ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর/১
ড. মোহাম্মদ আমীন
বাংলার নবজাগরণের পুরোধা কালজয়ী বাঙালি শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, মহানদাতা, নারীমুক্তির অগ্রদূত, যুগোপযোগী পাঠ্যপুস্তক রচয়িতা, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পথিকৃৎ ও বাংলা গদ্যের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে সেপ্টেম্বর ( ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ আশ্বিন, মঙ্গলবার) পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মতো উদার ও মহান বাঙালি খুব কমই জন্মগ্রহণ করেছেন। সেসময় বীরসিংহ বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় । জন্মের পর পিতামহ বংশানু্যায়ী শিশু পৌত্রের নাম রেখেছিলেন “ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়”।
ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে এপ্রিল হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষা দেন। কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৬ই মে ল কমিটির কাছ থেকে যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতেই প্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি ব্যবহৃত হয়। বিদ্যাসাগর হচ্ছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক উপাধি। সেসময় প্রাতিষ্ঠানিক ফলের উপর ভিত্তি করে এজাতীয় উপাধি দেওয়া হতো। ঈশ্বরচন্দ্র প্রথম বিদ্যাসাগর উপাধিপ্রাপ্ত বাঙালি।এরপর আরও সাত জন লোক বিদ্যাসাগর উপাধি পেয়েছেন। তবে ঈশ্বরচন্দ্র নামক মহাসাগরের কাছে বাকি বিদ্যাসাগরবৃন্ধ তলিয়ে গেছেন। তাঁদের বিষয়ে জানতে চাইলে দেখতে পারেন: বিদ্যাসাগর অনেক: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেবল একজন।
ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নামকরণ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর আর্থিক সাধ্যে ছিল না। তাই বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামেই মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুমার সঙ্গে বাস করতেন। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও তাঁর বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তার। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে সহজবোধ্য করে তোলেন। বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী অভিহিত করেছেন। তিনি শিশুপাঠ্য বর্ণপরিচয় সহ, একাধিক পাঠ্যপুস্তক, সংস্কৃত ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেছেন। সংস্কৃত, হিন্দি ও ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞান সংক্রান্ত বহু রচনা তাঁর অনুপম মেধার পরিচয় বহন করে।
বিদ্যাসাগর সমাজ সংস্কারক হিসেবেও খ্যাত ছিলেন। বিধবা বিবাহ ও স্ত্রীশিক্ষার প্রচলন, বহুবিবাহ ও বাল্য বিবাহের মতো সামাজিক কুসংস্কার দূরীকরণে তার অক্লান্ত সংগ্রাম কালজয়ী কীর্তি হয়ে থাকবে। বাংলার নবজাগরণের পুরোধা বিদ্যাসাগর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচীন ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজের কর্মশক্তি ও বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুরে তার স্মৃতিরক্ষায় স্থাপিত হয়েছে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী কলকাতার আধুনিক স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বিদ্যাসাগর সেতু তারই নামে উৎসর্গিত। বাংলার নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রয়াত হন ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুলাই, বাংলা ১২৯৮ সনের ১৩ শ্রাবণ, রাত্রি দুটো আঠারো মিনিটে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার বাদুড়বাগানস্থ বাসভবনে ৭০ বছর ১০ মাস ৪ দিন বয়সে মারা যান।
খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক ও গদ্যকার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ শে সেপ্টেম্বর মোতাবেক ১২২৭ বঙ্গাব্দের ১২ই আশ্বিন, মঙ্গলবার বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তৎকালীন বীরসিংহ অধুনা পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ ছিলেন সুপণ্ডিত। তিনিই ঈশ্বরচন্দ্রের নাম রেখেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্রের পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় চাকরি করতেন। পরিবার নিয়ে শহরে বাস করা তাঁর সাধ্যের ছিল না। তাই বালক ঈশ্বরচন্দ্র গ্রামে মা ভগবতী দেবী ও ঠাকুমার সঙ্গে থাকতেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আসল নাম ও ছদ্মনাম
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রকৃত নাম ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে অগাধ পাণ্ডিত্যের জন্য প্রথম জীবনেই তিনি বিদ্যাসাগর উপাধি লাভ করেন। সংস্কৃত ছাড়াও বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় বিশেষ বুৎপত্তি ছিল তাঁর। তিনিই প্রথম বাংলা লিপি সংস্কার করে তাকে যুক্তিবহ ও সর্ববোধ্য করে তোলেন। তাঁর লেখক ছদ্মনাম “কস্যচিৎ উপযুক্ত ভাইপোস্য”।
বাংলা গদ্যের সার্থক রূপকার
ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যের প্রথম সার্থক রূপকার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে বাংলা গদ্যের প্রথম শিল্পী অভিহিত করেছেন।
দয়ার সাগর
বাংলার নবজাগরণের এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে পরিচিত ছিলেন ‘দয়ার সাগর’ নামে। দরিদ্র, আর্ত ও পীড়িত কেউ তার কাছ হতে খালি হাতে ফেরত যেতেন না। তাই সবাই তাই সাধারণ্যে তিনি দয়ার সাগর হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
বিদ্যাসাগর উপাধি
১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ২২ শে এপ্রিল ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় হিন্দু ল কমিটির পরীক্ষায় অসাধারণ কৃতিত্ব দেখাতে সক্ষম হন । ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ই মে ল কমিটির কাছ থেকে তিনি যে প্রশংসাপত্রটি পান, তাতে সর্বপ্রথম তাঁর নামের সঙ্গে ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিটি যুক্ত করা হয়। সংস্কৃত কলেজে বারো বছর পাঁচ মাস অধ্যয়নের পর তিনি এই কলেজ থেকে অপর একটি প্রশংসাপত্র লাভ করেন। ১৮৪১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে প্রাপ্ত দেবনাগরী হরফে লিখিত এই সংস্কৃত প্রশংসাপত্রে কলেজের অধ্যাপকগণ তাঁকে পুনরায় ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বিদ্যাসাগর সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে নিচের লিংকসমূহ দেখতে পারেন:
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর /১
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর/২
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর /৩
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর /৪
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর /৫
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর /৬
বিসিএস বাংলা : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর/৭
বিদ্যাসাগর অনেক: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর কেবল একজন