বিশ্বের প্রথম ভাষা আন্দোলন ও প্রথম ভাষা সৈনিক

ড. মোহাম্মদ আমীন
মহামতি গৌতম বুদ্ধ(আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৫৬৩ বা ৪৮০ অব্দ-আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৪৮৩ বা ৪০০ অব্দ) বিশ্বের প্রথম ভাষা সৈনিক। বিশ্বে সর্বপ্রথম তাঁর হাতেই  ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত সূচনা ঘটে। মহাজনপদের যুগে মগধ সাম্রাজ্যের শাসক বিম্বিসারের রাজত্বকালে গৌতম বুদ্ধ জীবিত ছিলেন। তৎকালে দেবভাষা হিসেবে পরিচিত সংস্কৃত ছাড়া অন্য-কোনো ভাষায় ধর্মকর্ম করা ছিল নিষিদ্ধ এবং মহা পাপের বিষয়। সেকালে উপমহাদেশে অঞ্চলভেদে প্রাকৃত-সহ বিভিন্ন নামে প্রায় কাছাকাছি প্রকৃতির অনেকগুলো আঞ্চলিক/ মৌখিক/কথ্য ভাষা প্রচলিত ছিল।তন্মধ্যে বিখ্যাত এবং বহুল প্রচলিত ছিল প্রাকৃত ও পালি। এ ভাষাগুলোর বর্তমান রূপই হলো বাংলা। আধুনিক গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে— পালি ও প্রাকৃত ভাষার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার উদ্ভব। অর্থাৎ পালি ও প্রাকৃতই হচ্ছে বাংলার আদি রূপ।
 

সংস্কৃত ছিল ধর্মগ্রন্থ, ব্রাহ্মণ, রাজকীয় প্রশাসন এবং অভিজাতদের ভাষা। সাধারণ লোকের কাছে সংস্কৃত ছিল রাজ দরবারের মতো অপ্রবেশ্য। সংস্কৃত

গৌতম বুদ্ধ

ছাড়া অন্যভাষীদের বলা হতো— অসূর, রাক্ষস ও নীচজাত। পশুর মতোই আচরণ করা হতো এদের সঙ্গে। তাদের ভাষাকে তুলনা করা হতো- মুখ থেকে বের হয়ে আসা বিকট দুর্গন্ধের সঙ্গে। অন্যসব গুণাবলি থাকা সত্ত্বেও কেবল ভাষার জন্য প্রাকৃতভাষী জনগণ হয়ে পড়েছিল— অস্পৃশ্য, ঘৃণ্য আর পাপিষ্ঠ। গৌতম বুদ্ধ সংস্কৃতভাষীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেন সমন্বিত ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিরোধ। তিনি সংস্কৃতির অগ্রাসন রোধ করে সাধারণ মানুষ ও তাদের মুখের ভাষাকে মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গৌতম বুদ্ধ ধর্মীয় বাণীর ভাষা নির্ধারণের জন্য সমগ্র উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীর সর্বজন বোধ্যতা বিবেচনায় তিনি দেবভাষা বাদ দিয়ে অসূরের সাধারণ লোকের ভাষায় ধর্মগ্রন্থ রচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এ অবস্থায় গৌতমবুদ্ধ বাংলার পূর্বরূপ তথা পালি ভাষায় ধর্মীয়গ্রন্থ রচনা করে পৃথিবীতে প্রথম ভাষা আন্দোলনের সূচনা ঘটান। তিনিই বিশ্বের প্রথম ব্যক্তি, যিনি আদি বাংলায় ধর্মগ্রন্থ রচনা করে সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে স্বর্গীয় ভাষায় পরিণত করেছেন। তাঁর এই সূচনা বায়ান্নের আন্দোলনে ত্যাগের প্রেরণা হয়ে সার্থকতা দিয়েছে বিজয়ে, ছড়িয়ে দিয়েছে সারা বিশ্বে পৃথিবীর সবচেয়ে সুমিষ্ট ভাষা বাংলাকে। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি পৃথিবীর প্রথম ভাষা সৈনিক মহামতি গৌতম বুদ্ধকে। পালি ভাষায় ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করাতে শুরু হয় ব্রাহ্মণ-বুড্ডিস্ট বিরোধ। অথচ, অন্যান্য ধর্মীয় বিষয়ে উভয় ধর্মের তফাত তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।
অনেক পণ্ডিতের অভিমত ‘পাঠ’ হতে পালি(পাঠ>পাল>পালি) শব্দের উদ্ভব। তাদের মতে গৌতম বুদ্ধ  শিষ্যদের যে পাঠ বা উপদেশ দিতেন, সেগুলোই  পালি। আবার অনেকের মতো, গৌতম বুদ্ধের বাণী এই ভাষাতে লিখিত, সংরক্ষিত ও পালিত  করা হয়েছিল। তােই এর নাম পালি। আবার অনেকে মনে করেন, মগধ এর প্রাচীন নাম পলাস হতে পালি এসেছে। অনেক ইতিহাসবেত্তার ব্যাখ্যা,  প্রাচীন মগধ এর রাজধানী পাটলিপুত্র নাম থেকে পালি শব্দের উদ্ভব। আবার কেউ কেউ মনে করেন পঙ্‌ক্তি হতে পালি শব্দের উদ্ভব।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতক হতে খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত পালি ভাষার প্রসারকাল গৌতম বুদ্ধের ব্যবহৃত ভাষা হিসাবে এই ভাষা আরও বিকশিত হয় ধর্মীয় ভাষা হিসেবে। বুদ্ধ তাঁর ধর্মবাণী প্রচারের জন্য সমগ্র উত্তর ভারত পরিভ্রমণ করেন। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত লোকদের সর্বজন বোধ্যতার তাগিদে পালি ভাষার  প্রসার ঘটে। ক্রমে বৌদ্ধ ভিক্ষুবৃন্দ ধর্মালোচনার মাধ্যম হিসাবে পালি ভাষাকে ধর্মীয় ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন।  বুদ্ধ নিজেও এই পালি ভাষায় ধর্মদেশনা দিতেন। তাই পরবর্তীকালে পালি ভাষায়  মূল ত্রিপিটক গ্রন্থ রচিত ও সংরক্ষিত হয়।

ত্রিপিটক বৌদ্ধ ধর্মীয় পালি গ্রন্থ। এটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দর্শন এবং তাঁর উপদেশের সংকলন। পালি  পিটক হতে বাংলায় ত্রিপিটক শব্দের প্রচলন। ত্রিপিটক অর্থ তিন পিটকের সমন্বয়। এই তিনটি পিটক হলো— বিনয় পিটক, সূত্র পিটক ও অভিধর্ম পিটক। পালিতে পিটক শব্দের অর্থ— ঝুড়ি, পাত্র, বাক্স ইত্যাদি।  খ্রিষ্টপূর্ব ৩য় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই গ্রন্থের কাজ শুরু হয়েছিল গৌতম বুদ্ধের পরিনির্বাণের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে এবং  শেষ হয়  খ্রিষ্টপূর্ব অনুমান ২৩৬ অব্দে। প্রায় তিনশ বছরে তিনটি সঙ্ঘায়নের মধ্যে এর গ্রন্থায়নের কাজ সম্পন্ন হয়। ‘বোদা’ নামের একটি উপজেলা


All Link

বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল

ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা

বাংলা সাহিত্যবিষয়ক লিংক

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/২

বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন /৩

কীভাবে হলো দেশের নাম

ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/১

দৈনন্দিন বিজ্ঞান লিংক

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/২

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৩

শুদ্ধ বানান চর্চা লিংক/৪

কীভাবে হলো দেশের নাম

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/১

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র/২

বাংলাদেশের তারিখ

ব্যাবহারিক বাংলা বানান সমগ্র : পাঞ্জেরী পবিলেকশন্স লি.

শুদ্ধ বানান চর্চা প্রমিত বাংলা বানান বিধি : বানান শেখার বই

কি না  বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি

মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন

ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ

মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন

Language
error: Content is protected !!