বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের মান এবং সম্ভাব্য উত্তরের গ্রহণযোগ্যতা
অত্রস্থান অশ্রুজল একত্রিত কাব্যগ্রন্থ কেবলমাত্র পরিবারবর্গ সঠিক সবিনয়ে
ড. মোহাম্মদ আমীন
সাধারণত প্রবীণ অধ্যাপকগণ (অবসরপ্রাপ্তগণও অন্তর্ভুক্ত) থেকে বিসিএস-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র চাওয়া হয়। অনেক শিক্ষক অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন। আবার অনেকে দায়সারা দায় নিয়ে তা করে থাকেন। শিক্ষকদের পাঠানো প্রশ্নপত্রসমূহ থেকে বাছাই করে বিশেষ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। অনেকের প্রস্তাবিত প্রশ্নপত্রে এমন বিকল্প উত্তর থাকে যে, যার সঙ্গে হালনাগাদ তথ্য কিংবা সর্বশেষ গবেষণার ফল ও আধুনিক প্রায়োগিক বিষয়ের কোনো মিল থাকে না। কেননা, অনেক প্রবীণ শিক্ষক আধুনিক পরিবর্তন বা গবেষণার ফলাফল বিষয়ে জ্ঞাত থাকেন না। তাই তাদের প্রশ্নের উত্তরে আধুনিকতার সঙ্গে অনেক সময় গড়মিল দেখা যায়। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, তাই আলোচনা কেবল বাংলা বিষয়ে সীমাবদ্ধ রাখলাম। এ বিষয়ে কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরছি:
অত্রস্থান:অত্রস্থান শব্দটি শুদ্ধ কি না? একটি প্রশ্নের উত্তরে বলা হচ্ছে ‘অত্রস্থান’ শব্দটি শুদ্ধ। আবার একটি প্রশ্নের উত্তরে বলা হয়েছে— ‘চলাকালীন’শব্দটি অশুদ্ধ। এখানে দুটি সাংঘর্ষিক উত্তর লক্ষ করা যায়। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি এবং বাংলা একাডেমির অভিধানসমূহ কী বলে দেখা যাক। বাংলা
পাঞ্রেরী পাবলিকেশন্স লি.
একাডেমির অভিধানসমূহ অনুযায়ী, বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘অত্র(এতদ্+ত্র)’ শব্দের অর্থ— এখানে, এই স্থানে; here, this place প্রভৃতি। সে হিসেবে ‘অত্রস্থান’ শব্দটির অর্থ হয় এইস্থানেস্থানে। এটি বাহুল্য, অশুদ্ধ এবং অর্থহীন ও হাস্যকর শব্দ। অথচ, এটাকে বলা হচ্ছে শুদ্ধ। চলাকালীন সময় শব্দের অর্থ— চলারসময়সময়। ‘অত্রস্থান’ যদি শুদ্ধ হয় তাহলে চলকালীন সময় অশুদ্ধ হবে কেন? বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘অত্রস্থান’ ও ‘চলাকালীন সময়’ দুটোই অশুদ্ধ।
অশ্রুজল: একটা প্রশ্নে চারটি শব্দ দিয়ে কোনটি অপপ্রয়োগ ও বাহুল্য তা জানতে চাওয়া হয়েছে। উত্তরে বলা হচ্ছে— ‘অশ্রুজল’অপপ্রয়োগ ও বাহুল্য। অথচ, বাংলা একাডেমির সর্বশেষ অভিধানে ‘অশ্রুজল’ শব্দকে প্রমিত নির্দেশ করা হয়েছে। অপপ্রয়োগ বলা হয়নি। সংস্কৃত ‘অশ্রু (√অশ্+রু)’শব্দের অর্থ চোখের জল, নয়নের জল। সংস্কৃত ‘জল (=√জল্+অ)’শব্দের বহুল প্রচলিত অর্থ— পানি, বারি, সলিল এবং ‘পানীয়’ শব্দ থেকে উদ্ভূত তদ্ভব ‘পানি’ শব্দের অর্থও জল, বারি, সলিল প্রভৃতি। অন্যদিকে, সংস্কৃত বারি(√বারি+ই)শব্দের অর্থ হচ্ছে- জল, পানি; বৃষ্টি প্রভৃতি। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, সংস্কৃত অশ্রুজল(অশ্রু+জল) এবং সংস্কৃত অশ্রুবারি (অশ্রু+বারি) শব্দের অর্থ, নয়নবারি। শব্দদুটো ‘অশ্রু’র সমার্থক। অনেকে বলেন, ‘অশ্রুজল’ ও ‘অশ্রুবারি’ বাহুল্য। তাদের যুক্তি- যেখানে অশ্রু অর্থ চোখের জল, সেখানে অশ্রু শব্দের সঙ্গে পুনরায় জল ও বারি লেখা হলে ‘অশ্রুজল/অশ্রুবারি’ শব্দের অর্থ হয়ে যায় : নয়নের জল জল, চোখের জল জল ইত্যাদি। এ যুক্তি ঠিক নয়; ঠিক হতো যদি ‘অশ্রু’ ও ‘বারি এবং ‘অশ্রু ও ‘জল’ পরস্পর ফাঁক রেখে যথাক্রমে ‘অশ্রু জল’/‘অশ্রু বারি’ লেখা হতো। আসলে ‘অশ্রুজল/অশ্রুবারি’ সন্ধিজাত শব্দ, যা অশ্রু শব্দের সমার্থক। প্রসঙ্গত, অশ্রুজল ও অশ্রুবারি শব্দকে সমাসবদ্ধ শব্দ হিসেবেও নির্দেশ করা যায়। যেমন : অশ্রুর জল= অশ্রুজল, অশ্রুর বারি= অশ্রুবারি। এমন হলেও শব্দদুটোকে বাহুল্য বলা যায় না। কারণ সমাসবদ্ধ হলে অনেক সময় ব্যাসবাক্যের অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়। ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ; ছাগদুগ্ধ অর্থ যেমন ছাগলের দুগ্ধ নয়, তেমনি অশ্রুজল বা অশ্রুবারি অর্থ নয়নের জল জল নয়। আশীবিষ, ছাপোষা, দশুভুজা, দশানন-সহ এরূপ আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়। সুতরাং বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে সংস্কৃত ‘অশ্রুজল (অশ্রু+জল)’ শব্দটি শুদ্ধ, সিদ্ধ ও প্রমিত। অতএব, এটাকে এখন অপপ্রয়োগ বা ভুল কিংবা বাহুল্য বলার কোনো সুযোগ নেই। আধুনিক বাংলায় ‘অশ্রুজল’শব্দটি শুদ্ধ সিদ্ধ ও প্রমিত।
একত্রিত:আর একটি প্রশ্ন এবং তার সম্ভাব্য সঠিক উত্তর দেখুন। প্রশ্নের উত্তরে ‘একিত্রত’শব্দটিকে অপপ্রয়োগের দৃষ্টান্ত হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ আধুনিক বাংলা প্রমিত বানান রীতি অনুযায়ী শব্দটি শুদ্ধ ও প্রমিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘একত্রিত’শব্দটি প্রমিত নির্দেশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, এ অভিধানমতে বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত একত্রিত শব্দটির অর্থ— একত্র করা হয়েছে এমন। এই অভিধানে শব্দটিকে বাংলা শব্দ নির্দেশ করা হয়েছে। অতএব, বাংলা শব্দ হিসেবে আধুনিক বাংলায় ‘একত্রিত’ শব্দটি কোনোরূপ সংশয় ছাড়া শুদ্ধ সিদ্ধ ও প্রমিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতেও, ‘একত্রিত’ শব্দটি বাংলা এবং শুদ্ধ ও প্রমিত। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও তারাশঙ্কর তর্করত্ন থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত প্রত্যেক খ্যাতিমান লেখকই ‘একত্রিত’শব্দটি কোনোরূপ দ্বিধা ছাড়া মনের আনন্দে তাঁদের সাহিত্যকর্মে ব্যবহার করেছেন।
কাব্যগ্রন্থ:একটি প্রশ্নে চারটি বিকল্পের মধ্যে ‘কাব্যগ্রন্থ’ শব্দটিকে ভুল নির্দেশ করা হয়েছে। দেখি, আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ, বাংলা একাডেমি এ বিষয়ে কী বলে। সংস্কৃত ‘কাব্য(√কব্+য)’ শব্দের অর্থ- ছন্দোময় রসাত্মক ও ভাবমধুর বাক্য বা রচনা, কবিতা, কবিতাগ্রন্থ, পদসাহিত্য ও পদ্যরচনা প্রভৃতি। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, ‘কাব্যগ্রন্থ (কাব্য+√গ্রন্থ্+অ)’ শব্দের অর্থ কবিতার বই। অতএব, কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ সমার্থক- এমন বলা যায়। কিন্তু অভিধানে ‘কাব্যগ্রন্থ’ অর্থ কেবল ‘কবিতার বই’ নির্দেশ করা হয়েছে। অন্যদিকে ‘কাব্য’ শব্দের অর্থ নির্দেশ করা হয়েছে কবিতা ও
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
কবিতার বই। কাব্য ও কাব্যগ্রন্থ শব্দের ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলেও বোঝা যায়, কাব্য শব্দের ব্যুৎপত্তিতে গ্রন্থ/পুস্তক বা বইয়ের কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু ‘কাব্যগ্রন্থ’ শব্দে কবিতা ও গ্রন্থ/বই দুটোর অস্তিত্বই সমভাবে বিদ্যমান।অতএব, ‘কাব্য’ ও ‘কাব্যগ্রন্থ’ শব্দকে অভিধানে সীমিতভাবে সমার্থক নির্দেশ করা হলেও কবিতার বই বা কবিতাগ্রন্থ অর্থে ‘কাব্য’শব্দের পরিবর্তে ‘কাব্যগ্রন্থ’লেখাই সমীচীন। কারণ ‘কাব্য’ শব্দের প্রধান অর্থ কবিতা কিন্তু কাব্যগ্রন্থ শব্দের প্রধান ও একমাত্র অর্থ ‘কবিতার বই’। কবিতার বই মানে কাব্যগ্রন্থ এবং ‘কাব্যগ্রন্থ’ মানে কবিতার বই। অতএব, আধুনিক বাংলায় কাব্যগ্রন্থ শব্দট পুরোপুরি শুদ্ধ, সিদ্ধ ও প্রমিত। রবীন্দ্রনাথও শব্দটি ব্যবহার করেছেন। (দেখুন: বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান)।
কেবলমাত্র:‘কেবলমাত্র’ শব্দটি কি শুদ্ধ? প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নকারী অনেকের মতে অশুদ্ধ। সংস্কৃত ‘কেবল’ শব্দের অর্থ অব্যয়ে একমাত্র (কেবল তিনিই দেখেছেন), শুধু (কেবল তু্মিই আমাকে বুঝতে পার), অবিরাম, নিরন্তর (কেবল বৃষ্টি), নিরবচ্ছিন্ন, অমিশ্র (কেবল সুখ) এবং ক্রিয়াবিশেষণে এইমাত্র (কেবল এলাম), অনবরত ( কেবল অভাব আর অভাব) ইত্যাদি। সংস্কৃত ‘মাত্র’ শব্দের অর্থ বিশেষ্যে পরিমাণ, মোট, সাকল্য (মাত্র পাঁচ টাকা); বিশেষণে— পরিমিত, নির্দিষ্ট (মাত্র এক ঘণ্টার পথ), কেবল, শুধু (মাত্র এক তিনটি); ক্রিয়াবিশেষণে সেইক্ষণে, সঙ্গে সঙ্গে ( দেখামাত্র নিয়ে এসো) এবং অব্যয়ে প্রত্যেক (জীবমাত্রই মরণশীল)। ‘কেবল’ ও ‘মাত্র’ শব্দদ্বয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রায় সমার্থক বলে অনেকে মনে করেন— ‘কেবলমাত্র’ শব্দটি বাহুল্য। আমিও তাই মনে করতাম। শিক্ষকবৃন্দ আমাকে ওভাবে শিখিয়েছেন। আধুনিক বাংলায় ‘কেবলমাত্র’শব্দটি বাহুল্য বা অসিদ্ধ হলে বাংলার আরও অনেক শব্দ বাহুল্য বা অশুদ্ধ হয়ে যাবে। ‘কেবলমাত্র’ যদি বাহুল্য হয় তাহলে, বইপুস্তক, বসবাস, দাবিদাওয়া, জলপানি, অশ্রুজল প্রভৃতি শব্দ বাহুল্য বা অসিদ্ধ হবে না কেন? অথচ, এসব শব্দ আমরা হরহামেশা লিখে যাচ্ছি কাগজপত্রে। কথাবার্ত আর চিঠিপত্রের কথা নাই বা বললাম। ‘অশ্রুজল’ তো বাংলা একাডেমির অভিধানে প্রমিত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ‘জামবাটি’ বহুল প্রচলিত একটি শব্দ। অথচ জাম শব্দের অর্থ বাটি। তাহলে ‘জামবাটি’ কেন অসিদ্ধ হবে না? পাউ বা পাঁউ শব্দের অর্থ রুটি, তো পাউরুটি বলি কেন? এটাও তো অশুদ্ধ! বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, কেবলমাত্র শব্দটি শুদ্ধ, সিদ্ধ ও প্রমিত। ‘কেবলমাত্র’ শব্দটি কেবল ‘কেবল’ ও ‘মাত্র’ দুটি অভিন্ন অর্থ-দ্যোতক শব্দ দিয়ে গঠিত একটি দ্বিত্ব শব্দ, তাই শব্দটিকে এরূপ অন্যান্য সঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা না করে সরাসরি বাহুল্য বলা সমীচীন নয়। এটি একটি নতুন শব্দ এবং সর্বপ্রথম, অশ্রুজল, বাসাবাড়ি প্রভৃতির মতো নতুন অর্থদ্যোতক শব্দ। ‘কেবলমাত্র’ একটি শব্দদ্বিত্ব বা দ্বৈতশব্দ বা দ্বিরুক্তি। সুতরাং, এটি ভুল বা অসিদ্ধ কিংবা বাহুল্য নয়। বিশেষ অর্থ প্রকাশের জন্য যেসব শব্দ দুইবার ব্যবহৃত হয় তাদের মধ্যে ‘কেবলমাত্র’ অন্যতম একটি বিশেষ অর্থজ্ঞাপক।
পরিবারবর্গ:একটি প্রশ্নের উত্তর দেখানো হয়েছে, ‘পরিবারবর্গ’ শব্দটি শুদ্ধ। এটি শুদ্ধ হবে যদি, একাধিক পরিবারের সব সদস্যকে নির্দেশ করা হয়। একই পরিবারের বিষয়ে ‘পরিবারবর্গ’ শব্দটির ব্যবহার বিধেয় নয়। একটি খানার সব সদস্য নিয়ে একটি পরিবার গঠিত হয়। কারও পরিবার মানে ওই পরিবারের সকল সদস্যকে বোঝায়। তাই, একটি ‘পরিবার’ শব্দটির সঙ্গে বহুবচন নির্দেশক ‘বর্গ’ যুক্ত করে ‘পরিবারবর্গ’ লেখা বাহুল্য। যেমন: একই সমাজের সব পরিবারকে ‘সমাজবর্গ’ বলা বাহুল্য। তবে, পূর্ব-বর্ণনামতে, একটি অভিন্ন পরিবারের সদস্যদের নির্দেশ না-করে একাধিক পরিবার নির্দেশ করা হলে সেক্ষেত্রে ‘পরিবার’ শব্দটির সঙ্গে বহুবচন-বাচক প্রত্যয় বা বিভক্তি যুক্ত করলে বাহুল্য হবে না। যেমন: বন্যপীড়িত পরিবারগুলো বড়ো দুর্দশায় আছে।
সঠিক: সঠিক শব্দটি একটি প্রশ্নপত্রের বিকল্প উত্তরে অপপ্রয়োগ দেখানো হয়েছে। আসলে কি সঠিক শব্দটিকে অপপ্রয়োগ বলা যায়? বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা ‘সঠিক’ শব্দের অর্থ নির্ভুল, প্রকৃত প্রভৃতি। সংস্কৃত ‘স্থিত’ শব্দ থেকে উদ্ভূত তৎসম ‘ঠিক’ শব্দের অর্থ সত্য, নির্ভুল, স্থিরকৃত, সম্পূর্ণ, হুবহু, প্রস্তুত, পরিপাটি প্রভৃতি। সুতরাং উভয় শব্দ সমার্থক। অনেকে মনে করেন (একসময় আমিও মনে করতাম), ‘সঠিক’ শব্দটি শুদ্ধ নয়; বাহুল্য এবং অপপ্রয়োগ। তাঁদের মতে, ‘সঠিক’ শব্দের ‘স’ একটি উপসর্গ। আসলে এ ধারণা সঠিক নয়। ‘ঠিক’ ও ‘সঠিক’ দুটি ভিন্ন শব্দ এবং সমার্থক। তাই শব্দ হিসেবে ‘সঠিক’ অবশ্যই ঠিক। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানেও ‘সঠিক’ শব্দটি প্রমিত হিসেবে পৃথক ভুক্তিতে স্থান পেয়েছে।
সবিনয়ে: আর একটা প্রশ্নের উত্তরে বহুল প্রচলিত ও অত্যন্ত জনপ্রিয় ‘সবিনয়ে’ শব্দটিকে বলা হচ্ছে ভুল। অথচ আধুনিক বাংলায় ‘সবিনয়ে’ শব্দটি শুদ্ধ এবং প্রমিত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘সবিনয় (বিনয়+সহ)’ শব্দের অর্থ বিনয়পূর্বক, বিনীত অন্যদিকে, বাক্যে ক্রিয়াবিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত বাংলা সবিনয়ে (সবিনয়+ এ) শব্দের অর্থ বিনয় সহকারে। সুতরাং, বাংলা ভাষার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদানকারী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘বাংলা একাডেমি’ মতে ‘সবিনয়ে’ শব্দটি শুদ্ধ। আধুনিক বাংলা বানান সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণা নেই, তারাই কেবল শব্দটি অশুদ্ধ বা বাহুল্য বা অপপ্রয়োগ বলেন। একসময় আমিও তা বলতাম।
নাম কী: প্রশ্নটি হলো— বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির নাম কী? চারটি বিকল্পের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থটি হলো যথাক্রমে আবদুল হামিদ ও জনাব আবদুল হামিদ। সঠিক উত্তর বলা হচ্ছে: জনাব আবদুল হামিদ। অথচ, রাষ্ট্রপতির নাম হলো ‘আবদুল হামিদ’ কোথাও তিনি তাঁর নাম ‘ জনাব আবদুল হামিদ’ লিখেননি। কারও নাম জানতে চাওয়া হলে ওই ব্যক্তি যেভাবে তার নাম লিখে থাকেন সেভাবে লেখা সমীচীন। যেমন: আমি আমার নাম লিখে থাকি ড. মোহাম্মদ আমীন। এটিই আমার আসল নাম। অতএব, কেউ যদি আমার নাম জানতে চায় তাহলে ওটি বলাই সমীচীন। তবে, সম্বোধনের ক্ষেত্রে নামের আগে যথোপযুক্ত শব্দযোগ বাঞ্ছনীয়। যেমন : মহামান্য রাষ্ট্রপতি আজ ভাষণ দেবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিল্লি যাচ্ছেন।
To provide the best experiences, we use technologies like cookies to store and/or access device information. Consenting to these technologies will allow us to process data such as browsing behavior or unique IDs on this site. Not consenting or withdrawing consent, may adversely affect certain features and functions.
Functional
Always active
The technical storage or access is strictly necessary for the legitimate purpose of enabling the use of a specific service explicitly requested by the subscriber or user, or for the sole purpose of carrying out the transmission of a communication over an electronic communications network.
Preferences
The technical storage or access is necessary for the legitimate purpose of storing preferences that are not requested by the subscriber or user.
Statistics
The technical storage or access that is used exclusively for statistical purposes.The technical storage or access that is used exclusively for anonymous statistical purposes. Without a subpoena, voluntary compliance on the part of your Internet Service Provider, or additional records from a third party, information stored or retrieved for this purpose alone cannot usually be used to identify you.
Marketing
The technical storage or access is required to create user profiles to send advertising, or to track the user on a website or across several websites for similar marketing purposes.