বেলিজ (Belize) : ইতিহাস ও নামকরণ

কীভাবে হলো দেশের নাম ( উত্তর আমেরিকা)

ড. মোহাম্মদ আমীন

বেলিজ (Belize)

বেলাইজ নদী (Belize River) থেকে বেলিজ নামের উৎপত্তি। তাহলে নদীর নামটি কেন বেলাইজ বা বেলিজ রাখা হলো? অনেকে মনে করেন, মায়ান শব্দ বেলাইজ (beliz) হতে বেলিজ নামের উৎপত্তি। মায়ান ভাষায় বেলিজ বা বেলাইজ শব্দের অর্থ পঙ্কিল জল

প্রকাশক: পুথিনিলয়। উত্তর আমেরিক।

বা কর্দমাক্ত নদী। বেলিজ নামের নদীটা স্রোতময় থাকলেও গতিপথের চারিদিকের ভূখণ্ড হতে প্রচুর কাদা এসে মিশতো। তাই নদীর জল সবসময় পঙ্কিল কিংবা কর্দমাক্ত থাকতো। এজন্য নদীটির নাম হয় বেলিজ একং বেলিজ নদীর পাড়ে গড়ে উঠা ভূখণ্ডটির নাম হয় বেলাইজ।

বেলিজ নামের উৎপত্তি সম্পর্কে একাধিক প্রবাদ প্রচলিত থাকলেও তার ঐতিহাসিক ভিত্তি তেমন জোরালো নয়। তবে প্রাচীন দলিলাদি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণায় দেখা যায়, ১৬৭৭ খ্রিস্টাব্দে ডমিনিকান যাজক ফ্র্যা জোসে ডেলগাডোর জর্নালে বেলাইজ নামটি দেখা যায়। ডেলগাডো দক্ষিণ ক্যারিবিয়ান উপকূল ভ্রমণের সময় ক্যারিবিয়ান উপকূলে তিনটি নদীর নাম রেকর্ডভূক্ত করেন। নদী তিনটি হচ্ছে রিও সয়েট (Rio Soyte), রিও জিবুম (Rio Xibum)ও রিও বেলিস (Rio Balis)। ডেলগাডো বর্ণিত বেলিস হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে মায়ান শব্দ বেলিক্স বা বেলিজ (belix or beliz)এর একটি আঞ্চলিক রূপ। যার অর্থ পঙ্কিল জল।

অনেকে মনে করেন, স্কটিস জলদস্যু পিটার ওয়ালেস বেলাইজ নদীর মুখে কিছু ভূখন্ড বন্দোবস্ত নিয়ে একটি জনবসতি গড়ে তুলেছিলেন। বেলাইজ নদীর তীরে পিটার জনবসতি গড়ে তুলেছিলেন বলে নাম দেয়া হয়েছিল বেলাইজ। অবশ্য পিটার যে এখানে বন্দোবস্ত নিয়েছিলেন তার কোনো প্রমাণ এ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।  অনেকে মনে করেন,  ফ্রেঞ্চ বলাইস (French balise) হতে বেলিজ শব্দের উৎপত্তি। ফ্রেঞ্চ ভাষায় বেলাইস শব্দের অর্থ  বেকন (beacon)।

মধ্য আমেরিকার পূর্ব-উপকূলে অবস্থিত বেলিজের  মোট আয়তন ২৯,২৬৬ বর্গকিলোমিটার বা ৮,৮৬৭ বর্গমাইল।  তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ০.৭%। মোট জনসংখ্যা ৩,৪০,৮৪৪ এবং প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ১৪.১%। আয়তন বিবেচনায় বেলিজ পৃথিবীর ১৫১-তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় এটি পৃথিবীর ২১৩-তম জনবহুল দেশ। উদার

প্রকাশক: পুথিনিলয়। দক্ষিণ আমেরিকা।

ধর্মীয় স্বাধীনতা বেলিজ সরকারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ২০১০ খ্রিস্টাব্দের জরিপ অনুযায়ী  ৪০.১% বেলজিয়ান রোমান ক্যাথলিক, ৩১.৮% প্রোটেস্টেন্ট, ১.৭%  জেয়োভাস ইউটনেস (Jehovah’s Witnesses) বা আদি খ্রিস্টান, ১০.৩% অন্যান্য ধর্মবালম্ব এবং বাকি ১৫.৫% এতই উদার যে কোনো ধর্মে বিশ্বাসী নন। অন্যান্যদের মধ্যে বুড্ডিস্ট, মুসলিম, বাহাই প্রভৃতিও রয়েছে। রেকর্ড অনুসারে, ষোড়শ শতক হতে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল হতে মুসলিমদের ভৃত্য হিসাবে এখানে আনা হয়েছিল। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ১% মুসলিম। ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে এখানে আল ফালাহা নামের একটি মসজিদ উদ্বোধন করা হয়।

বেলিজ বিশ্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের দেশসমূহের অন্যতম। এখানকার জনসংখ্যার ৫২.২% মেস্তিজো, ২৫.৯% ক্রিয়োল, ১১.৩% মায়ান, ৬.১% গারিনাগু, ৩.৯% পূর্ব-ভারতীয়, ৩.৬% জার্মান, ১.২% অন্যান্য এবং ০.৩% অজ্ঞাত। এত স্বল্প আয়তনের একটি দেশে এত ভিন্ন সংস্কৃতি সত্যি বৈচিত্র্যময়। মধ্য আমেরিকার এটি একমাত্র দেশ, যার সরকারি ভাষা ইংরেজি। এখানকার ৮০% লোক ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। অবশ্য বেলিজিয়ান ক্রেয়োল (Belizean Creole /Kriol) ও স্পেনিশ ভাষাও প্রচলিত আছে। প্রায় প্রত্যেক বেলেজিয়ান কমপক্ষে তিনটি ভাষায় কথা বলতে পারেন।

২০১৫ খ্রিস্টাব্দের হিসাব অনুযায়ী বেলিজের মোট জিডিপি (পিপিপি) ৩.০২৮ বিলিয়ন এবং সে হিসাবে মাথাপিছু আয় ৮,৩২১ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১.৭৫৯ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সে মাথাপিছু আয় ৪,৮৩৪ ইউএস ডলার।

প্রকাশক: পুথিনিলয়। ইউরোপ

মুদ্রার নাম বেলিজ ডলার। বেলিজের উত্তরে মেক্সিকো, দক্ষিণ ও পশ্চিমে গুয়েতেমালা এবং পূর্বে ক্যারিবিয়ান সাগর। এর মূল ভূমি ২৯০ কিলোমিটার লম্বা এবং ১১০ কিলোমিটার প্রশস্ত।১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর দেশটি যুক্তরাজ্য হতে স্বাধীনতা লাভ করে। ইংল্যান্ডের রাণী দেশটির নিয়মতান্ত্রিক রাণী।

বেলিজ পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র দেশ যেখানে প্রাকৃতিকভাবে জাগুয়ার সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে প্রাকৃতিক অভয়ারণ্যে জাগুয়ার সংরক্ষণ করা হয় সেটি কোকসকোম্ব ওয়াইল্ডলাইফ সেঞ্চুয়ারি এন্ড জাগুয়ার প্রিজাভ (Cockscomb Wildlife Sanctuary and Jaguar Preserve)  নামে পরিচিত। পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মেসোয়ামেরিকান ব্যারিয়ার রিফ সিস্টেম (Mesoamerican Barrier Reef System) বেলিজে অবস্থিত। জন্য বেলিজ বিখ্যাত। এখানে পাওয়া গিয়েছে মায়ান সভ্যতার ৯০০ এর অধিক স্মৃতিচিহ্ন। অক্টোবর হতে এপ্রিল বেলিজ ভ্রমণের সবচেয়ে অনুকূল সময়। বেলমোপান বেলিজের রাজধানী। বেলিজ ও ম্যাপান শব্দ হতে বেলমোপান নামের উদ্ভব। দেশটির প্রাক্তন রাজধানী ছিল বেলিজ সিটি। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংসাত্বক হ্যারিকে শহরটিকে ধ্বংস করে দেয়। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সরকার রাজধানী প্রাক্তন রাজধানী বেলিজ সিটি হতে বেলমোপানে স্থানান্তর করে।

বেলিজ মধ্য-আমেরিকার সর্বোত্তরে অবস্থিত। প্রতিবছর দশ সেপ্টেম্বর বেলিজ তার জাতীয় দিবস উদ্যাপন করে থাকে। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দের ওই দিন সেন্ট জর্জেস ক্যাইয়ে যুদ্ধে (Battle of St George’s Caye) উভয়পক্ষের কোনো রক্তপাত ছাড়া স্পেনিশ

প্রকাশক: পুথিনিলয়। আফ্রিকা

ফোর্সের জায়গায় ব্রিটিশ ফোর্স প্রতিস্থাপিত হয়েছিল। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ২১ সেপ্টেম্বর বেলিজ ব্রিটিশ হতে স্বাধীনতা লাভ করে। বেলিজের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জর্জ ক্যাডল প্রাইস (George Cadle Price)। তিনি ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দের ১২ সেপ্টেম্বর হতে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেলিজের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বেলিজ-এর মানচিত্র বিশ্বের একমাত্র মানচিত্র যেখানে মূল ডিজাইন উপাদান হিসাবে মানুষের দুইজন মানুষের চিত্র রয়েছে। মাল্টার মানচিত্রের জর্জ ক্রসে সেন্ট জর্জের ছবি আছে। তবে এটি পতাকার মূল উপাদান নয়। এছাড়া ব্রিটিশ ডিফেন্ডডেন্সি মন্টসিরাত (Montserrat) ও ভার্জিন আইল্যান্ড (the Virgin Islands) এবং ফ্রেঞ্চ পলিনেশিয়ার  মানচিত্রে মানুষের চিত্র রয়েছে।


উত্তর আমেরিকা (North America) : ইতিহাস ও নামকরণ

এন্টিগুয়া এন্ড বারবুডা (Antigua and Barbuda) : ইতিহাস ও নামকরণ

 দি বাহামাস (Bahamas) : ইতিহাস ও নামকরণ

বার্বাডোস (Barbados ) : ইতিহাস ও নামকরণ

সূত্র:  কীভাবে হলো দেশের নাম, ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।

All Link

সাধারণ জ্ঞান সমগ্র

Knowledge Link

বাংলাদেশ ও বাংলাদেশবিষয়ক সকল গুরুত্বপূর্ণ সাধারণজ্ঞান লিংক

আফ্রিকা মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

ইউরোপ মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

এশিয়া মহাদেশ : ইতিহাস ও নামকরণ লিংক

Language
error: Content is protected !!