ড. মোহাম্মদ আমীন, বিসিএস (প্রশাসন), ১০ম ব্যাচ
বিসিএস পরীক্ষা তিনটি ভিন্ন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ধাপের পরীক্ষা পদ্ধতি যেমন ভিন্ন তেমনি ভিন্ন প্রশ্নের ধরন ও প্রকৃতিও ভিন্ন। তবে একটি ধাপের ভালো প্রস্তুতি আপনার পরবর্তী ধাপের সহায়ক হয়- এটাই বিসিএস পরীক্ষার সহজত্ব। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় শুধু শুদ্ধ উত্তরের বৃত্ত ভরাট করতে হয়। যার যতো বেশি তথ্য মুখস্থ থাকবে, তার পরীক্ষা তত ভালো হবে এবং তার পাসের সম্ভবানা তত বেশি হবে। প্রিলিমিনারিতে ২০০ প্রশ্ন থাকে, হাতে গোনা কয়েকটি প্রশ্ন ছাড়া বাকিগুলো মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে দিতে হয়।
লিখিত পরীক্ষার মূল বিষয় হলো চিন্তা, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা এবং সৃজনশীলতা। এর সঙ্গে প্রিলিমিনারিতে মুখস্থ করা তথ্য যদি যথাস্থানে দিতে পারেন, তাহলে সোনায় সোহাগা; এক্ষেত্রে আপনি আশি ভাগ নম্বর পেয়ে যেতে পারেন। অভিজ্ঞতায় আমি তাই দেখেছি। তাই এখানে মুখস্থ বিদ্যার উপর অতিমাত্রার নির্ভরতার চেয়ে বরং বিশ্লেষণ ক্ষমতার প্রমাণক হিসেবে প্রয়োজনীয় তথ্য দিতে সচেষ্ট থাকবেন। মনের মাধুরী মিশিয়ে শুধু লিখে গেলে পঞ্চাশের উপর বেশি নম্বর পাবেন না। যারা এমন করেন তারা লিখেন ভালো, কিন্তু নম্বর পান কম; বলেন পরীক্ষা ভালো হয়েছে, কিন্তু নম্বর ভালো আসে না।
ভাইভা পরীক্ষার মূল বিষয় হচ্ছে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, স্থৈর্য, আত্মবিশ্বাস, সাহস, ইতিবাচক মনোভাব, ভাষিক জ্ঞান, প্রাণবন্ততা এবং সমৃদ্ধ তথ্যভা-ার প্রভৃতি। ভাইভা বোর্ডের কয়েকজন সদস্য ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে আপনার প্রজ্ঞা, চিন্তার গভীরতা, আচরণ, প্রাণবন্ততা, চারিত্রিক দৃঢ়তা, বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থান, চালচলন, কথন, চলন, মনোভাব, ভদ্রতা, চিন্তার ব্যাপ্তি ও স্বরূপ, ধর্মীয় মনোভাব এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি জানার চেষ্টা করেন। এসব জানার জন্য আপনাকে তাঁরা যেমন ইচ্ছা তেমন প্রশ্ন করতে পারেন। স্বর্ণকার, উত্তম স্বর্ণকার যাচাই করেই স্বর্ণ কেনেন।
সুতরাং ভাইভাতে আপনাকে কখন কীভাবে কী প্রশ্ন করা হবে, তা জানার কোনো উপায় নেই। এই উপায় খুঁজতে যাওয়া মানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বসে বালি গোণা। তা না করে বরং আপনি নিজেকে নিজের কাছে আস্থাশীল করে তোলাই হবে ভাইভাতে ভালোর করার অনত্যম হাতিয়ার।
সবচেয়ে বড়ো কথা হচ্ছে, ভাইভা মানে জীবন্ত কতগুলো প্রশ্নপত্রের সামনে বসে তাৎক্ষণিক উত্তর দেওয়া- যারা আপনাকে আপনার উত্তর হতে নানা প্রশ্ন করে ঘায়েল করতে চাইবেন এবং ঘায়েল না হওয়া পর্যন্ত আপনাকে ছাড়বেন না। তাই ভাইভাতে, বোর্ডের কাছে বিজয়ী হওয়ার প্রত্যাশা মোটেও করবেন না, প্রত্যাশা করবেন, পরাজিত হয়েও যেন চাকুরিটা হয়। এজন্য ভাইভাতে আপনাকে অনেক অনেক বেশি জানতে হবে; জানতে হবে কখন পরাজয় বরণ করতে হবে; কিন্তু এতকিছু জানার সময় তো আপনার আমার কারও থাকার কথা নয়। তাহলে উপায়? এখানে সে উপায় বাতলে দেওয়া হবে। এই অধ্যায়ে এমন কিছু প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেগুলো বিসিএস-সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আসার সম্ভাবনা প্রায় শত ভাগ।
১. আত্মপরিচয় : আত্মপরিচয় ব্যক্তির সবচেয়ে বড়ো এবং অদ্বিতীয় স্মারক। আত্মপরিচয় পরিবেশন কৌশল একজন প্রার্থীর সাধারণ প্রস্তুতিকেও নানাভাবে অসাধারণ এবং আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। ভাইভা বোর্ডে সাক্ষাৎপ্রার্থীর পরিচয় জানতে চাওয়া হয়- এটি খুব সাধারণ প্রশ্ন। তবে এ পরিচয় যত আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন, বোর্ড আপনার প্রতি তত আকৃষ্ট হবেন, দয়ার্দ্র হবেন, আর বোর্ড দয়ার্দ্র হলে আপনার পথ আপনাআপনি খুলে যাবে, পৌঁছে যেতে পারবেন লক্ষ্যস্থলে। ভাইভাতে ভালো করতে সক্রেটিসের ‘নো দাইসেল্প বাদ দিয়ে’, নিজের পছন্দ-অপছন্দের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ভালোভাবে জেনে নিন। আত্মপরিচয়কে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের জন্য নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে পারেন :
নিজের নাম যে শব্দে রাখা হয়েছে সে শব্দের অর্থ, আাপনার নামের সঙ্গে মিল আছে এমন বিখ্যাত বা কুখ্যাত ব্যক্তি সম্পর্কে ধারণা, আপনার জন্মদিবস কোন কোন বিখ্যাত ব্যক্তির জন্ম-মৃত্যু তারিখের সঙ্গে মিল আছে তাও আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে। এসব প্রশ্ন করার কারণ হচ্ছে- আপনি আপনাকে নিয়ে কত সচেতন তা জানা। প্রশ্ন করা হতে পারে আপনার পরিবার সম্পর্কে। আপনার পছন্দের কবি, সাহিত্যিক, গ্রন্থ, গান, খেলাধুলা, প্রিয় দেশ, প্রিয় রঙ, প্রিয় ফুল প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারে। তাই এসব বিষয় কেন আপনার পছন্দ তার সন্তোষজনক ব্যাখ্যা যেন দিতে পারেন তা বিস্তারিত জেনে নিয়ে ভাইভাতে যাওয়া উত্তম। শুধু তাই নয়, ভাইভাতে আপনার বৈবাহিক অবস্থা এবং প্রেম করেন কি না তাও জানতে চাওয়া হতে পারে।
চট্টগ্রামের চন্দনাইশের এক প্রার্থীর কাছে তার এলাকার বিখ্যাত কয়েকজন ব্যক্তির নাম জানতে চাওয়া হয়। প্রার্থী প্রথমে বলেছিলেন, ভাষা আন্দোললেন অন্যতম পথিক তমদ্দুন মজলিশের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের নাম। এরপর তাকে আর কারো নাম বলতে দেওয়া হয়নি। প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলনে এবং ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে ভাইভা শেষ করা হয়েছিল।
প্রিয় ব্যক্তিত্ব, প্রিয় নেতা, প্রিয় সখ ইত্যাদি বিষয়ে যে উত্তরই আপনি দেন না কেন, ওই বিষয়ে আপনার ভালো জ্ঞান থাকতে হবে। আন্দাজে বলে দিলে আপনার কপালে খারাবি আছে- বলতে হবে। এক ভাইভা বোর্ডে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার নামের অর্থ কী? প্রাথী নামের অর্থ বলল।
নামের অর্থ জানার কথা শুনে আমার একটা কথা মনে পড়ে গেল। রচনার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তির ভাইভাতে অক্সব্রিজ প্রফেসর চিকুচি বলেছিলেন, জন্মগত কৃতিত্ব কী অপরিহার্য?
রচনা বলেছিল, চেষ্টা থাকলে জন্মগত অপ্রাপ্তিকেও প্রাপ্তি দিয়ে ভরিয়ে দেওয়া যায়। আবার চেষ্টার ত্রুটি হলে জন্মগত ঐশ্বর্যও নিঃস্ব হয়ে যায়।
বোর্ডের চেয়ারম্যান আজাদ চৌধুরী রচনার নামের অর্থ জানতে চেয়েছিলেন।
পাল্টা পশ্ন করেছিল রচনা, কী ধরণের অর্থ স্যার।
আজাদ চৌধুরী বলেছিলেন, আভিধানিক অর্থ।
রচনা বলেছিল, ব্যক্তির নামের আভিধানিক অর্থ থাকতে পারে না। এটি কেবল একজন ব্যক্তির অভিধা। একটি মাত্র ব্যক্তি বা বস্তুকে চিহ্নিত করার জন্য নাম রাখা হয়। প্রত্যেক মানুষের নাম তার জন্য অদ্বিতীয় এবং ব্যক্তিটাও অদ্বিতীয়। পৃথিবীতে একই ধরণের একাধিক ব্যক্তি থাকতে পারেন। নাম ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট সত্তার সনাক্তকরণ চিহ্ন। এর কোনো অর্থ হতে পারে না।
নামের অর্থ থাকবে না কেন? জানতে চেয়েছিলেন এ কে আজাদ চৌধুরী।
রচনা বলেছিল, আজাদ শব্দের অর্থ স্বাধীনতা। অর্থ খুঁজতে গেলে, দেশে যত আজাদ আছে সবার অর্থ হবে স্বাধীনতা, ফ্রিডম। কিন্তু আপনি, স্যার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর। অন্যরা তা নন। কারো নাম আলেকজান্ডার, তার মানে তিনি বিশ্ববিজয়ী আলেকজান্ডার দি গ্রেট নন। এই নামের অনেক লোক আছে। প্রত্যেকে তার নিজস্ব পরিচয়কেই বহন করে। ‘রচনা একজন ভালো ছাত্রী’ বাক্যের অনুবাদ হবে, Rachana is a good student, Eassy is a good student, নয়। যার আভিধানিক অর্থ আছে ভাষান্তরে সে ভিন্ন শব্দ ধারণ করে। মাখন লাল দাস যদি নাম হয়, সব ভাষাতে সেটি অবিকল থাকবে। কেউ তাকে বাটার রেড স্ল্যাভ বলবে না।
খবরদার, বিসিএস ভাইভা বোর্ডে এমন করবেন না, করলেও আগে উত্তর দিয়ে সুযোগ পেলে করবেন। কেননা, বিসিএস ভাইভাতে যারা যান, তারা এতই সাধারণ মানের যে, তাদের কাছে নতুন কিছু ভুল মনে হতে পারে। তারা অক্সব্রিজের প্রফেসর চিকুচি নন, আপনার মতো ভাইভা দিয়ে চাকুরি পাওয়া সরকারি কর্মচারী মাত্র।
২. জন্মস্থান : নিজ জেলা ও উপজেলা সম্পর্কে জ্ঞান দেশপ্রেম এবং ব্যক্তির অনুসন্ধানী মনোভাবের পরিচায়ক। এজন্য নিজ জেলা ও উপজেলা সম্পর্কে প্রায় সময় প্রশ্ন করা হয়। এসব প্রশ্ন হতে প্রাপ্ত উত্তরের মাধ্যমে ভাইভা বোর্ড আপনার দেশপ্রেম, আত্মবোধ, পারিপাশির্^ক জ্ঞান, ঐতিহ্যিক বোধ, স্বাজাত্যবোধ, ঐতিহাসিক প্রজ্ঞা প্রভৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়ার চেষ্টা করেন। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভালোভাবে দেওয়ার জন্য আপনাকে আপনার নিজ জেলা ও উপজেলার আয়তন, নামকরণ, বিখ্যাত ব্যক্তিদেরজীবন ও কর্ম, নদ-নদী, গুরত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাটবাজার, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধে আপনার জেলা বা উপজেলার ভূমিকা, বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার জেলা কত নম্বর সেক্টরে ছিল প্রভৃতি মুখস্থ করে যাবেন। আপনার জেলা ও উপজেলার জেলায় যদি কোনো কবি ও সাহিত্যিক থাকেন তাদের সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। ভাইভা বোর্ডে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। এছাড়া আপনার জেলা, উপজেলা বা গ্রামের নামের সঙ্গে মিল থাকা অন্য কোনো জেলা, উপজেলা বা গ্রাম থাকলে সে বিষয়েও আপনি ধারণা নিয়ে যাবেন। যদি ভাইভা বোর্ড প্রশ্ন করেন, আপনার জেলার কয়েক জন বিখ্যাত ব্যক্তির নাম বলুন? ওই বোর্ডে যদি আপনার এলাকার কোনো ব্যক্তি থেকে থাকেন, এবং তিনি যদি বইপুস্তকে তত বিখ্যাত নাও হয়ে থাকেন, সবার শেষে হলেও তার নামটি বলবেন। কারণ, বিসিএস ভাইভা বোর্ডে আসার যোগ্যতা যাই হোক, সহজ নয়। তিনি খুশী হবেন, কাউকে সরাসরি মর্যাদা প্রদান যে কাউকে গর্বিত করে তোলে।
৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : নাম ও স্থানের পর আসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আপনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেছেন, এখানেই গঠিত হয়েছে আপনার ভিত। জন্মস্থানের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সান্নিধ্যে থাকতে হয় একজন ব্যক্তিকে। তাই এই সম্পর্কে ভালো জ্ঞান একজন ব্যক্তির ঋদ্ধিক পূর্ণতার পরিচায়ক। ভাইভা বোর্ড বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখে থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রশ্নে ভালো করতে হলে আপনাকে, আপনার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার বিভাগ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। আপনি জিজ্ঞাসিত হতে পারেন আপনার প্রিয় শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত শিক্ষক এবং কেন তিনি বিখ্যাত ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বিশ্ববিদ্যালয় এবং হলের যদি কোনো অবদান থাকে সে সম্পর্কেও ধারণা নিয়ে যাবেন। গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হতে পারে। এ বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দিতে হলে আপনার শেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাননের ইতিহাস, বর্তমান প্রশাসন, বিভাগের সংখ্যা, জাতি গঠনে আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবদান, আপনার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়েছেন এমন খ্যাতিমান ব্যক্তির জীবন ও কর্ম প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করা হতে পারে। আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হলে এর পুরো ইতিহাস জেনে নেবেন। ভালো লাগবে পড়তে এবং এবং আরো ভালো লাগবে পড়ার পর জানলে।
৪. ক্যাডার পছন্দক্রম : ক্যাডার পছন্দ নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করার সম্ভাবনা প্রায় শত ভাগ। অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, প্রায় প্রত্যেককে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। অতএব, আপনার ক্যাডার পছন্দের ক্রমের মধ্যে প্রথম কয়েকটি সম্পর্কে ভালো ধারণা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। প্রশ্ন করতে পারে ক্যাডারের ইতিহাস ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে। শুধু তাই নয়, শেষ পছন্দের ক্যাডার নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। পছন্দের ক্যাডারে নিয়োগ পেলে কীভাবে তা পরিচালনা করবেন এবং এ বিষয়ে আপনার নতুন কোনো ভাবনা আাছে কি না সে বিষয়ে আপনি জিজ্ঞাসিত হতে পারেন। এখানে অনেক সময় বিব্রতকর প্রশ্নও করা হয়। যেই প্রশ্নই করুক, বিব্রত হবেন না, উত্তেজিত তো হবেনই না, ভয়াতুরও নয়। যাই বলুন, তবে মিথ্যা বলবেন না। এক প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রথম পছন্দ পুলিশ ক্যাডারে কেন?
প্রার্থী বলেছিলেন, আমি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করব, সমাজের সকল অন্যায়- অবিচার, মাদক, চোরাচালান প্রভৃতি কঠোর হস্তে রোধ করাই আমার স্বপ্ন।এগুলো গৎবাঁধা উত্তর। এমন উত্তর উত্তর ভাইভা বোর্ড প্রায় সবার কাছে শুনে থাকেন, কিন্তু খুশি হন না- এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আপনি যদি বিসিএস ক্যাডার হতে চান তো, ভিন্ন কিছু বলুন।
এক প্রার্থীকে বোর্ডের এক সদস্য ইংরেজিতে প্রশ্ন করলেন, ইরাক-সিরিয়া সংকট সম্পর্কে বলেন। প্রার্থী সংক্ষেপে ইংরেজিতে উত্তর দিয়েছিলেন।
সদস্য বললেন, আরো বিস্তারিত বলেন?
প্রার্থী বলেছিলেন, স্যার, বাংলায় বলি? বোর্ড তখন বিরক্ত হয়ে বললেন, আপনি এডমিন ক্যাডার প্রথম চয়েজ দিয়েছেন। বিদেশ যাবেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি করবেন সেসব তো ইংরেজীতে করতে হবে। কীভাবে করবেন? প্রার্থী কাচুমাচু হয়ে বলেছিলেন, নিয়োগ পেলে পর্যাপ্ত ট্রেনিং ও অধ্যায়নের মাধ্যমে নিজেকে গড়ে নেব। বোর্ড বলেছিলেন, অধ্যয়নকালে যদি গড়ে উঠা না যায় তো, কর্মজীবনে নিজেকে খুব বেশি গড়ে নেওয়া যায় না।
প্রথম পছন্দিত ক্যাডারে নিয়োগ পেলে আপনি কিভাবে অবদান রাখতে চান এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা তুলে ধরার জন্য অধ্যয়ন করতে হবে। এসব বর্ণনায় অবাস্তব বা অতিরঞ্জিত কিংবা প্রয়োগযোগ্য নয় এমন অবাস্তব বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। আবেগের চেয়ে বাস্তবতার নিরিখে আপনার উত্তরকে সজ্জিত করবেন। তাহলে আপনার সফলতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
৫. পাকিস্তানের বিরোধী আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ : এটি বর্তমান সরকারের আমলের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধরে নিতে পারেন, এ বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের মহাগৌরব। এই গৌরব প্রত্যেক বাংলাদেশির হার্দিক সম্পর্কের নিবিড়ে অবস্থান করে, অন্তত করা উচিত। তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতেই হবে। এক্ষেত্রে আপনার উত্তর যদি বোর্ডকে সন্তুষ্ট করতে পারে, তাহলে আপনার উদ্দেশ্য বহুলাংশে সফল হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের ইতিহাস, বিশেষ করে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আলোচিত ঘটনাবলি সম্পর্কে জানা থাকলে ভাইভা পরীক্ষা কৃতকাজের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে শুরু করে বিজয় অর্জন পর্যন্ত সময়ের ঘটনাবলি ভালোভাবে জেনে নেবেন। মুক্তিযুদ্ধে যারা অসামান্য আবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তরিত না জানলে ভাইভা বোর্ড আপনার প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম ও বিচক্ষণতা নিয়ে সন্দেহে ভুগতে পারেন। মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বই, উপন্যাস, কবিতা এবং যেসব বুদ্ধিজীবী, কবি ও সাহিত্যিক মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা প্রয়োজন। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক, উপন্যাস, গল্পগ্রন্থ এবং বিখ্যাত গান সম্পর্কে ধারণা রাখবেন। আপনার পছন্দনীয় ক্যাডারে কোনো বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা থাকলে কিংবা মুক্তিযুদ্ধে আপনার পছন্দনীয় ক্যাডারের অবদান সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার চেষ্টা করবেন। শুধু তাই নয়, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের সম্পর্কেও আপনাকে প্রশ্ন করে তাদের প্রতি আপনার ধারণা জানতে চাওয়া হতে পারে। অতএব, তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কেও জেনে যাবেন।
৬. আন্দোলন : ভাষা আন্দোলন-সহ পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর বাংলাদেশিদের পাকিস্তান সরকার বিরোধী সকল গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের ইতিহাস, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে যেসব সংগঠন অবদান রেখেছে তাদের ইতিহাস অবশ্যই ভালোভাবে পড়ে যাবেন। ভাষা আন্দোলনের ঘটনাপ্রবাহ, পাকিস্তানের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণ, ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে শহিদ মিনার নির্মাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য নিয়ে আপনি জিজ্ঞাসিত হতে পারেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট গঠন, ৬৯-এর গণঅভুত্থ্যান, ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচন নিয়ে প্রায়শ বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। এসব বিষয় ভালোভাবে পড়ে গেলে আপনার ভাইভা অবশ্যই ভালো হবে।
৭. অর্থনীতি : অর্থনীতি একটি দেশের ভিত্তি। মৌলিক চাহিদা একটি দেশের জনগণের অর্থনীতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। ক্যাডার অফিসারের কর্ম তৎপরতার উপর একটি দেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি বহুলাংশে নির্ভরশীল। দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকলে কারও পক্ষে ওই বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। অধিকন্তু, বাংলাদেশের একজন উচ্চশিক্ষিত নাগরিক হিসেবে আপনি দেশের আর্থনীতিক অবস্থা সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞাত, তার মাধ্যমে আপনার প্রজ্ঞা এবং ভাবী আমলা হিসেবে আপনার ভবিষ্যৎ কর্মকা-ের বিস্তৃতি নির্ভর করে। তাই অর্থনীতি বিষয়ে আপনার সম্যক ধারণা থাকা আবশ্যক। অর্থনীতির সঙ্গে একটি দেশের জনসংখ্যা; এবং জনসংখ্যার সঙ্গে দেশের আয়তন, চিকিৎসা ব্যবস্থা; এককথায় মৌলিক চাহিদার মৌলিক বিষয়গুলো নির্ভরশীল। তাই অর্থনীতি বিষয়ে আপনাকে ভালো করতে হলে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, ভূমিব্যবস্থা, প্রাকৃতিক সম্পদ-সহ এর সঙ্গে ব জড়িত বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারে।
এজন্য বিসিএস ভাইভা বোর্ডে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ে ভালো ধারণা থাকলে ভাইভা বোর্ড আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হয় তন্মধ্যে বাজেট, বাণিজ্য নীতি, জিডিপি, মাথাপিছু আয়, খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ, শিল্পনীতি, ভূমির প্রকৃতি, উপজাতি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এগুলো জানা থাকলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সমৃদ্ধ সম্পর্কেও আপনার জ্ঞান অর্জিত হবে। ফলে, এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরও সহজে দিতে পারবেন। সরকার, অর্থনৈতিক উন্নয়নে কী কী অবদান রাখছে সে সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা থাকতে হবে। এছাড়াও ২০২১ এবং ২০৪১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সরকারের রূপরেখা এবং তদ্বিষয়ে গৃহীত পরিকল্পনা ও কার্যক্রম সম্পর্কেও ভালো ধারণা থাকা আবশ্যক।
৮. রাজনীতি ও সরকার : রাজনীতিক মতাদর্শের নিরিখে রাজনীতিবিদগণের তত্ত্বাবধানে দেশ পরিচালিত হয়। রাজনীতিক জ্ঞান শুধু নিজের দল বা মতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের জন্য নয়, একই সঙ্গে ব্যক্তি-সচেতনতার জন্যও আবশ্যক। রাজনীতির ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক বিষয় সর্ম্পকে ভালো ধারণা আপনার সফলতাকে অর্জনের মাল্যে ভূষিত করে দিতে পারে। বর্তমান সরকারের আমলের উন্নয়ন কর্মকা-, অনুষ্ঠিত নির্বাচনসমূহ, প্রধানমন্ত্রী ও জাতির জনকের রচিত জীবন ও কর্ম, গণতন্ত্রে উত্তরণে সরকারের পদক্ষেপ প্রভৃতি বিষয়ে প্রায় প্রত্যেক প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। মানবতা বিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং বিষয়ে আপনার মতামত জানার জন্যও প্রশ্ন করা হতে পারে।
তবে রাজনীতিক বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় এমন কিছুর অবতারণা করবেন না, যাতে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর সময় বিবেচনায় দিতে হবে। রাজনীতিক দল বদলের সঙ্গে সঙ্গে কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর ও গুরুত্ব বদলে যায়। আপনি যে মানসকিতার হোন না কেন, পরিস্থিতি বুঝেই উত্তর দেবেন। শীতকালে গ্রীষ্মের জামা পরতে গেলে শীতে আপনিই কষ্ট পাবেন। বহিঃস্থ পরীক্ষকগণকে সরকার নির্বাচিত করেন। সংগত কারণে তারা সরকারের অতি কাছের লোক বলে পরিচিত। মনে রাখবেন, আপনার উদ্দেশ্য ভাইভাতে পাস করা, নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করা নয়। অতএব, বৃষ্টি যেদিক থেকে আসে, সেদিকে ছাতা মেলবেন।
৯. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান : সংবিধান দেশ পরিচালনার নীতিমালা। একটি দেশ কীভাবে কোন নীতিতে পরিচালিত হয়, জনগণের দায়িত্ব-কর্তব্য, সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, আন্তর্জাতিক নীতি, সরকারের বৈশিষ্ট্য, রাষ্ট্রীয় কাঠামো প্রভৃতি সংবিধানে বর্ণিত থাকে। তাই দেশের সংবিধান সম্পর্কে জ্ঞান থাকলে একজন ব্যক্তি রাষ্ট্র ও সরকারের সামগ্রিক বিষয়ে অবহিত থাকেন- এটিই স্বাভাবিকভাবে ধারণা করা হয়। তাই বিসিএস বোর্ডে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এক্ষেত্রে সন্তোষজনক উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ ধারাগুলো মুখস্থ করে নেওয়া প্রয়োজন। আপনার পছন্দক্রমের সঙ্গে সম্পর্কিত সংবিধানের বিশেষ ধারা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেবেন। জেনে নেবেন, কোন ধারায় রাষ্ট্রের কোন অঙ্গটি পরিচালিত হয়। এছাড়া, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের সংবিধান, বর্তমান সংবিধান এবং সম্পাদিত সংশোধনগুলোর তুলনামূলক প্রকৃতি প্রভৃতি। এ সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আপনার কৃতকার্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে।
১০. বঙ্গবন্ধু : দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর স্থান সবার ঊর্ধ্বে, বিষয়টি খেয়াল রেখে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম বিষয়ে ভালোভাবে অধ্যয়ন করবেন। জাতির বিনির্মাণে শুধু তাঁর অবদান হিসেবে নয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও বিসিএস-সহ যে-কোনো ভাইভা পরীক্ষায় বঙ্গবন্ধুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস, ব্যাপকভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পড়বেন। ৬ দফা এবং ৭ই মার্চের ভাষণ মুখস্থ করে যাবেন। অনেক প্রার্থীকে এ দুটি বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। বলা হয়, ৭ই মার্চের পুরো ভাষণ হুবুহু বলতে। স্বাধীনতা পরবর্তী জেল হত্যা, ১৫ ই আগস্ট, ১৫ ই আগস্টের খলনায়ক, বিপ্লব ও সংহতি দিবস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যয়ন করে যাবেন।
১১. দেশের বিখ্যাত ব্যক্তি : দেশ বিদেশের বিখ্যাত ব্যক্তি, কবিসাহিত্যিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আপনার জ্ঞান আপনার প্রাজ্ঞিক বিস্তৃতি ও সাংস্কৃতিক মননশীলতার পরিচয় তুলে ধরে। বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ, কবি-সাহিত্যিক প্রমুখ দেশের ঐতিহ্য। দেশ গঠনে তাদের ভূমিকা অনিবার্য। তারা জাতির বিবেক হিসেবে বিবর্ধিত। সে হিসেবে ব্যক্তির বিবেকও তাদের দ্বারা বহুলাংশে ব্যবস্থিত হয়। এজন্য ভাইভা বোর্ড দেখতে চায়, একজন চাকুরিপ্রার্থী তার দেশের বিবেক সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞাত।
এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে অধ্যয়ন করতে হবে। আপনার মতে যার খ্যাতিমান, তাদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে অধ্যয়ন করবেন। আপনি বিসিএস-এর দুটি ধাপ পার হয়ে ভাইভাতে এসেছেন, তাই কে খ্যাত এবং কার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হতে পারে তা অবশ্যই আপনার ধারণায় আছে। প্রিলিতে যাদের সম্পর্কে শিখেছেন, সরকার পরিবর্তন না-হলে তারাই আপনার এ বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর দেওয়ার জন্য যথেষ্ট হতে পারে। তবু, পড়ে যাবেন, মনে রাখবেন বিসিএস পাস-ফেলের পরীক্ষা নয়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা।
যদি বলেন, এসব বিষয়ে কাকে অধিক গুরুত্ব দেব?
আমি বলব, আপনি কী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মুধুসূদন দত্ত, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, মীর মশাররফ হোসেন, প্রমথ চৌধুরী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রাজা রামমোহন রায় – এদের গুরুত্ব নাদিয়ে পারবেন? শুরু করেন অতি বিখ্যাতদের দিয়ে। আপনার এলাকার বিখ্যাতদের বিষয়টি তো আগেই বলা হয়েছে। অতএব আর কে বাদ যায়?
১২. সাম্প্রতিক বিষয় : সাম্প্রতিক বিষয়ে জ্ঞান একজন নাগরিকের সার্বক্ষণিক সচেতনতার অন্যতম পরিচায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমান, প্রতিনিয়ত অতীত হয়ে যাচ্ছে। তাই যে বর্তমান সম্পর্কে সচেতন, তিনি অতীত সম্পর্কে জ্ঞাত; যিনি অতীত সম্পর্কে জ্ঞাত তিনি নিজেদের স্বকীয় মর্যাদা আর ঐতিহ্য সম্পর্কেও সচেতন। স্বকীয় মর্যাদা যার নেই, তার দেশপ্রেমও থাকতে পারে না। ভবিষ্যৎ বর্তমানের ভিত, তাই যিনি বর্তমান সম্পর্কে জ্ঞাত তিনি অতীত সম্পর্কেও জ্ঞাত। এজন্য সাম্প্রতিক বিষয় যে-কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে, যারা ভাইভা বোর্ডে আসেন-বসেন, তারাও সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে সহজে প্রস্তুতি নিয়ে আসতে পারেন। রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন মহলের কাছাকাছি থাকেন বলে তাদের অনেকের সাম্প্রতিক বিষয় জানা থাকে। তাই তাদের অধিকাংশের অধিকাংশ প্রশ্ন সাম্প্রতিক বিষয়ে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকে। এজন্য বিসিএস ভাইভা পরীক্ষায় ভালো করতে হলে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ধারণা থাকতে হবে সেটি হচ্ছে- সাম্প্রতিক বিষয়।
এসব কারণে সাম্প্রতিক বিষয়গুলোই প্রশ্নকর্তার মাথায় বেশি থাকে। এজন্য ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সম্ভাবনা শুরু হওয়ার পর থেকে গুরুত্বপূর্ণ দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকী, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী-সহ প্রয়োজনীয় সববিষয় পড়–ন এবং জরুরি মনে হলে তা জিকেন খাতায় নোট করে রাখুন।
সাম্প্রতিক বিষয়াবলি নিয় কত সতর্ক থাকতে হয়ে দেখুন:
আমি ছুটিতে। একদিন প্রত্যুষে সকাল সাতটার আগে আমার এক ঘনিষ্ট আত্মীয়া আমাকে ঘুম থেকে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে তুলে বলল, তোমারাই তো পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় বহিঃস্থ হিসেবে ভাইভা নিতে যাও। ছুটিতে না-থাকলে হয়তো তুমিই আমার ভাইভাতে পড়তাম, তুমি আমাকে কী প্রশ্ন করতে?
তোমাকে অন্য বোর্ডে পাঠিয়ে দিতাম।
যাই হাক, এখন তো তুমি নেই, বলোনা, আমাকে কী জিজ্ঞাসা করতে পারে?
আমি বললাম, আজ ২৮ শে নভেম্বর, জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের জন্মদিবস, তুমি জানো?
না।
পত্রিকা পড়োনি? পড়ে নিও।
ভাইভা বোর্ড থেকে এসে সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম, কী ব্যাপার এত খুশি?
সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। প্রথম প্রশ্ন ছিল, আজ যার জন্মদিন, তাকে নিয়ে এক বিখ্যাত লেখক একটি উপন্যাস লিখেছেন, তার নাম কী? বলে দিলাম, ‘যদ্যপি আমার গুরু’।
পরের প্রশ্ন, লেখক?
আহমদ ছফা।
রাজ্জাক আর আহমদ ছফাতে আমার ভাইভা শেষ। থ্যাংক ইউ।
১৩. শিক্ষা ব্যবস্থা : শিক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের সার্বিক বিনির্মাণের প্রধান উপায়। এটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে, অনেক সময় ভাইভা বোর্ডের অনেক সদস্য শিক্ষাব্যবস্থার উপর অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আপনাকে ভাইভা বোর্ডে দেশের বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। জিজ্ঞাসা করতে পারেন, শিক্ষা ব্যবস্থার কার্যকর আধুনিকায়নে আর কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। প্রশ্ন করতে পারেন, উচ্চশিক্ষার সমস্যা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থার সবল ও দুর্বল দিকগুলো নিয়েও। অতএব, এসব বিষয়ে একটু পড়ে যাবেন।
১৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে দেশের আর্থসামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন-অবনতি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। দুর্যোগ কখন হয়, কেন হয়; ইত্যদি জানা থাকলে তা রোধ করা সহজ হয়ে যায়. সচেতন থাকা যায় এবং সচেতন রাখা যায়।
১৫. জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় : বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, প্রাশাসনিক, প্রযুক্তি, কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, ছাত্র আন্দোল, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ভাইভা বোর্ডে যাবেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সম্পর্কে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারেএছাড়াও সম্প্রতি বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানোর সহজ পদ্ধতি, পদ্মাসেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, পারমাণবিক চুল্লী, দেশবিদেশে জঙ্গী হামলা, বাংলাদেশে জঙ্গীরোধে সরকারের কৃতিত্ব প্রভৃতি সম্পর্কেও আপনি জিজ্ঞাসিত হতে পারেন।
মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইরানের পারমানবিক কর্মসূচি এবং শক্তিধর ও প্রভাবশালী দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বিষয়ে ধারণা রাখতে হবে।। বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গা শরণার্থী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করা হতে পারে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে চীন, রাশিয়া এবং আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে ভালো অধ্যয়ন করে যাবেন। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায় এবং এই সমস্যার উৎস ও সমাধান কী- এসব প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে পারেন। জাতিসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন সম্পর্কেও আপনি ভালোভাবে অধ্যয়ন করে যাবেন।
১৬ . বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিসিএস পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাই এই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে আপনাকে খুব ভালোভাবে জেনে নিতে হবে। জেনে যাবেন, সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সম্পর্কে কী বলা হয়েছে। জেনে যাবেন, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের গঠন এবং কার্যাবলি।
১৭. ভুগোল ও মানচিত্র : বাংলাদেশের ভুগোল ও মানচিত্র সম্পর্কে ভালো না হোক, অন্তত মোটামুটি ধারণা থাকতে হবে। কোনো দেশের পরিচিতি এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হলে মানচিত্রবিষয়ক জ্ঞানও আবশ্যক। আপনি যদি আপনার দেশ সম্পর্কে না জানেন তাহলে আপনার জানার পরিধি যে বেশি নয়, তাই প্রমাণ হবে। অন্তত ভাইভা বোর্ডে এমনটি প্রকাশ হওয়া মানে লক্ষ্য হতে ছিটকে পড়া।
১৮. অধীত বিষয় : বিসিএস ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীকে প্রায় সময় অধীত বিষয়ের উপর প্রশ্ন করা হয়। তাই এ বিষয়ে ভালোভাবে জেনে রাখা আবশ্যক। দর্শন বিষয়ে মাস্টার্স ও অনার্স করেছেন, এমন এক প্রার্থীর প্রতি প্রশ্ন : তুমি তো দর্শন পড়েছ, বলো দর্শন কি নিয়ে আলোচনা করে? আত্মা অবিনশ্বর এর ইংরেজী কি? আরোহ ও অবরোহ কি? অনুপপত্তি কি? দেশের দুজন দার্শনিক এর নাম বলো। প্রার্থী বলেছিলেন, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব এবং আরজ আলী মাতব্বর। বোর্ড প্রশ্ন করেছিলেন, গোবিন্দ চন্দ্র দেব কি বেঁচে আছেন? প্রার্থী বলেছিলেন, উনি ২৫ মার্চ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে হত্যা করা হয়।
ইসমাইল ভূইঁয়া জীবন পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র। বিসিএসে তার প্রথম পছন্দ ছিল প্রশাসন। তার ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহফুজ সাহেব। তার জবানিতে শুনন, ভাইভার অভিজ্ঞতা।
সালাম দিয়ে ভয়ে ভয়ে ভাইভা বোর্ডে ঢুকলাম। চেয়াম্যান স্যার বসতে বললেন। আমি ধন্যবাদ জানিয়ে বসলাম। প্রয়োজনীয় সনদ-পত্র দিতে বলায় সেসব এগিয়ে দিলাম স্যারকে। কিছুক্ষণ পর স্যার হঠাৎ প্রশ্ন শুরু করলেন। আমি খুব বিব্রতবোধ করছিলাম। বোর্ডে ৬/৭ জনের মত সদস্য ছিলেন।
স্যার প্রশ্ন করলেন- পৃথিবীর বয়স কত?
: ৪৫০ কোটি বছর প্রায়।
মাটি কী?
: পৃথিবী পৃষ্ঠের নরম স্তর যা বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ।
মাটি কীভাবে সৃষ্টি?এর গভীরতা কত?
: বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবর্তন তথা ওয়েদারিং এর কারণে কঠিন শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে মাটির সৃষ্টি। আর, ভূমিতে এর গভীরতা ১০-১৫ কিলোমিটার(ভূ-পৃষ্ঠ থেকে নিচের দিকে।) এবং সমুদ্রের তলদেশে পাঁচ(০৫)কিলোমিটারের মত।
পৃথিবীর বয়স কত?(আবার এই প্রশ্নটি করলেন)
: স্যার, ৪৫০কোটি বছর প্রায়।
স্যার অন্য সদস্যদের প্রশ্ন করতে বললেন। ইতোমধ্যে আমার কণ্ঠ ধরে আসছে।একজন সদস্য বললেন, ভয় পাবেন না।
আমি ওই স্যারকে ধন্যবাদ দিলাম।
১৪৪ ধারা কী?
:কোনো গোলযোগের ফলে কোনো স্থানে জান-মালের ক্ষতির আশংকা থাকলে জারিকৃত ফৌজধারী ধারা।
এটি কে জারি করেন?
:একজন জেলা প্রশাসক বা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট এই ধারা জারি করেন।
একজন ডিসি আর এসপি’র মধ্যে কার ক্ষমতা বেশি?
:ডিসির ক্ষমতা বেশি, স্যার।
আপনার প্রথম পছন্দ কী?
:প্রশাসন, স্যার।
সবাই ক্ষমতা পছন্দ করে হা হা হা… ( স্যারের নিজে নিজে বলে হাসলেন।)
আরেকজন স্যার এবার প্রশ্ন শুরু করলেন-
আর্কিমিডিসের ল’টি বলুন।
: কোনো বস্তুকে কোনো তরলে আংশিক বা সম্পূর্ণ নিমজ্জিত করলে সেটি কিছু পরিমাণ ওজন হারায় বলে মনে হয়।এই আপাত হারানো ওজন বস্তুটি কর্তৃক অপসারিত তরলের ওজনের সমান।
প্লবতা কী?
: তরল/বায়বীয় পদার্থ কর্তৃক বস্তুর উপর প্রযুক্ত ঊর্ধ্বমুখী বল।
এবার অন্য একজন স্যার প্রশ্ন শুরু করলেন- আইনস্টাইনের নাম শুনেছেন তো?
: জ্বী, স্যার।
তাঁর বিখ্যাত একটি তত্ত্ব আছে, জানেন তো?
: জ্বী, স্যার।
সেটি কী?
: আপেক্ষিক তত্ত্ব।
১৯. বিবিধ : এটি এমন একটি বিষয় যেখানে সবকিছু থাকে, থাকতে পারে। এমনকি ভাগ্যও। সামনে যা পাবেন তা-ই পড়ে নেবেন। এক পরীক্ষার্থীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অমর্ত্য সেন সম্প্রতি একটা পুরস্কার পেয়েছেন, তার নাম কি? ইবোলা কি? এটি কবে কোথায় প্রথম পাওয়া যায়? এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়েছে কি? কি নাম? কে আবিষ্কার করেছে? প্রভৃতি। অনেক প্রার্থীর অভিমত, ভাইভা অনেক ভাগ্যের ব্যাপারও। ভাগ্য সহায়তা না করলে কিছু হয় না। এই ভাগ্য বিশেষ করে বোর্ডের চেয়ারম্যানের আচরণ এবং প্রশ্নের ধরনের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই প্রসঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞারে ছাত্রী শামীমা ইয়াসমিন রূপার মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি ২৪ ও ২৫তম বিসিএসে এর ভাইভা দিয়েছিলেন। তার কথায় তার মন্তব্য শোনা যাক, “ ২৪ এর ভাইভা বেশ ভালো হয়েছিল। তবে বোধকরি লিখিত পরীক্ষা ভালো হয়নি। আর ২৫ এর লিখিত পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। সেজন্য খুব আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু বিধি বাম। আমার মৌখিক পরীক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিতর্কিত ব্যক্তির বোর্ডে ছিল। উনি সাহিত্য নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। উত্তর শোনার মতো অবকাশ উনার ছিলনা। উনি বোধকরি ধরেই নিয়েছিলেন আমি পদার্থের ছাত্রী, তাই সাহিত্য পারব না। আসলে উত্তর পারতাম। পরীক্ষা দিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম এবার হবেনা। এটাই আমার জীবনের একমাত্র মৌখিক পরীক্ষা যেটার বোর্ড আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারি নাই।” প্রসঙ্গত, ২৪- এ রূপার ১ম চয়েস ছিল কাস্টমস এবং ২য় অডিট অ্যান্ড একাউন্টস। ২৫ এ ১ম চয়েস ছিল অডিট এন্ড একাউন্টস ও ২ য় কাস্টমস। বিস্তারিত: বিসিএস প্রিলিমিনারি থেকে ভাইভা কৃতকার্য কৌশল