ইউসুফ খান
ৱরত্ word – দুটোই একই শব্দ, একই বানান, একই মানে – বলা। ‘বুড়োটা সারাদিন কী যে বিড়বিড় করে, বোঝা যায়না’। ‘বললাম কথাটা চেপে রাখ, না বড়বড় করে সবাইকে বলে দিলি’। ‘পুলিশের জেরায় বৌটা সব ভড়ভড় বলে দিলো’।

যাদের কথা বোঝা যায়না, কী যেন সব বর্বর্ করে বলে, তারা বর্বর জাতি। এরা গাছের গোড়ায় নুড়ি রেখে, গাছটাকে কী যেন সব বলে। বর্বরগুলোর পূজাতে মূরত্ নেই, শুধু বরত্ আছে। বহিরাগতদের কাছে এই হচ্ছে আদিম অধিবাসীদের ব্রত।
যে ব্রত করে সে ব্রতী। পতির মঙ্গলে নিবেদিতপ্রাণা হচ্ছে পতিব্রতা, দেশোদ্ধারের শপথ নেওয়া মহাপ্রাণ হচ্ছে দেশব্রতী, ইত্যাদি।
আসলে অরণ্যনিবাসী আদিবাসীরা প্রকৃতি উপাসক ছিলো, প্রকৃতির মূর্ত রূপ তারা বৃক্ষের মধ্যে দেখতে পেতো। এই সব মানুষদের গাছের তলে বাস, আর গাছের ফলে আশ। তাই তারা বৃক্ষ-উপাসক ছিলো। গাছের গোড়ায় একক বা যৌথ ভাবে বসে প্রকৃতির, ব্যক্তির এবং কৌমের মঙ্গল কামনায় আদিবাসীরা ওথ উচ্চারণ করতো। এই সোচ্চার ওথ-কেই বলে ব্রত করা। ‘শপথ রাখা’র মতো বলে ‘ব্রত রাখা’। গুরুসদয় দত্ত যে ব্রতচারী চালু করেছিলেন সেখানেও কিন্তু ওথগুলো যৌথ উচ্চারণে বলা হতো।
আদিবাসীরা চাষবাস শিখলে তাদের গাছপুজো ধীরে ধীরে শুধু শস্যপুজোয় রূপান্তরিত হয়। তাই চাষের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্রতের উদ্যাপন হয়। আদিতে ব্রতর সঙ্গে দেবদেবী সংস্রব ছিলোনা। মূর্তিপূজকদের প্রভাবে পড়ে পরে এতে দেবদেবীর কল্পনা ঢুকেছে, কিন্তু তাঁরা খুবই ঘরোয়া লৌকিক দেবদেবী। আধুনিক ব্রতকথার বইগুলোতে তাদের ছবিও আঁকা হয়! আর ব্রতর সেই বড়বড়ানি পরে ছড়ার রূপ নেয়।
কিন্তু আদিবাসীদের ব্রতর মূল যে ধারণা প্রকৃতিপুজো, সেটা মূর্তিপুজোর মধ্যে ঢুকে বসে আছে – নবপত্রিকা, কলাবউ, ধানের শিষ, গাছের গোড়ায় কোনও না কোনও মন্দির গড়ে তোলা প্রভৃতির মধ্য দিয়ে।
যারা ব্রত করে তারা তো জংলি মানুষ, তাদেরকে তো আর জাতে নেয়া যায়না। তাই তাদেরকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়। তাই তারা ব্রাত্য জন। প্রান্তিক মানুষ।
ইউসুফ খান, কলকাতা, ২০২০ জুন ০৪
সূত্র: ব্রত ব্রতী ব্রাত্য, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
সাপের হাঁচি, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
অসি ও মসি-র গল্প, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
না ঘরকা না ঘাটকা-র গল্প, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ঢাকাই বুলি: কলকাতার চিঠি, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
পদ্মাপারের পদবি, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ঈশ্বরচন্দ্র কেন শর্ম্মা, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ঘেটো লেটো নজরুল, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ঈশ্বরচন্দ্র কেন শর্ম্মা, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
বাঁকুড়া থেকে বগুড়া, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
বেশ্যারা প্রস্টিটিউট নয়, ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
ইত্যাদি প্রভৃতি প্রমুখ. ইউসুফ খান, শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)
শুবাচ গ্রুপ এর লিংক: www.draminbd.com
All Links/2 শুবাচির পশ্ন থেকে উত্তর
বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন
মৌলবাদ ও মৌলবাদী শব্দের অর্থ কী জানতে চাই
বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন, পাঞ্জেরী পবিলেকশন্স লি.
বহুল ব্যবহৃত কিছু শব্দের শুদ্ধ বানান/১২ ড. মোহাম্মদ আমীন