বৃত্তি ও পেশা
বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানমতে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত ফারসি ‘পেশা’ শব্দের অর্থ— জীবিকার উপায় ও বৃত্তি। অন্যদিকে সংস্কৃত ‘বৃত্তি (বৃৎ+তি)’ শব্দের অর্থ— ধর্ম বা প্রকৃতি (মনোবৃত্তি)। স্বভাব (যাযাবরবৃত্তি)। আচরণ। পেশা। অক্ষরসংখ্যাদ্বারা নির্দিষ্ট ছন্দ। শিক্ষার্থীকে প্রদত্ত অর্থসাহায্য (ছাত্রবৃত্তি)। অর্থপ্রকাশের ক্ষেত্রে শব্দের অন্তর্নিহিত শক্তি (লক্ষণবৃত্তি)। ব্যাখ্যান বা টীকাটিপ্পনী।
অর্থ পর্যালোচনায় দেখা যায়, পেশার চেয়ে বৃত্তির অর্থপরিধি ব্যাপক। তবে আমাদের আলোচ্য বিষয় সীমাবদ্ধ থাকে জীবিকার উপায় নিয়ে। এ বিবেচনায় ‘বৃত্তি’ ও ‘পেশা’ সমার্থক মনে হলেও তা সর্বক্ষেত্রে ঠিক নয়। পেশার সঙ্গে দক্ষতা, কিন্তু বৃত্তির সঙ্গে স্বভাব বা আচরণের সম্পর্ক নিবিড় থাকে। যেমন: কুম্ভিলকবৃত্তি, চৌর্যবৃত্তি, কিন্তু চিকিৎসাপেশা, ডাক্তারিপেশা। বৃত্তি এবং পেশা দুটোর অর্থই জীবিকা (profession) হতে পারে। তবে পেশা শুধু পেশা-ই। আর বৃত্তিকে পেশা এবং নেশা বা প্রবণতা কিংবা স্বভাব বলা অধিকতর সংগত।
পেশা ও বৃত্তি শব্দদ্বয়কে সবক্ষেত্রে নির্বিচারে প্রয়োগ করা যায় না। যেমন: ভিক্ষাবৃত্তি, চৌর্যবৃত্তি, কুম্ভিলকবৃত্তি প্রভৃতি বলা হলেও চালকবৃত্তি, শিক্ষাবৃত্তি, আইনবৃত্তি বলা হয় না। পেশা হচ্ছে— profession যার মূল উদ্দেশ্য সেবা দেওয়া। বৃত্তি হচ্ছে— occupation, যাতে টাকার চাহিদাটা আসল। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়ে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করাকে পেশা বলে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া কোনো প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্থ উপার্জন করাকে বৃত্তি বলে।
বৃত্তি বলতে সাধারণ একটা ধারণাকে বুঝায়। যার জন্য কোনো তাত্ত্বিক জ্ঞান বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে পেশা হচ্ছে তাত্ত্বিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়নের মাধ্যমে অর্জিত ব্যাবহারিক জ্ঞানের সমষ্টি। ভিক্ষুকের ভিক্ষা করাটা বৃত্তি। এর জন্য তাত্ত্বিক জ্ঞান বা প্রাতিষ্ঠানিক অধ্যয়ন অত্যাবশ্যক নয়। যদিও এখন এ পেশাতেও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অন্যদিকে, ডাক্তার, উকিল, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে পেশা। কারণ এজন্য পড়াশোনা ও তাত্ত্বিক এবং ব্যাবহারিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়।
সকল কাজই বৃত্তি।এখানে জনকল্যাণ বিবেচনা করা হয় না। যেমন: চুরি করা, ভিক্ষা করা ইত্যাদি । আর পেশ হলো কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে জ্ঞান অর্জন করে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজে নিযুক্ত হওয়া। যেমন: ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক ইত্যাদি। বৃত্তির জন্য কোনো তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, কিন্তু পেশার জন্য তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের প্রয়োজন ।
অনুতাপ ও পরিতাপ
বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত অনুতাপ (অনু+তপ্+অ) শব্দের অর্থ অনুশোচনা, আফসোস। অন্যদিকে, বাক্যে বিশেষ্য হিসেবে ব্যবহৃত সংস্কৃত ‘পরিতাপ (পরি+তাপ)’ শব্দের অর্থ মনস্তাপ, দুঃখ, খেদ, আফসোস প্রভৃতি। অভিধানের অর্থ বিচার করলে দেখা যায়, অনুতাপ ও পরিতাপ পরস্পর সমার্থক। অধিকন্তু, শব্দদুটি অভিন্ন পদ এবং বানানে অক্ষর ও বর্ণ সংখ্যা সমান হওয়া উচ্চারণ আর শ্রুতিপ্রকৃতিও প্রায় অভিন্ন। তাই বাক্যে সাধারণভাবে শব্দদুটো সমার্থক হিসেবে নির্বিচারে ব্যবহার করা যায়। যেমন: এটি বড়োই পরিতাপের বিষয়। এটি বড়োই অনুতাপারে বিষয়। উভয় বাক্য অভিন্ন অর্থ এবং প্রায় একই মাধুর্য দেয়। কিন্তু, লেখালেখি ও কথোপকথনে পরিতাপ শব্দটি অধিক ব্যবহৃত হয়। তবে শব্দদুটি ব্যবহারের একটি অলিখিত নিয়ম রয়েছে এবং সেটি হলো—যেখানে, দুঃখটা বেশি এবং সরাসারি নিজের ওপর প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সেক্ষেত্রে সাধারণত ‘অনুতাপ’ শব্দটি অধিক কার্যকর।
বিসিএস প্রিলি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল
ড. মোহাম্মদ আমীনের লেখা বইয়ের তালিকা
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক
বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন/১
কি না বনাম কিনা এবং না কি বনাম নাকি
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
ভূ ভূমি ভূগোল ভূতল ভূলোক কিন্তু ত্রিভুবন : ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ
মত বনাম মতো : কোথায় কোনটি এবং কেন লিখবেন
প্রশাসনিক প্রাশাসনিক ও সমসাময়িক ও সামসময়িক
লক্ষ বনাম লক্ষ্য : বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন
ব্যাঘ্র শব্দের অর্থ এবং পাণিনির মৃত্যু
যুক্তবর্ণ সরলীকরণ আন্দোলন : হাস্যকর অবতারণা