কীভাবে হলো দেশের নাম (ইউরোপ)
ড. মোহাম্মদ আমীন
বেলারুশ (Belarush)
বেলারুশ এর সরকারি নাম বেলারুশ প্রজাতন্ত্র। এটি মধ্য পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত প্রজাতন্ত্র। এর উত্তরে ও পূর্বে রাশিয়া, দক্ষিণে ইউক্রেন, পশ্চিমে পোল্যান্ড এবং উত্তর-পশ্চিমে বাল্টিক প্রজাতন্ত্র লিথুয়াানিয়া ও লাটভিয়া। মধ্যযুগ থেকে বেলারুশ অঞ্চলটি পোল্যান্ডের ডিউক, লিথুয়ানিয়ার ডিউক এবং পোলীয়-লিথুয়ানীয় কমনওয়েলথসহ বিভিন্ন বিদেশি শক্তির অধীনে ছিল। ১৮শ শতকে বেলারুশকে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কেবল ঊনবিংশ শতকের মধ্যভাগে বেলারুশে জাতীয়তাবাদী ও সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে বেলোরুশীয় সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসাবে বেলারুশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের চারটি প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের একটি ছিল। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে ২য় পোলীয় প্রজাতন্ত্রের বেলারুশ জাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলো আধুনিক সীমান্তের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বেলারুশীয় ভূমিগুলোর সম্পূর্ণ একত্রীকরণ সংঘটিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলারুশের এক-চতুর্থাংশ লোকের মৃত্যু ঘটে এবং দেশটি অর্ধেকেরও বেশি সম্পদ হারায়। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ জুলাই বেলারুশের আইনসভা দেশটির সার্বভৌমত্ব ঘোষণা করে। আগস্ট মাসে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি পায়। বেলারুশের ম্যাপ আকৃতিতে কিছু হাঁসের মতো।
বেলারুশ (Belarus) নামটি হোয়াইট রুশ (White Rus) শব্দের সমার্থক। শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে একাধিক মতবাদ প্রচলিত আছে। কথিত হয়, লিথুনিয়ার গ্র্যান্ড ড্যচির অন্তর্ভুক্ত প্রাচীন রুথেনিয়ান ভূমি ছিল কৃষ্ণ রুথেনিয়ান পৌত্তলিকদের আবাসস্থল। পরবর্তীকালে খ্রিস্টান ধর্মে পরিবর্তনকারী দাসগণ সংখ্যাঘরিষ্ট হয়ে উঠে। তারা ছিল হোয়াইট কিংবা সাদা চামড়ার লোকদের নিয়ন্ত্রণাধীন। সাদা চামড়ার লোকদের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিলেন বলে তাদের ‘বেলারুশ’ বা ‘শ্বেতাঙ্গদের অধীন’ বলা হতো।
আর একটি মতবাদ হচ্ছে, স্থানীয় স্লাভিক জনগণ সাদা পোশাক পড়তেন। তাই তাদের বেলারুশ বলা হতো। তৃতীয় অভিমত হচ্ছে, প্রাচীন রাশ অঞ্চলটি তাতার বিজেতারা দখল করতে পারেনি। তাই এটাকে অকলঙ্কিত বা কলঙ্কমুক্ত হিসাবে সাদাদেশ বা বেলারুশ বলা হতো। চতুর্থ মতবাদ হচ্ছে, ১২৬৭ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে যে সকল এলাকা মোঙ্গলরা দখল করতে পারেনি সে অঞ্চলগুলো হোয়াইট রাশ (White Rus) নামে পরিচিত ছিল। এক্ষেত্রে সাদা শব্দটি মোঙ্গল অত্যাচার হতে মুক্ত পবিত্র স্থান বা কলঙ্কমুক্ত নির্দেশ করেছে।
বেলারুশের মোট আয়তন ২,০৭,৫৯৫ বর্গকিলোমিটার বা ৮০,১৫৫ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ১.৪%। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, বেলারুশের জনসংখ্যা ৯৪,৮১,০০০ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৫.৮ জন। আয়তন বিবেচনায় বেলারুশ পৃথিবীর ৮৫-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ১৪২-তম জনবহুল দেশ। সরকারিভাবে বেলারুশের অধিবাসীদের বেলারুশিয়ান বলা হয়। সরকারি ভাষা বেলারুশিয়ান ও জার্মান এবং জাতীয় ভাষা বেলারুশিয়ান। ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, ৫৮.৯% বেলারুশিয়ান প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে বিশ্বাসী, তন্মধ্যে ৮২% খ্রিস্টান। বাকিরা মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। জাতিগতভাবে ৮০% বেলারুশিয়ান। বাকিরা অন্রান্য সংখ্যলঘু নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীভুক্ত।
২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের হিসাবমতে, বেলারুশের জিডিপি (পিপিপি) ১৬৬.৫৩৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১৭,৮৫৯ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ৬২.০২০ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৬,৫৮৩ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম বেলারুশিয়ান রুবেল। রাজধানী মিন্ক।
১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন হতে স্বাধীনতা লাভ করে। উল্লেখ্য, প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন বিভক্ত হয়ে রাশিয়া, ইউক্রেন, জর্জিয়া, বেলরুশিয়া, উজবেকিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইযান, কাজাখাস্তান, কিরগিজস্তান, মলদোবা, তুর্কমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া- নামের ১৫টি প্রজাতন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জুন বেলারুশের পতাকা প্রথম গ্রহণ করা হয়। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি পতাকাটা কিছুটা পরিবর্তন করে পুনরায় গ্রহণ করা হয়।
চেরনোবিল তেজষ্ক্রিয়তায় বেলারুশের ২৩% ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। যার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে হয়েছে ২০ লাখের অধিক লোককে। বেলরুশের অধিকাংশ স্মৃতিস্তম্ভ লেনিনের। প্রত্যেক শহরে লেনিনের নামে সড়ক রয়েছে। প্রিপাইয়াত ন্যাশনাল পাক একমাত্র স্থান, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক ফ্লাডপ্ল্যানওক ফরেস্ট (Prehistoric floodplain oak forests) রয়েছে । বেলরুশ ন্যাশনাল লাইব্রেরি পৃথিবীর কয়েকটি বিখ্যাত লাইব্রেরির অন্যতম। ২০-তলা বিশিষ্ট এ লাইব্রেরি ভবনের উচ্চতা ৭২.৬ মিটার, মোট আয়তন ১১,২৬,০০০ বর্গমিটার এবং ওজন ১,১৫,০০০ টন।
আলবেনিয়া (Albania) : ইতিহাস ও নামকরণ
অ্যান্ডোরা (Andorra) : ইতিহাস ও নামকরণ
আর্মেনিয়া (Armenia) : ইতিহাস ও নামকরণ
অস্ট্রিয়া (Austria) : ইতিহাস ও নামকরণ
আযারবাইজান (Azerbaijan) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র: কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।