Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
বিনীত ও বিনত : কোনটি লিখবেন এবং কেন – Dr. Mohammed Amin

বিনীত ও বিনত : কোনটি লিখবেন এবং কেন

ড. মোহাম্মদ আমীন

বিনীত আর বিনত দুটোই নম্রতাজ্ঞাপক শব্দ। সাধারণত দাপ্তরিক পত্রের শেষে আবেদনকারীর প্রকৃতি এবং স্বরূপ উপস্থাপনের লক্ষ্যে শব্দ দুটো ব্যবহার করা হয়। বিনীত মানে বিশেষভাবে নীত এবং বিনত মানে বিশেষভাবে নত‘নীত’ হওয়ার মধ্যে আছে গৌরব, আর ‘নত’ হওয়ার মধ্যে আছে চরম লজ্জা। দাপ্তরিক পত্রে আপনি কোনটা লিখেন, ‘বিনীত’ না কি ‘নীত’? আপনি যদি  কারো ক্রীতদাস হোন তাহলে লিখতে পারেন বিনত। আমি কখনো বিনত লিখিনি। যারা ধর্মবিশ্বাসী তারা মনে করেন, ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে নত হওয়া সমীচীন নয়, তাহলে ঈশ্বর ছাড়া অন্য কারো কাছে বিনত হবেন কেন? যে মানুষের মধ্যে জ্ঞান, যোগ্যতা, বুদ্ধি, মূল্যবোধ, দক্ষতা, ব্যক্তিত্ব প্রভৃতি রয়েছে সে কখনো কারো কাছে বিনত হতে পারে না। আবার যে মানুষের মধ্যে এসব গুণাবলী রয়েছে তিনি কখনো বিনীত না হয়ে পারেন না।  কর্তৃপক্ষ আমাকে চেয়েছে বলেই আমি গিয়েছি এবং আমার যোগ্যতা আছে বলেই আমাকে  কর্মে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে-  এটি হচ্ছে নীত। কর্তৃপক্ষ আমাকে চায়নি আমি নিজেই তার কাছে গিয়েছি এবং আমার যোগ্যতা না-থাকা সত্ত্বেও  দাসত্ব আর নতজানুত্ব দেখে  কর্মে অধিষ্ঠিত করেছে- এটি হচ্ছে নত। এবার দেখা যাক ‘বিনীত’ আর ‘বিনত’ শব্দের অর্থ।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘বিনীত(বি + √নী + ত)’ শব্দের অর্থ বিনয়যুক্ত, সংযত, শান্ত প্রভৃতি। প্রাচীন সংস্কৃত ব্যাকরণে বলা হয়েছে  ‘বিনীত’ শব্দটি বিনয় থেকে জাত  একটি শব্দ। বৈয়াকরণদের অভিমত, বিনয় শব্দের মূল অর্থ বিশেষ নয়ন। এই বিশেষ নয়ন  সাধারণ কোনো নয়ন বা চক্ষু নয়, এ নয়ন হচ্ছে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, মেধা আর অনুধাবন শক্তির সম্মিলিত রূপ। এমন নয়নের অধিকারীকে বলা হয় জ্ঞানী, যারা একাগ্র সাধনায় গভীরভাবে জ্ঞানার্জনে নিবেদিত রাখেন নিজেদের। এমন ব্যক্তি নিজে সম্মানিত হন, অন্যদেরও সম্মান দেন এবং দিতে জানেন। তারা কখনো নিজেদের অন্যের কাছে বিকিয়ে দেন না। সে হিসেবে বিনীত শব্দের আদি অর্থ শিক্ষিত, জ্ঞানী, অমায়িক, উদার, শ্রদ্ধাবান, সংযত, মার্জিত প্রভৃতি। বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিভিন্ন অভিধান পর্যালোচনা করে আমি ‘বিনীত’ শব্দের যে অর্থ পেয়েছি তা হলো : বিনয়যুক্ত, উদার, বিনয়সহ অনুরোধ, ঋদ্ধময় আনুগত্যে বিকশিত আবেদন, শৈলী প্রার্থনা, সংযত, শান্ত, মার্জিত, সহায়ক, প্রাজ্ঞ এবং অনুগত সহকর্মী প্রভৃতি।

‘নত’ হতে ‘বিনত’। যিনি বিশেষভাবে নত, মূলত তিনিই বিনত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘নত’ শব্দের অর্থ অবনত, চরণে নত, প্রণত, নম্র, অনুন্নত, কুটিল প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে”। রবীন্দ্রনাথ ঈশ্বরের কাছে নত হয়েছেন। আপনি কেন অযথা একজন মানুষের কাছে নত হবেন? আপনার কি কোনো যোগ্যতা নেই? বিনত মানে আরো নত, সোজা কথায় নতজানু এবং নতজানু মানে হাঁটু গেড়ে বসে আছে এমন। অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘বিনত (বি+√নম্+ত)’ শব্দের অর্থ অবনত, অজ্ঞ, মূর্খ, গোলাম, দাসানুদাস, বিনয়ী, নম্র, প্রণত, নতজানু, আত্মমর্যদাহীন, কুটিল, বদ, গোলাম প্রভৃতি। আপনার যদি যোগ্যতা থাকে, তাহলে কেন আপনি নিজেকে কুটিল, বদ, অযোগ্য, গোলাম, ক্রীতদাস , অজ্ঞ, মূর্খ, নতজানু প্রভৃতি হিসেবে উপস্থাপন করবেন?

দাপ্তরিক চিঠিপত্রে ‘বিনীত’ শব্দটির বহুল ব্যবহার ও প্রয়োগ লক্ষণীয়। অনেকে মনে করেন, বিনীত শব্দটি ব্যবহার করা সঙ্গত নয়, বরং বিনত শব্দটি ব্যবহার করা সংগত। আমি আমার চাকুরি জীবনে কখনো বিনত’ শব্দটি ব্যবহার করিনি। যোগ্যতাগুণে আমি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে চাকুরি পেয়েছি, কারো কাছে নতজানু হয়ে নয়। আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে যখন কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করব, তখন আমার পরিচয় কী দেব? যদি বলি বিনত, তাহলে তার অর্থ হয় অজ্ঞ, মূর্খ, নতজানু, গোলাম, ক্রীতদাস, অবনত, দাসানুদাস। নিজেকে এমন হীনভাবে উপস্থাপন করা কি আদৌ উচিত হবে? আপনি যদি মেধা আর যোগ্যতার বলে কর্মে নিয়োজিত হয়ে থাকেন তাহলে কখনো সমীচীন হবে না। পক্ষান্তরে, আপনি যদি বলেন, ‘বিনীত’; তাহলে তার অর্থ হয় আপনি শ্রদ্ধাবান, আপনি জ্ঞানী, আপনি আমায়িক, আপনি অভিজ্ঞ, আপনি দক্ষ; সর্বোপরি আপনি আপনার মেধা, শ্রদ্ধা আর আনুগত্য দিয়ে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য সাধানে সহায়ক একজন উদার, অময়িক ও প্রাজ্ঞিক সহকর্মী।

অতএব, যারা গোলামি আর দাসত্ব, মূর্খতা ও নতজানুত্ব দিয়ে কর্মকে ব্যক্তিত্বহীনতায় আবদ্ধ করতে চান তারা লিখতে পারেন বিনত। পক্ষান্তরে যাদের জ্ঞান, মেধা, উদারতা, দক্ষতা আর কুশলী কার্যক্রম দিয়ে কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যকে সাফল্যমণ্ডিত করার যোগ্যতা আছে বলে মনে করেন, তারা লিখবেন বিনীত। তাই,  আপনি যদি দক্ষ, যোগ্য, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হন তাহলে দাপ্তরিক চিঠিপত্রে লিখুন বিনীত আর যদি দাসানুদাস গোলাম, নতজানু ক্রীতদাস কিংবা শুধু পদলেহক হন তাহলে লিখুন বিনত

এখন ক্রীতদাস বা কৃতদাসের যুগ নয়, জ্ঞানের যুগ, দক্ষতা আর মেধার যুগ।  মেধা আর সামর্থ্য কর্ম প্রাপ্তির প্রধান শর্ত; গোলামি, দাসত্ব আর নতজানুত্ব কর্মপ্রাপ্তির প্রধান শর্ত হলে ওই কর্ম কোনো কর্ম নয়,  গোলামি মাত্র। আমি  কর্তৃপক্ষের কাছে নত হব কেন? আমি নীত হব– আমার যোগত্যায়, দক্ষতায় আর অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ সমমর্যদার বিনীত প্রজ্ঞায়। আমিও একদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ হব, তাই আমি কখনো বিনত লিখি না, বিনীত লিখি। কারণ আমাকে রীতিমতো পত্রিকায় বিজ্ঞাপ্তি দিয়ে আহ্বান করে যোগ্যতা আছে বলে কর্মে অধিষ্ঠিত করা হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *