ইউসুফ খান
#বৈশ্য
march মানে হাঁটা, যেমন মিলিটারির মার্চপাস্ট; march forward! মানে এগিয়ে চলো, চরৈবেতি। যারা ঘুরে ঘুরে মাল বেচে ফরাসিতে তাদেরকে বলে marchand মা:শঁ, বাংলায় যাকে বলে মার্চেন্ট merchant. মার্চেন্ট যে জিনিস বেচে তাকে বলে marchandise মা:র্শঁ.দিজ়, বাংলায় যাকে বলে মার্চেন্ডাইস।
ব্যাপারী দোকানি বণিক ব্যবসাদার মার্চেন্ট ট্রেডার সব আলাদা জিনিস। একটু ডিকশনারি ঘাঁটলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ৱস্ vas মানে বসে থাকা, এক জায়গায় থাকা to settle down। ৱিশ্ vish মানে to move এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া। প্রৱিশ্ মানে এক জায়গা থেকে মুভ করে অন্য জায়গায় ঢুকে পড়া। যিনি সবকিছুর মধ্যে প্রবিষ্ট আছেন তিনি ৱিশ্ণু>বিষ্ণু।
সে যুগে যে সব ব্যাপারী এক জায়গায় বসে না থেকে, ব্যবসা করতে অন্য জায়গায় ৱিশ করতো মানে মুভ করতো, জায়গায় জায়গায় ঘুরে ঘুরে মাল বেচা সেই সব marchand দেরকে বলতো বৈশ্য। বৈশ্যদের পরম পিতা ৱিশ্ণু>বিষ্ণু।
শুরুতে বৈশ্যরা চাষী ছিলো, সঙ্গে গোরু ছাগলও পুষতো। নিজের চাষের মাল দূর দূর হাটে নিয়ে গিয়ে বেচতে বেচতে দেখলো এই বিশে বিশে বেচাবেচিতেই লাভ বেশি। তারপর চাষ এবং বাস ছেড়ে পরের মাল কিনে মার্চেন্টগিরি করাটাই এদের মুখ্য বৃত্তি হয়ে গেলো। বসা চাষী বসত ছেড়ে বিশুবাবু বৈশ্য হলো। আজকালকার ডোর-টু-ডোর সেলসম্যান বেচুবাবুদেরকে সেদিনের ভাষায় বলা যায় বৈশ্য।
#বেশ্যা
সাধক সাধিকার অনেক রকম হয়। এক ধরনের উচ্চমার্গীয় অরণ্যচারী সাধিকা ছিলেন, যাঁরা এক অরণ্যে এক জায়গায় থেকে সাধনা করতেন না। কিছুদিন এক জায়গায় বাস করে সেখান থেকে আবার সাধনক্ষেত্র বদলে অন্য অরণ্যে বা একই অরণ্যের অন্য জায়গায় মুভ করে যেতেন। কোনও জায়গার-মায়ায় জড়াতেন না, নো হোমসিকনেস। দেশে দেশে মোর ঘর আছে, তখন অরণ্যময় ভারত! জায়গা থেকে জায়গায় মুভ মানে ৱিশ্ করে সাধনা করা এই সাধিকারা তাই বেশ্যা।
#বেশ্যা বাড়ির মাটি
বেশ্যা সাধিকারা সামাজিক মানুষদের কাছে পরম শ্রদ্ধা লাভ করতেন। এদের কিছুদিনের বাসস্থানও সাধারণের সরল মনে পুণ্যস্থান হিসেবেই পরিগণিত হতো। তাই সাময়িক পুজোর অধিষ্ঠানকে পুণ্যত্বে উন্নীত করার জন্য বেশ্যার অধিষ্ঠানের অল্প মাটি এনে ছুঁইয়ে দেয়া হতো।
কোনও কোনও বেশ্যার সাধনার সঙ্গী সাধন পুরুষও থাকতো। আমাদের বাউল সাধনার সাধন সঙ্গিনীর মতো। সাধনক্ষেত্র বদলালে সাধনসঙ্গীও বদলাতো। প্রাচীন সমাজে এটা ছিলো নর্মাল। পরে বেশ্যাদের সাধনায় লঘুত্ব প্রবেশ করলে এবং সময়ের সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বোধ বদলে গেলে, লোকের নজর সাধনা ছেড়ে ওই বহু পুরুষ গমন ব্যাপারটাতে গিয়ে পড়লো। ফলে জনগণের সংজ্ঞায় সাধিকা বেশ্যা একদিন গণের কাছে শরীর সমর্পণ করা গণিকা প্রস্টিটিউট হয়ে গেলো। কিন্তু ‘বেশ্যা বাড়ির মাটি না হলে দুর্গাপুজো হয় না’ নামে শ্রদ্ধার সেই ঐতিহ্য আজও অন্তঃসলিলা ফল্গুধারার মতো প্রবহমান। আজ সেই অরণ্যচারিণী সাধিকা বেশ্যা নেই, তাই বেশ্যা নামে পরিচিতা নগরপ্রান্তের বারবনিতার খোলি বাড়ির উঠোন খুবলে মাটি নিয়ে আসে পুজারী, গভীর রাতে গিয়ে, পয়সার বিনিময়ে। সমাজে বেশ্যারা লোকনজরে পতিত হয়ে আজ তারা পতিতা, কিন্তু সমাজ বিজ্ঞানীর চোখে হয়তো তিনি আজও সাধিকা বেশ্যা।
ইউসুফ খান, কলকাতা, ২০২০ জুলাই ০২
সূত্র: বেশ্যারা প্রস্টিটিউট নয়, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ইত্যাদি প্রভৃতি প্রমুখ. ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
শুবাচ গ্রুপ এর লিংক: www.draminbd.com
All Links/2 শুবাচির পশ্ন থেকে উত্তর
উৎস: ব্যাবহারিক প্রমিত বাংলা বানান সমগ্র, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পবিলেকশন্স লি.
বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন
মৌলবাদ ও মৌলবাদী শব্দের অর্থ কী জানতে চাই
বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পবিলেকশন্স লি.