ড. মোহাম্মদ আমীন
বাঙালির প্রধান খাদ্য ভাত। ফুটন্ত জলে চাল সিদ্ধ করে তৈরি ভাতই বাঙালির মূল খাদ্য। এর অপর নাম সিদ্ধ তণ্ডুল, অন্ন। ‘ভাত’ শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘ভক্ত’ থেকে। হিন্দি, মারাঠি, গুজরাটি, ওড়িয়া, মৈথিলি ও অসমিয়া ভাষাতেও এটি ‘ভাত’; সিন্ধিতে ‘ভতু’ পাঞ্জাবিতে ‘ভত্ত’। সংস্কৃত ‘ভক্ত’ শব্দের অর্থ ভাগ। সামন্ততান্ত্রিক আমলে সংসারের কর্তা সবাইকে খাদ্য ও রসদ ভাগ করে দিতেন। প্রত্যেক ব্যক্তির প্রাপ্য অংশই হলো তার ‘ভক্ত’। ভাতই ছিল এই ভাগ করে দেওয়া রসদের সার। তাই ভক্ত শব্দের একটি অর্থ ছিল ভাত। প্রাচীন বাংলায় ভাতকে বলা হতো ‘ওদন’ (সং. √ উন্দ্ + অন)। ‘শিশু কাঁদে ওদনের তরে’ – কবিকঙ্কন।
চর্যাপদে টেণ্টন লিখেছেন:“টালত মোর ঘর নাহি পরবেষী।হাড়ীত ভাত নাঁহি নিতি আবেশী।” (পদ ৩৩, অর্থাৎ- টিলার উপর আমার ঘর, কোনও প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতেও ভাত নেই, তবু প্রতিদিন অতিথি আসে।)
ভাত থেকে এসেছে পানতা ভাত, বসা ভাত, ভাত ঘুম, ভাত মারা, ভাতকাপড়, ভাতুড়িয়া, ভাতুড়ে, ভাতুয়া, ভাতে ভাত, ভাতে, ভেতো, শাক-ভাত, হাভাত, হাড়হাভাতে, হাভাতে ইত্যাদি শব্দ। ‘হাভাত’ অর্থ অন্নহীন দশা, ভাগ্যহীন ব্যক্তি (বাংলা. হা = অভাব + ভাত)। ‘হাভাতে’ মানে ভাতের জন্য হায় হায় করে এমন দরিদ্র ব্যক্তি বা অত্যন্ত লোভী ব্যক্তি। ‘হাড় হাভাতে’ বাগ্ধারার অর্থ হতভাগ্য।
শুবাচ গ্রুপের সংযোগ: www.draminbd.com
শুবাচ যযাতি/পোস্ট সংযোগ: http://subachbd.com/