নাঈমা সেহেলি
বিসর্গ
বিসর্গ, বাংলা বর্ণমালার অন্যতম পরাশ্রয়ী একটি বর্ণ । স্বাধীনভাবে স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ভাষায় ব্যবহৃত হয় না । এ বর্ণে দ্যোতিত ধ্বনি অন্য ধ্বনির সঙ্গে মিলিত হয়ে একত্রে উচ্চারিত হয় বলে এই নামকরণ । বর্ণটি হলো অঘোষ ‘হ’-এর উচ্চারণে প্রাপ্ত ধ্বনি । ‘হ’– এর উচ্চারণ ঘোষ, কিন্তু বিসর্গের উচ্চারণ অঘোষ ।
বিসর্গের ব্যবহার
১) বাংলায় একমাত্র বিস্ময়াদি প্রকাশক অব্যয়েই বিসর্গের ধ্বনি শোনা যায় । যেমন: আঃ, উঃ, বাঃ। ২) সাধারণত শব্দের অন্তে বিসর্গ প্রায়ই অনুচ্চারিত থাকে । যেমন— বিশেষতঃ (বিশেষত) ফলতঃ (ফলত) । ৩) পদের মধ্যে বিসর্গ থাকলে পরবর্তী ব্যঞ্জন দ্বিত্ব হয় । যেমন দুঃখ (দুখখ) প্রাতঃকাল (প্রাতককাল)। বিসর্গ ও বিসর্গবিধি
বিসর্গ: প্রথম পর্ব
বিসর্গ-এর সাথে শ ষ স এর সম্পর্ক: ( ১ ) বিসর্গের পর অঘোষ অল্পপ্রাণ / মহাপ্রাণ তালব্য ব্যঞ্জন (চ ছ) থাকলে বিসর্গ স্থলে তালব্য শিশ ধ্বনি ( ‘শ’ ) হয় । যেমন নিঃ+চয় = নিশ্চয় , শিরঃ+ছেদ = শিরশ্ছেদ । ( ২ ) বিসর্গের পর অঘোষ অল্পপ্রাণ / মহাপ্রাণ মূর্ধণ্য ব্যঞ্জন ( ট ঠ) থাকলে বিসর্গ স্থলে মূর্ধণ্য শিশ ধ্বনি ( ষ) হয় । যেমন ধনুঃ+টঙ্কার = ধনুষ্টঙ্কার , নিঃ+ঠুর = নিষ্ঠুর । ( ৩ ) বিসর্গের পর অঘোষ অল্পপ্রাণ / মহাপ্রাণ দন্ত্য ব্যঞ্জন ( ত থ ) থাকলে বিসর্গ স্থলে দন্ত্য শিশ ধ্বনি ( স ) হয় । যেমন দুঃ+তর = দুস্তর, দুঃ+থ = দুস্থ ।
বিসর্গ: দ্বিতীয় পর্ব
১) বিসর্গের পরে ক খ প ফ থাকলে ‘অ’ বা ‘আ’ স্থলে ‘স’ হয় । যেমন: পুরঃ+কার = পুরস্কার , নমঃ+কার = নমস্কার , তিরঃ+কার = তিরস্কার , মনঃ+কামনা = মনস্কামনা , বাচঃ+পতি = বাচস্পতি । তবে অনেক শব্দে এ নিয়ম পালিত হয় না । যেমন মনঃকষ্ট , অন্তঃকরণ , শিরঃপীড়া , প্রাতঃকাল , অধঃপাত , পয়ঃপ্রণালী , শিরঃকম্পন , নভঃপ্রদেশ , অতঃপর ।
২) বিসর্গের পরে ক খ প ফ থাকলে ‘ই’ বা ‘উ’ স্থলে ‘ষ’ হয় । যেমন পরিঃ+কার = পরিষ্কার , আবিঃ+কার = আবিষ্কার , বহিঃ+কার = বহিষ্কার , নিঃ+কর = নিষ্কর , নিঃ+পাপ = নিষ্পাপ , নিঃ+প্রাণ = নিষ্প্রাণ , আয়ুঃ+কাল , চতুঃ+তয় = চতুষ্ তয় > চতুষ্টয় , চতুঃ+পদ = চতুষ্পদ , দুঃ+কর = দুষ্কর । কিন্তু দুঃ+খ = ‘দুঃখ’ শব্দে সন্ধি হয় না , বিসর্গ অবিকৃত থাকে।
সন্ধির বিসর্গ লোপ হয় না এমন কয়েকটি শব্দ
‘অ’— অন্তঃ+করণ = অন্তঃকরণ , অন্তঃ+পুর = অন্তঃপুর , অন্তঃ+সত্ত্বা = অন্তঃসত্ত্বা । ‘প’— প্রাতঃ+কাল = প্রাতঃকাল , প্রাতঃ+কৃত্য = প্রাতঃকৃত্য , প্রাতঃ+ক্রিয়া = প্রাতঃক্রিয়া , প্রাতঃ+স্নান = প্রাতঃস্নান , প্রাতঃ+স্মরণীয় = প্রাতঃস্মরণীয় । ‘ব’— বয়ঃ+ক্রম = বয়ঃক্রম , বয়ঃ+প্রাপ্ত = বয়ঃপ্রাপ্ত , বয়ঃ+সন্ধি = বয়সন্ধি , বয়ঃ+কনিষ্ঠ = বয়ঃকনিষ্ঠ , বহিঃ+প্রকাশ = বহিঃপ্রকাশ , বক্ষঃ+স্থল = বক্ষঃস্থল , বহিঃ+শুল্ক= বহিঃশুল্ক । ‘ম’— মনঃ+কষ্ট = মনঃকষ্ট , মনঃ+পুত = মনঃপুত , মনঃ+সংযোগ= মনঃসংযোগ , মনঃ+ক্ষুণ্ন = মনঃক্ষুণ্ন , মনঃ+সমীক্ষা = মনঃসমীক্ষা , মনঃ+প্রাণ = মনঃপ্রাণ ।’শ’— শিরঃ+পীড়া = শিরঃপীড়া । ‘স’— স্বতঃ+স্ফূর্ত = স্বতঃস্ফূর্ত , স্বতঃ+সিদ্ধ = স্বতঃসিদ্ধ , স্বতঃ+প্রবৃত্ত = স্বতঃপ্রবৃত্ত , স্বতঃ+প্রণোদিত = স্বতঃপ্রণোদিত ।
[Taher Almahdi, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ )]
বিসর্গসন্ধি ব্যঞ্জন সন্ধির অন্তর্গত। বিসর্গ দুই প্রকার। যথা:
এক) র্ জাত বিসর্গ। সন্ধিতে যা র বা রেফে পরিবর্তিত হয়। যেমন: আশীঃ + বাদ = আশীর্বাদ।
দুই) স্ জাত বিসর্গ। সন্ধিতে যা ষ্ বা স্-তে পরিবর্তিত হয়। যেমন: আয়ূঃ + মান = আয়ূষ্মান।
বিসর্গ ও যতি চিহ্নের ব্যবহার
বিদ্যাসাগর মহাশয় বিসর্গকে স্বতন্ত্রবর্ণ বিবেচনায় ব্যঞ্জণবর্ণে স্থান দিয়েছিলেন৷ এটি শব্দের শুরুতে ব্যবহৃত হয় না, মধ্য এবং অন্তে ব্যবহৃত হয়৷ যেমন, প্রায়শঃ, প্রাতঃকালীন৷ তিনি ইংরেজির অনুসরণে বাংলায় যতিচিহ্নের প্রবর্তন করেন৷ ইংরেজি ভাষায়, কোলন ), সেমিকোলন (
, ড্যাশ (—), কোলন ড্যাশ (:—), কমা (,) ফুলস্টপ (.) ইত্যাদি চিহ্ন ব্যবহৃত হয়৷ এই সব চিহ্ন শব্দের অন্তে ব্যবহৃত হয়৷ বাংলায়ও নিয়মটা এমনই হওয়ার কথা, বাল্যে তাই শিখেছিলাম৷ ইদানিং বাংলা লেখায় যতিচিহ্নগুলো শব্দান্তে ব্যবহার হয় ঠিকই, তবে মধ্যখানে একটা স্পেস দেওয়া হয়৷ এবং বিসর্গের পূর্বেও স্পেস দেওয়া হয়৷
বিসর্গ : বিসর্গবিধি ও বিসর্গ বিধি
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা