ড. মোহাম্মদ আমীন
১. ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ : ৮ই এপ্রিল
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে চরম বীরত্ব এবং সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের স্বীকৃতিস্বরূপ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মে ফরিদপুর জেলার পূর্বতন বোয়ালমারী উপজেলা বর্তমান মধুখালী উপজেলার প্রাক্তন সালামতপুর, বর্তমান রউফ নগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল শাহাদাত বরণ করেন। সাত জন বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবধারীদের মধ্যে তিনিই প্রথম শাহাদাত বরণ করেন।
মুন্সি আব্দুর রউফের বাবা মুন্সি মেহেদি হাসান ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাতা মুকিদুন্নেসা চিলেন গৃহিনী। তাঁর ডাকনাম ছিল রব। তিনি ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই মে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে যোগ দেন। সেসময় চাকুরি পাওয়ার জন্য তাঁকে ৩ বছর বেশি বয়স দেখাতে হয়েছিল। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চের আগে তিনি চট্টগ্রামে ১১ উইং-এ মাঝারি মেশিনগান ডিপার্টমেন্টের ১ নং মেশিনগান চালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি-মহালছড়ি জলপথে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই এপ্রিল পাকিস্তনি বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য মর্টার, মেশিনগান ও রাইফেল নিয়ে সাতটি স্পিডবোট এবং দুইটি লঞ্চ সহযোগে বুড়ি ঘাটের মুক্তিবাহিনীর নতুন প্রতিরক্ষা ঘাঁটিকে বিধ্বস্ত করার জন্য এগিয়ে আসতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছেই তারা আক্রমণ শুরু করে। প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার আব্দুর রউফ কৌশলগত কারণে পশ্চাৎপসারণের সিদ্ধান্ত নিলেন। পাকিস্তানি বাহিনী তখন আরো এগিয়ে। সকলে একযোগে পিছু হটতে থাকলে সবাইকে মরে যেতে হবে ভেবে আব্দুর রউফ পিছু হটলেন না। সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিতে নিজ পরিখায় দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি স্পিডবোটগুলোকে লক্ষ্য করে অনবরত গুলি করে সাতটি স্পিড বোর্ড ডুবিয়ে দিলেন। এসময় পাকিস্তানি বাহিনীর নিক্ষিপ্ত একটি মর্টারের গোলা রউফের বাঙ্কারে এসে পরে এবং তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর আগে সহযোগী যোদ্ধারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে যায়। আব্দুর রউফের আত্মত্যাগের কারণে ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে তাঁকে সমাহিত করা হয়। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে সিপাহি মুন্সি আব্দুর রউফকে অনরারি ল্যান্স নায়েক পদে মরণোত্তর পদোন্নতি দেয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ।
৭. বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর : সপ্তম শহিদ বীরশ্রেষ্ঠ
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ সমগ্র : লিংক
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ : মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার