ড. মোহাম্মদ আমীন
সংযোগ: https://draminbd.com/বড়বাল/
অনেক বন্ধু এবং পরিচিত জন ইনবক্সে অনুরোধ করেছেন : ‘বড়বাল’ নামের জায়গাটি সম্পর্কে লিখতে। প্রথম আমি নামটা শুনলাম। কয়েকজন ফোনও করেছেন। একজন প্রশ্ন করলেন, “কেন এমন অশালীন (তার ভাষায়) নাম করা হলো?”। প্রত্যেকে অনুরোধ করেছেন, ‘বড়বাল’ নামের উৎপত্তি আর অর্থ নিয়ে লিখতে।
তাই কলম ধরা-
আমার জানামতে ‘বড়বাল’ নামের কোনো ইউনিয়ন বা গ্রাম বাংলাদেশে নেই। তাহলে কি নতুন কোনো ইউনিয়ন করা হয়েছে? খোঁজ নিয়ে জানলাম, এমন কিছু করা হয়নি। তো ‘বড়বাল’ ইউনিয়ন বা

‘বড়বাল’ গ্রামের কথা এতজন মানুষের মুখে এল কীভাবে? ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে জানলাম, বাংলাদেশে আসলেই ‘বড়বাল’ নামের কোনো ইউনিয়ন নেই। বড়বালা নামের একটি ইউনিয়ন আছে। এটি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার ১২ নম্বর ইউনিয়ন। মিঠাপুকুর উপজেলার ‘খোড়াগাছ’ ইউনিয়ন থেকে বিশ্বখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আমের উৎপত্তি। হাড়িভাঙ্গা আমের জন্মস্থান দেখতে গিয়ে ঘুরতে ঘুরতে একদিন বড়বালা ইউনিয়নেও চলে গিয়েছিলাম। ৫৯০৯ একর বা ৩১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ‘বড়বালা’ ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী ১৬,৩৪২। বড়বালা ছাড়াও বালাগঞ্জ নামের একটি ইউনিয়ন আছে সিলেটে। আমি ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইউএনও থাকাকালীন ওখানকার ‘বালাবাজার’ এলাকায় যেতাম মাঝে মাঝে সরকারি কাজে। কিন্তু বড়বাল নামের কোনো স্থানের নাম আমি কখনো শুনিনি।
অনেকের মতো, ‘বড়’ ও ‘বালা’ শব্দের মিলনে ‘বড়বালা’ নামের উদ্ভব। বড় শব্দের অর্থ বিশাল, খ্যাত, সম্ভ্রান্ত, জ্যেষ্ঠ প্রভৃতি। ‘বালা’ হচ্ছে একটি বিখ্যাত পদবি। ‘বড়বালা’ মানে সম্ভ্রান্ত বালা বংশ। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে বাংলাদেশের বহু অঞ্চলে বালা পদবির লোক আছে। প্রায় সর্বত্র প্রভাবশালী এবং সম্মানিত দেখা যায়। কথিত হয়, ‘বড়বালা’ নামে পরিচিত এলাকাটি বালা পদবির লোক দ্বারা ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ ও বর্ধিষ্ণু জনপদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তাই নাম হয় বড়বালা।
এখন প্রশ্ন ‘বড়বাল’ এল কীভাবে?
এভাবে যারা মাতৃভাষার বর্ণ, শব্দ বা দেশের স্থান-নাম বিকৃত করে, নাম নিয়ে ইতরামি করে, তারা যেন নিজের মায়ের সঙ্গে অমন ইতরামি করে। এরা সীমাহীন নৈতিক অধঃপতনে পতিত পশু। যাদের কাছে জননীও উপহাসের বস্তু। এসব কুলাঙ্গারদের ঘৃণা জানানোর জন্য যত ঘৃণা প্রয়োজন তত ঘৃণা আমার মাঝে সঞ্চিত নেই। তারা যেন নগণ্য হাস্যরসের জন্য মাতৃভাষাকে এমন বিকৃত না করে নিজের চেহারাটা বিকৃত করে দেয়।