Warning: Constant DISALLOW_FILE_MODS already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 102

Warning: Constant DISALLOW_FILE_EDIT already defined in /home/draminb1/public_html/wp-config.php on line 103
বিড়ম্বনা সীমাহীন – Dr. Mohammed Amin

বিড়ম্বনা সীমাহীন

ড. মোহাম্মদ আমীন

পত্রিকার জন্য লেখাটা শেষ করতে চারটা বেজে বিশ। রাত আর বেশি নেই।
না ঘুমোলেও চলত তবু ঘুমোতে হবে।
মাথাটা মাথার চেয়ে অনেক ভারি হয়ে গেছে।
এটি ভাল লক্ষণ নয়।
এমন হলে ঘুমোতে হয়। শরীর বিজ্ঞান কাউকে ক্ষমা করে না।
নিজাম ঘুমোতে যান আরও দশ মিনিট পর।
মানে চারটা ত্রিশ।
বিছানায় এপাশ ওপাশ হলো কমপক্ষে বিশ মিনিট।
সাতটার আগে রিং। বিরক্ত হয়ে মোবাইলে হাত দেয়।
পর্দায় চোখ দিয়ে চ্যাত্।
মন্ত্রী মহোদয়। এক্ষুণি যেতে হবে। জরুরি কাজ।
লেখার তোড়ে কাজের কথা মনেই ছিল না। প্রতিবেদনটা রাতেই করে রাখা উচিত ছিল।
লেখকরা ভুলো মনের হয়।
নিজাম বিছানা হতে সোজা বাথরুম। চোখে ঘুম এখনও প্রথম চুমোর থুথুর মত লেফটে।
চোখ খুলতে পৃথিবী জড়িয়ে আসে।
ডান হাতে সেভিংক্রিম বাম হাতে টুথপেস্ট।
মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে জনালায় চোখ দেয়।
প্রচ- কুয়াশা।
এমন কুয়াশায় লেফে লেফটে থাকার মজাই আলাদা। কেন যে চাকরি করতে গেলাম- –
টুথব্রাশ মুখে দিয়ে নাড়তে থাকে নিজাম।
কেমন যেন লাগছে, অন্য রকম স্বাদ।
আয়নায় চোখ রেখে দাঁতগুলো ফাঁক করে।
ভুল হয়ে গেছে।
শেভলন টুথব্রাসে বসিয়ে মুখে ফুরে দিয়েছে।
গোলামের বাচ্চার মত কাজ হয়েছে। বউয়ের গালি।
জিহবা জ্বলছে।
শালার, তাড়াতাড়ি করতে গেলে সবসময় ঝামেলা হয়। এজন্য কখনও তাড়াতাড়ি করতে নেই।
স্লো এন্ড স্টেডি উইনস দ্যা রেইজ। এখানে কিন্তু এ প্রবাদ সত্য নয়।
এটি কেবল খরগোশ আর কচ্ছপের জন্য সত্য। মন্ত্রী ডাকলে প্রবাদ-টবাদ সব এলোমেলো হয়ে যায়।
আবার রিং করেন মন্ত্রী।
তাড়াতাড়ি যেতে হবে।
তাড়াতাড়ি যেতে হলে তাড়াহুড়ো করা যাবে না।
তাড়াতাড়ি যাবার জন্য নিজাম তাড়াতাড়ি না করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাড়াতাড়ি না করে পারছে না।
আবার রিং করেন মন্ত্রী মহোদয়।
মুখে হাত দেন নিজাম।
আঠা-আঠা ভাব; মানে টুথপেস্ট।
গালেরটা দাঁতে, দাঁতেরটা গালে; এগুলো কী হচ্ছে!
কী হচ্ছে এগুলো! গালে চড় দিতে ইচ্ছে করছে। গালে চর দিলে নাকি আক্কেল খুলে যায়।
এখন চর দেয়ার সময় এবং সুযোগ কোনটা নেই।
ভুল শুধরে রেজর চালাতে গিয়ে ঘ্যাচাং।
জামির নিচে কেটে গেছে।
রক্ত পড়ছে। বউ দেখলে চিল্লাচিল্লি শুরু করবে।
আফটার শেভ দিয়ে ক্ষত চেপে ধরে নিজাম।
তিন মিনিটের অধিক চলে যায় এভাবে। এক সেকেন্ড যেখানে নেই সেখানে একশ আশি সেকেন্ড।
এমনটি হতো না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে উটকো ঝামেলায় পড়তে হল।
কোন রকমে গোসলটা করে বেরিয়ে পড়ে নিজাম।
নাস্তা, বউয়ে প্রভাতগালি কোনটা থামাতে পারে না।
ভোরে তেমন যানজট নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে যায় সচিবালয়।
লিফটে উঠে লিফটময়। একটা দারুন জায়গা লিফট।
এত অল্প পরিসরে স্বল্প সময়ের জন্য খুব কাছাকাছি এত মানুষের অবস্থান আর কোথাও দেখা যায় না।
একটা মহিলাও আছে।
লিফটের দর্শনই আলাদা। মেয়ে থাকলে আকর্ষণটা চাপা লজ্জায় পরিণত হয়। বুদ্ধিমান পুরুষেরা এমনভাবে দাঁড়ায় যাতে আয়নার মেয়েটার চেহারা দেখা যায়। বুদ্ধিমানেরা নিচের দিকে চোখ রেখে মেয়েদের পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল চাটে।
বৃদ্ধাঙ্গুল নাকি শরীরের পুরো অবয়বের সারাংশ।
কী লজ্জা, তিনবার সুরা ইখলাস।
পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখে বলে দেয়া যায় পরিসংখ্যান।
চুলের রঙ, দাঁতের ফাঁক, ঠোঁটের কম্পন, বুকের সাইজ।
নিজাম আয়নার দিকে নয়, নিচের দিকে মহিলার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলে।
হঠাৎ চোখ যায় নিজের জুতোর দিকে।
দুই পায়ে দুটো জুতো।
ওহ মাই গড।
মন্ত্রীর সাথে মিটিং করতে হবে, আন্তর্জাতিক চুক্তি হবে, অনেক বিদেশি থাকবে।
লিফট থেকে নেমে ড্রাইভারকে ফোন দেয় নিজাম: তাড়াতাড়ি জুতো নিয়ে এসো।
তারপর সোজা মন্ত্রীর কক্ষে। তিনি একগাদা কাগজে ডুবে। চোখ না তুলে সালামের জবাব দিলেন: তাড়াতাড়ি প্রতিবেদনটা নিয়ে এসো।
এক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদনটা তৈরি করে ফেলেন। লেখকদের এ একটা সুবিধা।
যতই ভুলো মনের হোক না, কাজ ঠিক সময়ই তুলে দিতে পারে।
মিটিং শুরু হয়ে গেছে।
নিজাম মন্ত্রীর কাছাকাছি।
অনেকে তার দিকে চেয়ে। ব্যাচম্যাটরা মুচকি হাসছে। জুনিয়র এমন কি সিনিয়রদের চোখেও কৌতুক।
সবার চোখ তার দিকে।
কী ব্যাপার?
গালে হাত দেয় নিজাম। ক্ষতস্থানের তুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।
এমনটি সবার হতে পারে। হাসার কী হল। আপন মনে সান্তনা খুঁজে নিজাম।
কিছুক্ষণ পর মন্ত্রী মহোদয় কাছে ডাকেন।
এগিয়ে যায় নিজাম।
কানে মুখ রাখেন মন্ত্রী: তুমি কিন্তু উল্টো জামা পড়েছো।
লজ্জায় চোখ দুটো ঢাকতে গিয়ে আরও লজ্জা পেয়ে যায়। এত বড় সভায় চোখ ঢাকার লজ্জা আরও বেশি।
তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকে জামাটা সোজা করে বেরিয়ে আসতে কপাল দেয়ালে লেগে যায়। টাস।
ঝিম ঝিম করে উঠে শরীর।
আয়নায় চোখ দিয়ে বিমূঢ়। কপালে বিরাট আম।
কপালে আম, গালে ক্ষত, চোখে ঘুমহীনতার লালাভতা।
আবার পায়ে চোখ যায়। জুতো দুটো যমজ নয়। পরস্পরকে উপহাস করছে।
পাগল হয়ে গেল নাকি নিজাম!
এখন কী করি? কীভাবে সভায় যাই এত বড় আম নিয়ে- নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে নিজাম।
মন খুলে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার।
বাথরুম হতে এসে চেয়ারে বসে। আলোচনা এখন চরমে।
এ সময় এক পাটি জুতো নিয়ে ঢুকে ড্রাইভার।
নিজাম সাহেবের দিকে এগিয়ে দিতে সবাই হেসে উঠে।
সভার চোখ নিজামের পায়ে, বিদেশিরাও তাকিয়ে।
তুমি জুতোও উল্টো পড়ে এসেছো!
মন্ত্রীর কথা কানে যেন গরম মধু ঢেলে দেয়। এর মিষ্টতা ঈশ্বরের জাহান্নাম।
আরো বধ্বিস্ত হয়ে পড়ে নজিাম।
বধ্বিস্ত নিজাম লজ্জার আগুনে ঘেমে ঘেমে একাকার।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *