Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
বিশাল মার্কেটের জুতো এবং ষোড়শীর ব্যর্থ প্রেমিক – Dr. Mohammed Amin

বিশাল মার্কেটের জুতো এবং ষোড়শীর ব্যর্থ প্রেমিক

 
আমার বাসার অনতিদূরে ‘বিশাল মার্কেট’।
নাম ‘বিশাল মার্কেট’ হলেও আয়তনে বিশাল নয়, তবে পণ্যের দাম ছিল আসলেই বিশাল, বাংলাদেশের চেয়ে বড়ো। স্বল্প পরিসরে একতলা-বিশিষ্ট এই মার্কেটটি ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মার্কেট। হয়তো এখনও। অবশ্য বাংলাদেশের ঢাকায় পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে ওয়াশিংটনের চেয়ে বেশি।
বিশাল মার্কেটের এক কাপড়ের দোকানের মালিকের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল মুম্বাইয়ে। নামটা মনে পড়ছে না তাঁর। তবে, শ দিয়ে শুরু।
ধরুন-শাহ আলম।
পরিচয়সূত্রে মাঝে মাঝে বিশাল মার্কেটে শাহ আলমের বিশাল দোকানে যেতাম। দেখলে এমনভাবে স্বাগত জানাতেন যে, আমি যেন তার প্রাণের শ্বাস।
জামার দাম শুনে ধুকধুক করত বুক,
প্যান্টের দাম শুনে ঘুরত মস্তক,
ব্লেজার দেখে কেনার ইচ্ছায় চোখ ছানাবড়া হয়ে যেত,
দাম শুনে মগডালে উঠে যেত দুনয়ন, নামত না আর সহজে।
বেশ কয়েকটা শার্ট কিনতে হয়েছে তার দোকান থেকে, দুটো ব্লেজারও।
শাহ আলম সাহেব, কথা দিয়ে এমনভাবে ঘায়েল করত, না- কেনে আসা যেত না। মনে হতো, না-কিনলে জামা নয়, পৃথিবীটাই না-কেনা হয়ে যাবে।
আমার পকেট গড়ের মাঠ বানিয়েই ছাড়তেন।
বলতেন, স্যার, কেনা দামে দিয়ে দিলাম আপনাকে। পরিচিতদের কাছ থেকে আমি লাভ করি না। পরিচয় লাভের বাবা।বোম্বাইয়ে এ মানের একটা শার্ট কিনতে হলে আপনাকে তিনগুণ ব্যয় করতে হবে।
তা অবশ্য ঠিক, তবে বিমান আর হোটেলভাড়া-সহ।
বাইরের দোকানের তুলনায় বিশাল মার্কেটের দামে ছিল আকাশ-পাতাল তফাত। দু-একবার গলাকাটা যাওয়ার পর যেতাম না। রাস্তা দিয়ে যাবার সময় মনে মনে বলতাম, গলাকাটা মার্কেট। বন্ধুরাও অনুরূপ বলত।
কয়েক মাস আগে সান্ধ্যভ্রমণের সময় কৌতূহলবশত বিশাল মার্কেটের সামনের সারির মাঝখানে অবস্থিত এক দোকানে ঢুকে পড়ি। অনেকদিন যায়নি তো! কেনার জন্য নয়, স্রেফ কৌতূহল- বলা যায় দেখার জন্য। দেখা যে কখনও কখনও কেনা, প্রকৃত অর্থে নিজেকে বেচে দেওয়া হয়ে উঠে তা আমরা অনেকে বুঝেও বুঝি না। আসলে মানুষ খুব অদূরদর্শী জীব। ভাগ্যিস, শাহ আলমের দোকান ভেতরে। তিনি দেখলে ডেকে নিয়ে ঢেকে দিতেন বিবেচনার চোখ, তারপর মিষ্টি কথায় বুলিয়ে-বালিয়ে ঠিকই কেটে নিতেন পকেট, যা পরিণামে গলাকাটার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত।
দোকানে ঢুকতেই এক জোড়া জুতোয় দৃষ্টি আটকে গেল- বেশ সুন্দর। চকচক করছে ষোড়শী বালিকার মতো চটুল লাস্যের শিহরনে। আমার মনে পড়ে গেল নাহিদার কথা, দাম মাত্র ৩২০০ টাকা, নাগালেই। এ দামে এত সুন্দর বালিকা জুতো- নাহিদাকে কেনার ইচ্ছো আমার প্রবল হয়ে উঠল।
পাশে আর এক জোড়া।
ওঠা আরও সুন্দর, ইসরাইলি রমণীর মুখাবয়ব যেন লেপ্টে দিয়েছে জুতোর গায়ে- দাম ৩৬০০ টাকা, যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌরী, যাকে দেখলে আমার শরীর মশার মতো অস্থির হয়ে যেত। সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম, এটাই মানে মৌরীকে নেব। মাত্র চারশ টাকা বেশি। বিশাল মার্কেটের বাইরে ঢাকার আর কোনো মার্কেটে এত নাগালো দামে এত রমণীয় জুতো পাওয়া যাবে না।
ইস্!
জুতো জোড়া পরলে পদ আমার, পদমর্যাদার মতো গর্বে সিনিয়র সচিব হয়ে যাবে।
ক্যাশের সামনে গিয়ে দোকানদারকে বললাম, দাম কী ফিক্সড?
‘ফিক্সড’, দোকানদার বললেন, “‘তবে আপনি সম্মানি মানুষ, আপনার জন্য দশ পার্সেন্ট কমিশন”।
আমি সম্মানি মানুষ, কীভাবে জানলেন?
বিশাল মার্কেটে সম্মানি মানুষেরাই আসেন। এখানে সাধারণ কোনো মানুষ আসেন না। আপনি কোন জোড়া নেবেন, স্যার?
আনমনে বলে দিলাম, মৌরীকে নেব।
মানে?
আলমিরার দিকে আঙুল উঁচিয়ে বললাম, ডান কোণার দ্বিতীয় জোড়াই আমার পছন্দ।
দোকানদার বললেন, ওই জুতোর জন্য আপনাকে আমরা ৪২০০ টাকা কমিশন দেব। এর চেয়ে বেশি দিলে ক্ষতি হয়ে যাব।
জুতোর দাম ৪২০০ টাকা, কমিশন ৪২০০ টাকা, এমন বেকুব বিক্রেতাও কী পৃথিবীতে আছে। চঞ্চল হয়ে উঠলাম। আমার ভেতরে কম্পন শুরু হয়ে গেল। মৌরীকে এত সস্তা হয়ে গেল? বয়স বাড়লে মেয়েরা সস্তা হয়ে যায়। নিজেকে সম্মানি মানুষ প্রমাণ করার জন্য কম্পনটা কোনো রকমে কলজের ভিতর রেখে দিলাম। সংশয় হলো। সাধারণত কোনো বিক্রেতা ঠকে না, এমন নজির নেই- সবসময় ক্রেতাই ঠকে। এখানে কী হলো?
বিক্রেতা কী পাগল হয়ে গেল?
নিশ্চয় গন্ডগোল আছে।
কিছু না-বলে জুতোর আলমিরার দিকে এগিয়ে গিয়ে গেলাম।
এবার জুতোর দামে চোখ দিয়ে চমকে উঠি। কয়েক মিনিটের মধ্যে জুতোর গায়ে লেখা দামের ডানদিকে কে যেন একটা শূন্য বসিয়ে দিয়েছে।
এতক্ষণ যা ছিল ৪,২০০ টাকা, এখন তা ৪২,০০০ টাকা।
ওহ্ মাই গড!
আসলে আমি আসার পর কেউ শূন্য বসায়নি। বস্তুত, আমার চোখ জুতোর রমণীয় সৌন্দর্যে এতই ঘোলাটেমাত্রায় অভিভূত হয়ে পড়েছিল যে, একটা শূন্য কম দেখছিল।বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেও মৌরীকে দেখলে আমার চোখ এমন প্রাণিত যন্ত্রণায় অন্ধ হয়ে যেত। এভাবে মানুষ প্রেমে পড়ে মানুষের; বিবেচনা না-করে পোকারা, ঝাপটে পড়ে আগুনে। মৌরীকে আমার হয়নি, জুতো জোড়া কী হবে? মৌরীর সাধ জুতো দিয়ে মেটাব।
কিন্তু না; সামর্থ্যের অভাবে বালিকার মতো সুন্দর জুতোকে প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মৌরীর মতো আমার করে নিতে পারলাম না।
জীবনে, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক সুন্দরী মেয়ে দেখে প্রেম করার ইচ্ছা হয়েছিল, কিন্তু বিশাল মার্কেটের জুতোর মতো তাদেরও আমার করতে পারিনি।নহিদা আর মৌরীর মতো বিশাল মার্কেটের দুজোড় জুতোও আমার হলো না।
সামর্থ্যের অভাব।
ইস, জুতো জোড়ার দাম যদি ৪২০০টাকা হতো।অথবা, আমার আগের চোখ দুটো সদাগরের চোখে লাগিয়ে দেওয়া যেত!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *