ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর/২
ড. মোহাম্মদ আমীন
সনাতন পাঠশালায় ভর্তি
চার বছর নয় মাস বয়সে পিতা ঠাকুরদাস ঈশ্বরচন্দ্রকে গ্রামের সনাতন পাঠশালায় ভর্তি করে দেন। রামজয় তর্কভূষণের উদ্যোগে পাশের গ্রামের কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়, বীরসিংহে একটি পাঠশালা স্থাপন কললে ঈশ্বরচন্দ্র, বাংলা শেখার জন্য আট বছর বয়সে এই পাঠশালায় ভর্তি হন।
কলকাতা গমন
১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে পাঠশালার শিক্ষা সমাপ্ত করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য পিতার সঙ্গে কলকাতায় আসেন। কথিত আছে, পদব্রজে মেদিনীপুর থেকে কলকাতায় আসার সময় পথের ধারে মাইল ফলকে ইংরেজি সংখ্যা দেখেই তিনি সবগুলো সংখ্যা আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন।
সংস্কৃত কলেজে ভর্তি
ঈশ্চরচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দের ১লা জুন সোমবার কলকাতা গভর্নমেন্ট সংস্কৃত কলেজে ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। বর্তমানে এটি “সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুল” নামে পরিচিত। প্রসঙ্গত সংস্কৃত কলেজের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দে। এই কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ ও মদনমোহন তর্কালঙ্কার। বিদ্যাসাগরের আত্মকথা থেকে জানা যায় তিনি সাড়ে তিন বছর ওই শ্রেণিতে অধ্যয়ন করেন।
জন্ম ও বাল্য জীবন
খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন, মঙ্গলবার বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বীরসিংহ অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নাম রেখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের ছিল না। তাই বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামে মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ও ছদ্মনাম
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সর্ববোধ্য করে তোলেন। তাঁর লেখক ছদ্মনাম “কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য”।
বাংলা গদ্যের সার্থক রূপকার
ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী অভিহিত করেছেন।
দয়ার সাগর
বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কেউ তার কাছ হতে খালি হাতে ফেরত যেতেন না। তাই সবাই তাই সাধারণ্যে তিনি দয়ার সাগর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।