে তা সৌভাগ্যের চিহ্ন হিসাবে গণ্য করা হয়। বারবাডোসে গ্রিন সার্টিফাইড হোটেলের সংখ্যা ২০। প্রতি বর্গমাইলে গ্রিন সার্টিফাইড হোটেলের সংখ্যা বিবেচনা করলে এটিই সর্বোচ্চ। হোটেলে পর্যটন মৌসুমে সিট পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়।

বারবাডোসকে উড়ন্ত মাছের দেশ বলা হয়। বারবাডোসের দ্বীপসমূহে উড়ন্ত মাছের মনোহর দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। এখানকার উড়ন্ত মাছের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার। একলাফে তারা জল থেকে ৩০-৫০ মিটার পর্যন্ত উপরে ওঠতে পারে। সময়

প্রকাশক: পুথিনিলয়। আফ্রিকা

লাগে মাত্র সর্বোচ্চ ৪৫ সেকেন্ড। অ্যালকোহলে পানে এখানে কোনো বাধা নেই। অ্যালকোহল পানের বৈধ বয়স ১৮ বছর। তবে পিতামাতার সঙ্গে থাকলে ১০ বছর বয়স্ক শিশুরাও অ্যালকোহল পান করতে পারে। আপনি বারবাডোস গেলে, অ্যালকোহল পান করে উড়ন্ত মাছের জগতে হারিয়ে যেতে পারেন অনায়াসে। বারবাডিয়ানদের কাছে শুকরের মাংশ খুব প্রিয়। এদের মতো শুকর খাওয়া জাতি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। তবে শুকুর খেলেও তাদের আচরণ আসলেই মানুষের মতো। খুবই অতিথিপরায়ণ।


উত্তর আমেরিকা (North America) : ইতিহাস ও নামকরণ

এন্টিগুয়া এন্ড বারবুডা (Antigua and Barbuda) : ইতিহাস ও নামকরণ

 দি বাহামাস (Bahamas) : ইতিহাস ও নামকরণ

 

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

All Link

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

এশিয়া মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

Language
error: Content is protected !!