চণ্ডীমঙ্গল
চণ্ডীদেবীর কাহিনী অবলম্বনে রচিত কাব্যকে ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্য বলা হয়। চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের কাহিনী আক্ষেটিক ও বণিক নামের দুটি পৃথক খণ্ডে দুটি ভিন্ন কাহিনী অবলম্বনে রচিত। চণ্ডীমঙ্গলের কবিদের মধ্যে মাণিক দত্ত, দ্বিজ মাধব, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী প্রমূখ খ্যাত। চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের পরবর্তী কবিগণের মধ্যে দ্বিজ রামদেব, মুক্তরাম সেন, হরিরাম, লালা জয়নারায়ণ সেন, ভবানীশঙ্কর দাস, অকিঞ্চন চক্রবর্তী খ্যতি লাভ করেছিলেন। উল্লেখ্য, যোড়শ শতক চণ্ডীমঙ্গলকাব্যের প্রসারকাল।
চণ্ডীমঙ্গলের আদিকবি
ষাড়শ শতকের পূর্বে আবির্ভূত কবি মাণিকদত্ত চণ্ডীমঙ্গল কাব্য ধারার আদি কবি। চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি মুকুন্দরামের কবি-বন্দনায় মাণিকদত্তের উল্লেখ রয়েছে। তিনি গৌড় বা মালদহের অধিবাসী ছিলেন। তাঁর কাব্যে যে সকল নদী ও গ্রামের উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো মালদহ অঞ্চলের। মাণিক দত্তের আত্ম-বিবরণ হতে জানা যায় যে, তিনি কানা ও খোঁড়া ছিলেন। দেবীর আশীর্বাদে সুস্থ হন এবং স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে ইষ্ট দেবতাকে সন্তুষ্ট করার জন্য চ-ীমঙ্গল কাব্যটি রচনা করেন।
চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি
কবি কঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি ১৫৩৭ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বভাগে বর্ধমান জেলার দামুন্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মঙ্গলকাব্য ছাড়াও তিনি তৎকালীন সাহিত্য বাসরের প্রতিটি জনপ্রিয় ধারার শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে খ্যাত ছিলেন। এজন্য তাঁকে মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম কবি বলা হয়। তিনি ডিহিদার বা প্রধান রাজকর্মচারী মাহমুদ শরীফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জন্মভূমি পরিত্যাগ করে মেদিনীপুর জেলার আড়রা গ্রামের ব্রাহ্মণ জমিদার বাঁকুড়া রায়ের আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাঁকুরা রায় মুকুন্দরামকে তাঁর পুত্র রঘুনাথের গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন। বাঁকুরা রায়ের মৃত্যুর পর রঘুনাথ জমিদার হন এবং মুকুন্দরামকে নিজ সভাসদরূপে মর্যাদা প্রদান করেন। জমিদার রঘুনাথের নির্দেশে কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ‘শ্রীশ্রীচণ্ডমঙ্গল কাব্য’ (১৫৯৪-১৬০৩ খ্রি.) রচনা করেন। এ জন্য রঘুনাথ তাঁকে কবি কঙ্কণ উপাধিতে ভূষিত করে সম্মানিত করেন।
চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ঐতিহ্য অবলম্বনে রচিত মঙ্গলকাব্য
কবি দ্বিজ রামদেব রচিত (১৬৫৩ খ্রি.) ‘অভয়ামঙ্গল’ চট্টগ্রামের ঐতিহ্য অবলম্বনের রচিত চণ্ডীমঙ্গল ধারার কাব্যগ্রন্থ। ১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার কবি মুক্তারাম সেন রচিত ‘সারদামঙ্গল’ একটি উল্লেখযোগ্য মঙ্গলকাব্য।
চণ্ডীমঙ্গলের শেষ কবি
কবি অকিঞ্চণ চক্রবর্তী চণ্ডীমঙ্গলের শেষ কবি। তাঁর উপাধি ছিল কবীন্দ্র। অষ্টাদশ শতকের শেষভাগে তিনি চ-ীমঙ্গল কাব্য রচনা করেন। মেদিনীপুরের ঘটাল মহকুমার বেঙ্গারাল গ্রামে কবি অকিঞ্চন চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন।