ব্রিটিশ আমলে বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলা
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস ‘কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসা’ এবং ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে জোনাথন ডানকান কাশিতে সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির কোনোটিতে ভারতীয়দের কোনো মাতৃভাষায় শিক্ষা চর্চার সুযোগ ছিল না। ধর্মীয় সহানুভূতি আদায়ের আড়ালে দেশের জনগণকে আধুনিক ভাষা ও শিক্ষা হতে বঞ্চিত রেখে কতিপয় অভিজাত শ্রেণি সৃষ্টি করে ভারতকে নিরাপদে শোষণ করে যাওয়ায় ছিল তাঁদের লক্ষ্য।
বাংলা ভাষাকে সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রথম সুপারিশ
ভাষা আন্দোলনের উত্তাল জনরোষে সারাদেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। সরকার ও প্রশাসন কার্যত নিষ্ক্রিয় ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বিপর্যস্ত মুসলিম লিগ সরকার অনোন্যপায় হয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার সুপারিশ সম্বলিত প্রস্তাব পাশ করে।
সরকারকে চরমপত্র প্রদান ও প্রথম শহিদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ প্রাঙ্গণে, যেস্থানে আবুল বরকত পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেখানে ছাত্ররা রাতারাতি ১০-ফুটের অধিক উচ্চতার একটি ‘শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ করেন। সেদিন বিকেলের দিকে পুলিশ এসে স্তম্ভটি গুড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এক সভায় মিলিত হয়ে সরকারকে ৭৫ ঘন্টার আলটিমেটাম (চরমপত্র) দেয় এবং ৫ই মার্চ পূর্ব-পাকিস্তানে ‘শহিদ দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি এবং একুশে ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ শে জানুয়ারি ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি’ গঠিত হয় এবং ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে ফ্রেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, কিন্তু ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম কমিটি’ মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে সালাম, রফিক, জব্বার এবং বরকতসহ জানা-অজানা অনেক লোক শহিদ হন।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি’
১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে বর্তমান বঙ্গবন্ধু এভেনিউ এলাকায় (তখনকার ব্রিটিানিয়া সিনেমা হলে) প্রথম আমার সোনার বাংলা গানটি গাওয়া হয়। এ অনুষ্ঠানে আবদুল লতিফের সুরে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো’ গানটি আতিকুল ইসলামের কন্ঠে প্রথম গাওয়া হয়। গানটি প্রথমে কবিতা হিসেবে লেখা হয়েছিল। যা গে-ারিয়ার ধুপখোলা মাঠে যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে প্রথম আবৃত্তি করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে যুবলীগের সাংস্কৃতিক স¤পাদক সৈয়দ আহমদ হোসেনের কাছ হতে রফিকুল ইসলাম কবিতাটি নিয়ে আবদুল লতিফকে সুর করতে দেন। আবদুল লতিফের সুরে গাফফরার চৌধুরীর কবিতাটি আতিকুল ইসলামের কন্ঠে আবার গাওয়া হয়। পরবর্তীকালে গানটিতে আলতাফ মাহমুদ নতুনভাবে সুর দেন। বর্তমানে গানটি আলতাফ মাহমুদের সুরে গাওয়া হয়।
একুশের ফেব্রুয়ারির ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ মর্যাদা লাভ
১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আর্ন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর মর্যাদা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষিত হয়।
ভাষা আন্দোলনের সপক্ষে প্রচারিত প্রথম গোপন দলিল
ভাষা আন্দোলনকে সফল করে তোলার জন্য শুধু পার্টির সদস্যদের মধ্যে প্রচারের লক্ষ্যে পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির পূর্ববাংলা কমিটির স¤পাদকবৃন্দ ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ফেব্রুয়ারি একটি দলিল প্রচার করেন। গোপনীয়ভাবে প্রচারিত এ দলিলটি ভাষা আন্দোলনের সপক্ষে প্রকাশিত প্রথম গোপন দলিল হিসেবে খ্যাত।