বিসিএস ভাইভা ও আমার অভিজ্ঞতায় সফলতার কৌশল
আমি দশম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিসিএস(প্রশাসন) ক্যাডার পাই। আমার প্রথম পছন্দই ছিল বিসিএস (প্রশাসন)। প্রসঙ্গত, দশম বিসিএস থেকেই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু হয়। বিসিএস পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বারের ভিত্তিতে প্রকাশিত তালিকা দেখে মনে হয়েছিল, বিসিএস (পররাষ্ট্র) ক্যাডারেও টিকে যেতাম, যদি প্রথম পছন্দ দিতাম। অথচ, আমি একজন মধ্যমানের ছাত্র এবং জীবনে কখনও প্রথম বিভাগ পাইনি। তবে চাকুরিতে প্রবেশের পর যেসব পরীক্ষা দিয়েছি সবগুলোতে ভালো করেছি। এর কারণ হচ্ছে জেদ; জেদ আমার আত্মবিশ্বাসের হৃদপিণ্ডটা বউয়ের মতো নিষ্ঠুর মমতায় দখল করে নিয়েছিল।


ভাইভাতে কী প্রশ্ন করা হয় বা হবে, কিংবা ভাইবা পরীক্ষায় কীভাবে যেতে হয় বা আসতে হয় এবং আমার আচরণই বা কী হওয়া উচিত সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও কিছুদিন পর তা অবহেলা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে গ্রামের একটি বাড়িতে লজিং থেকে লেখাপড়া করেছি। আমি, বিসিএস পাস কোনো অফিসারকেও চিনতাম না। নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সত্যয়ন করেছি এক ডাক্তার কাছ থেকে এবং প্রতিটি স্বাক্ষরের জন্য তাকে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়েছে।
সহপাঠিদের অনেকে বলতেন, এই প্রশ্ন আসবে, ওই প্রশ্ন আসবে; এটা পড়ো, ওটা পড়ো না। আমার পিতামহের এক ভাই আবুল কালাম আজাদ ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কলেজের প্রফেসর। তিনি থাকতেন চট্টগ্রাম শহরে। তাঁর বাসায় আমাদের যাতায়াত ছিল না বলেই চলে। লেখাপড়া করে সরকারি কলেজের শিক্ষকতার চাকুরি হওয়ার পর আজাদ সাহেব আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন। ভাইভার কিছু দিন আগে তাঁর বাসায় গেলাম। চোখমুখে দেখে বোঝা গেল তিনি আমাকে দেখে বিরক্ত হয়েছেন। পাত্তা দিলাম না, যদি কিছু জানতে পারি।কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয়। কয়েকটা টাকার জন্য মানুষ ভিক্ষুক হয়, কত অপমান সহ্য করে, জানার জন্য আমি করলে ক্ষতি কী?
তিনি বললেন, কী জন্য এসেছে?
বিসিএস ভাইভাতে কী প্রশ্ন করা হয় তার অভিজ্ঞতা নিতে এসেছি ? আমি বললাম।
তিনি বললেন, এ প্রশ্ন করার জন্য এত কষ্ট করে এখানে না এসে বাসায় গিয়ে ভালোভাবে লেখাপড়া করো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, যেতে কষ্ট হবে। রিকশা ডেকে দেব?
শুনেছি, ভাইভা পরীক্ষায় কী প্রশ্ন করা হয় তা কেউ বলতে পারে না। এক একজন একেক রকম প্রশ্ন করেন, এর কোনো সিলেবাস নেই। এসব শুনে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ভাইভা বোর্ডকে এমন সুকৌশলে প্রভাবিত করব, যাতে তারা আমার জানা বিষয়ের উপরই আমাকে প্রশ্ন করার জন্য প্রাণিত হয়ে উঠেন।
তা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব, যদি আমি ভাইভা বোর্ডের সদস্যদের, আমার জানা বিষয়ের দিকে নিয়ে যেতে পারি। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে এমন কিছু বিষয় এবং তথ্য ঢুকিয়ে দেব, যাতে তাঁরা আকৃষ্ট হন, ঠিক মাছ যেমন আকৃষ্ট হয় বড়শিতে গেঁথে দেওয়া খাবারে।
কিন্তু মানসিক বিষয়?

আমার সম্পর্কে আমি ভালোভাবে জেনে নিলাম আমার কাছে। মনে মনে ঠিক করে নিলাম, আমাকে আমি কীভাবে উপস্থাপন করব। কীভাবে নিজের পরিচয়কে বিনয়তা, কিন্তু ঐতিহ্যিক আকর্ষণের সঙ্গে উপস্থাপন করব? দীপ্ত হলাম, কোনো অবস্থাতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ব না। যেই প্রশ্ন করুক, একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও, আমি ভাইভা বোর্ডকে আমার জানা বিষয়ের দিকে নিয়ে আসতে সক্ষম হব। অধিকন্তু, ভাইভা পরীক্ষার কোনো সিলেবাস নেই, নেই বলে তা আমার জন্য আরো সুবিধাজনক হলো। বোর্ডের সদস্যবর্গ সিলেবাসহীন বিশাল ক্ষেত্র থেকে প্রশ্ন খুঁজতে গিয়ে আমার মতো সময় নষ্ট করার সময় পাবেন না। কারণ তারা চাকুরি করেন, তাদের আরো অনেক কাজ আছে। আমার কিন্তু চাকুরি নেই, সিলেবাসহীন বিশাল ক্ষেত্রে তাঁদের চেয়ে আমারই বেশি অবগাহন করার সুযোগ।
ধার্য তারিখের একদিন আগে ভাইভাতে অংশগ্রহণের জন্য ঢাকা রওয়ানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কয়েক জন সুহৃদ বললেন, ঢাকার রাস্তা ভালো না, তুমি কমপক্ষে দুদিন আগে চলে যাও। তাই করলাম। সোমবার ছিল আমার ভাইভা। রওয়ানা দিলাম শুক্রবার রাতে। কুমিল্লা গিয়ে গাড়ি থেমে গেল, রাস্তায় দুর্ঘটনা হয়েছে। তাই রাস্তা বন্ধ। শনিবার বিকেলে ঢাকায় পৌঁছলাম। উঠলাম, আহমদ ছফার বাংলা মটরের বাসায়।
তাঁকে বললাম, বিসিএস ভাইভাতে কী প্রশ্ন করা হতে পারে?
তিনি সিগারেটে টান দিয়ে বিরক্ত হয়ে বললেন, একজন শিক্ষিত মানুষ আর একজন শিক্ষিত মানুষের উপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ফলানোর জন্য যত রকম বেহায়া কথা বলতে পারে, তত রকম প্রশ্ন তোমাকে করতে পারে। বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় আমলারা থাকেন, ভাইভা যেসব আমলারা নেয়, অন্তত বাংলাদেশের জন্য বলতে পারি- তারা কিন্তু তোমার চেয়ে বেশি জানে তা নয়। আমলাদের মাথা গামলা, ওখানে ঘোলা জলই বেশি থাকে। তারা তোমার চেয়ে পদমর্যাদায় উন্নত, কিন্তু মস্তক মর্যাদায় অবনত; এটি ভুল প্রমাণ করার জন্য তোমাকে প্রশ্ন করবে এবং পরাজয় বরণ না-করা পর্যন্ত তোমাকে ছাড়বে না। যদি সম্ভব হয়, একটি সম্মানজনক অবস্থানে এসে পরাজয় বরণ করে নিও।
আমি বুঝলাম, ভাইভাতে কী প্রশ্ন করা হবে সেটি যারা ভাইভা নিচ্ছেন, তারাও বলতে পারেন না। যদিও তারা কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে আসেন, যেমন আমি যাই। কিন্তু ঘটনা এবং পরিবেশের কারণে প্রশ্নের ধরন-ধারণ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, শেষের দিকের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও বলব না। সব প্রশ্নের উত্তর বলে দিলে তারা সবজান্তা ভেবে ইনফিরয়রিটি কমপ্লেকে ভুগতে পারেন। আবার না-জানার ভান করলে মূর্খ ভেবে বের করে দেবে। বুড়ো বয়সে এসে ভাইভা বোর্ডে বসতে বসতে আমার এক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে- আসলে যারা ভাইভা নিতে আসনে, এদের চেয়ে যার দিতে আসেন তারা অনেক বেশি জানেন।
এগারোটা বিশ মিনিটে আমার ডাক পড়ল। আমার মধ্যে কিছুটা চাঞ্চল্য জেগে উঠে, কিন্তু অস্থিরতা মোটেও নেই। আমার মনে পড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হওয়ার কথা। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে আমার চাকুরি হতেই হবে, এর বিকল্প কিছু নেই। এজন্য আমার দৃঢ়তা থাকতে পারে, অস্থিরতা থাকবে কেন? আমি ইংরেজি কম জানি, কম জানি মানে খুব কম। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম, থ্যাংক ইউ দেব না, ধন্যবাদ দেব। ওয়েলকাম বলব না, স্বাগত বলব। যদি জানতে চান বাংলায় কেন, তখন বলব-সর্বস্তরে বাংলা চালুর সরকারি নির্দেশনা আছে তাই।
এখন যারা ভাইভা দিতে যাবেন, তারা বলবেন, ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বস্তরের বাংলা ভাষা চালু করার নির্দেশ দিয়ে এক প্রজ্ঞাপনে লিখেছেন, “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে সরকারের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। বাংলা আমাদের জাতীয় ভাষা। তবুও অত্যন্ত দুঃখের সাথে লক্ষ করছি যে, স্বাধীনতার তিন বৎসর পরেও অধিকাংশ অফিস-আদালতে মাতৃভাষার পরিবর্তে বিজাতীয় ইংরেজী ভাষায় নথিপত্র লেখা হচ্ছে। মাতৃভাষার প্রতি যার ভালবাসা নেই, দেশের প্রতি যে তার ভালবাসা আছে একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দীর্ঘ তিন বৎসর অপেক্ষার পরও বাংলাদেশের বাঙ্গালী কর্মচারীরা ইংরেজী ভাষায় নথিতে লিখবেন সেটা অসহনীয়। এ সম্পর্কে আমার পূর্ববর্তী নির্দেশ সত্ত্বেও এ ধরণের অনিয়ম চলছে। আর এ উচ্ছৃঙ্খলতা চলতে দেয়া যেতে পারে না।”
রুমে ঢুকে সালাম দিলাম।
বোর্ডের চেয়ারম্যান একজন আর্মি অফিসার। বেশ চমৎকার চেহারা। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বসুন।
ধন্যবাদ স্যার, বলেই আমি বসে পড়লাম।
বসার পর বোর্ডের সদস্যগণের দিকে তাকালাম। সবার মুখে গর্বিত ভাব। ভাইভা নিতে পারা আসলেই গর্বের।
চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আপনার জামাটা খুব সুন্দর?
ধন্যবাদ স্যার।
আপনার দাদার নাম কী? চেয়ারম্যান সাহেব আবার প্রশ্ন করলেন।
মৌলানা গোলাম শরীফ।
তিনি তো বিখ্যাত লোক ছিলেন, তার বাবার নাম?
বললাম।
তার দাদার নাম?
জানি না, স্যার।
আপনি তো অনার্স অ্যাপিয়ার্ড, রেজাল্ট দিয়েছে?
আমি সনদ দেখালাম।
রেজাল্ট শব্দের বাংলা কী?
ফল।
আমরা তো জানি ফলাফল, চেয়ারম্যান সাহেবের বাম দিকে থাকা এক সদস্য বললেন।
ফলাফল অর্থ ফল আর অফল।
চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আপনার প্রিয় নেতা?
এই প্রশ্ন শুনে আমার মন খুশিতে বোর্ডের চেয়ারম্যান হয়ে গেল। হাসি উপছে উঠতে চাইছে, কিন্তু উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলাম না। স্বাভাবিক থাকতে হবে। আমি ঠিক করে এসেছি এই প্রশ্নের উত্তর, মুহূর্তের মধ্যে দিয়ে দিতে পারি, কিন্তু না-দিয়ে অনুরোধ করলাম, স্যার, একটু সময় দিন?
দশ সেকেন্ড। আমি ভাবার ভান করে দশ সেকেন্ড চোখ বন্ধ করে রাখার পর বললাম, হিটলার।
কে? চেয়ারম্যান সাহেব আতকে উঠলেন বিস্ময়ে। প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সহজ সুযোগ আমি ছাড়লাম না।
বললাম, এডলফ হিটলার।
আমি এডলফ হিটলার সম্পর্কে এত ভালোভাবে শিখেছি যে, তাঁর সম্পর্কে বাংলাদেশের কেউ এমন প্রশ্ন করতে পারবেন না, যে প্রশ্নের উত্তর তিনি জানেন, কিন্তু আমি জানি না।
বাম পাশের জন বললেন, কী বলছেন এসব? এ রকম খারাপ লোক যার প্রিয় নেতা, সে ভালো হয় কীভাবে? চোরে চোরে মাসতুতো ভাই। আপনার লজ্জা হলো না, এমন একটা নেতা প্রিয় বলতে?
চেয়ারম্যান সাহেব আর্মি-ম্যান। তিনি সদস্য সাহেবকে ধমক দিয়ে বললেন, থামুন আপনি, আমিই প্রশ্ন করছি। মাঝখানে ঢুকবেন না। তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, কেন হিটলার আপনার পছন্দ? তিনি তো লাখ লাখ লোক হত্যা করেছেন।
আমি জানি, বাংলাদেশের আর্মিরা ইসরাইল বিরোধী, এও জানি, হিটলারকে কেউ পছন্দ করেন না, কিন্তু কেন পছন্দ করেন না- তার কারণ তারা নিজেরাও জানেন না। পরাজিতরা সবসময় ঘাতক এবং নৃশংস, হিটলারের বেলাতেও তা ঘটেছে। অথচ, মিত্র বাহিনী, অক্ষ বাহিনীর চেয়ে পাঁচগুণ বেশি লোক হত্যা করেছে।
আমি বললাম, হিটলারের কারণে — তারিখ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু না হলে ভারত হয়তো এখনো ব্রিটিশের অধীনে থেকে যেত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পর ৪৩টি দেশ স্বাধীন হয়েছে। হিটলার সব মিলিয়ে — লোক হত্যা করেছেন, কিন্তু অক্ষশক্তি হত্যা করেছে — জন। তবে, স্যার এটি আমার জন্য কোনো বিষয় নয়।
তাহলে আপনার বিষয় কী?
হিটলারের য্দ্ধু ঘোষণা আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোর স্বাধীনতাকে সহজতর করে দিয়েছে।
বাহ, দারুণ বলেছেন; চেয়ারম্যান সাহেবের মুখে উচ্ছ্বসিত হাসি আমার মনে সফলতার শরবত ঢেলে দিল।
আমি বললাম, স্বাগত, স্যার।
আমি প্রতিটা বাক্যে পরিসংখ্যান দিচ্ছিলাম। আমার পারিসংখ্যানিক বিবরণ শুনে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, বাংলাদেশে বর্তমানে পুলিশের সংখ্যা কত?
আমি সাধারণ জ্ঞানের বইয়ে পড়েছি ৭৯ হাজার, এটি কিন্তু কয়েক বছর খানেক আগের তথ্য। এখন নিশ্চয় বেড়েছে। আন্দাজে বলে দিলাম, ৮৮ হাজার।
কোথায় পেলেন এই তথ্য।
বিন্দুমাত্র চিন্তা না করে বলে দিলাম, সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যে।
আসলে, আমি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলেছি, কিন্তু বোর্ড আমার কথা অবিশ্বাস করলেন না। আমি ৭৯ হাজার জানি বলে, ৮৮ হাজার ঠিক হয়ে গেল। ৭৯ হাজার না জানলে আমি উত্তর দিলে মিথ্যুক হয়ে যেতাম। বুঝতে পারলাম, মিথ্যা বললে আরো বেশি জানতে হয়। চেয়ারম্যান সাহেব তার বাম দিকের লোকটির দিকে তাকিয়ে, যাকে তিনি ধমক দিয়েছিলেন, সম্ভবত যুগ্ম-সচিব বললেন, আপনি এখন প্রশ্ন করতে পারেন।
প্রশাসনে ঢুকলে কী আপনি ঘুস খাবেন?
এটি নির্ভর করবে পরিবেশের উপর। মানুষ মাত্রই লোভী, কেউ পরিবেশকে উপেক্ষা করতে পারে না, আনবিক বোমাকে উপেক্ষা করতে পারে। আমার পরিবেশ যদি আমাকে ঘুস খেতে বাধ্য করে আমি কী করব স্যার? তবে, আমার বর্তমান মানসিক দৃঢ়তা ঘুস গ্রহণের বিপক্ষে। আমার পিতা শিক্ষক, নির্দিষ্ট বেতনে কীভাবে চলতে হয় তা জানি। তবে – -।
তবে কী?
আমি দুর্নীতিকে ঘৃণা করি।
চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, আপনার প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিটলার, বলুন তো হিটলারের প্রেয়সীর নাম কী ছিল?
ইভা ব্রাউন।
তার কুকুরের নাম?
আমি জানি, হিটলারের কুকুরের নাম, কিন্তু বললাম, দুঃখিত স্যার, জানি না। কারণ, আমি বেশি জানি এমন ভাব দেখালে আমাকে নাস্তনাবুদ করে ছাড়বে। তাই অজ্ঞতা প্রকাশ করে দিলাম আগেভাগে।
আপনি ‘স্যার’ ছাড়া একটি কথাও ইংরেজিতে বলেননি, কেন? চেয়ারম্যান সাহেব জানতে চাইলেন।
আমি ইংরেজি কম জানি, স্যার।
কিন্তু ‘স্যার’ তো ইংরেজি শব্দ; এটি বললেন কেন?

আপনি ঠিক বলেছেন, স্যার। শব্দটি এখন বাংলায় আমাদের জন্য বিকল্পহীন একটি মর্যাদাকর সম্বোধন হয়ে গেছে।এর কোনো প্রতিশব্দ বাংলায় নেই। অনেকে বলেন, ‘স্যার’ শব্দের বাংলা হচ্ছে ‘জনাব’। এটি স্যার আভিধানিক অর্থ। যাদের ‘স্যার’ ডাকা উচিত কিংবা যাঁরা ‘স্যার’ সম্বোধনে অভ্যস্ত, তারা কি ‘স্যার’ ‘জনাব’ সম্বোধনে খুশী হবেন?
ঠিক আছে, আপনি আসুন, বলেই চেয়ারম্যান সাহেব ডান হাত এগিয়ে দিলেন। আমিও ডান হাত এগিয়ে দিলাম। মৃদ হাসি দিয়ে বললাম, ধন্যবাদ। চেয়ারম্যান সাহেব বললেন, স্বাগত।
এবার ভাইভা নেওয়ার অভিজ্ঞতা। এই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, ভাইভাতে প্রশ্নের যথার্থ উত্তরটা দিতে হবে। এক অক্ষরও বেশি বা কম বলবেন না। এক প্রার্থীর প্রতি প্রশ্ন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী?
প্রার্থী বললেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
হয়নি। আপনি প্রধানমন্ত্রীর নাম জানেন না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নাম শেখ হাসিনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন নন।
আরেক অভিজ্ঞতা।
এক প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হলো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নাম কী? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
এটাও হয়নি, কারণ কার্যালয়ের নামের আগে কখনও মাননীয় বসে না।
বিস্তারিত: বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল