মঙ্গলকাব্য
বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে এক শ্রেণির ধর্মবিষয়ক আখ্যান-কাব্য ‘মঙ্গলকাব্য’ নামে পরিচিত। ‘মঙ্গল’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘কল্যাণ’। যে কাব্যের কাহিনি শ্রবণ করলে কল্যাণ হয় এবং সর্ববিধ অকল্যাণ দুরীভূত হয়ে পূর্ণাঙ্গ মঙ্গল ঘটে সেগুলো মঙ্গলকাব্য। বিভিন্ন দেবদেবীর গুণগান মঙ্গলকাব্যগুলোর উপজীব্য। মনসা ও চণ্ডী মঙ্গলকাব্যের অন্যতম দেবদেবী।
পনের শতকে মঙ্গলকাব্যের উৎপত্তি ও বিকাশের পালা শুরু হয় এবং মধ্যযুগের শেষ কবি ভারতচন্দ্রের ‘অন্নদামঙ্গল’ রচনার মাধ্যমে মঙ্গলকাব্য যুগের পরিসমাপ্তি ঘটে। মঙ্গলকাব্য ধারার অসংখ্য কবিদের মধ্যে শিবায়নের কবি রামেশ্বর, গোরক্ষ বিজয়ের কবি শেখ ফয়জুল্লাহ, মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্ত, চণ্ডীমঙ্গলের কবি মাধবাচার্য, মুকুন্দরাম ও অন্নদামঙ্গলের কবি ভারতচন্দ্র, ধর্মমঙ্গলের আদিকবি ময়ূরভট্ট, কনিকামঙ্গলের কবি কঙ্কন উল্লেখযোগ্য।
বাংলা সাহিত্যে বিভিন্ন প্রকার কাব্যে ‘মঙ্গল’ কথাটি ব্যবহার করা হলেও কেবল বাংলা লৌকিক দেবতাদের নিয়ে রচিত কাব্যই ‘মঙ্গলকাব্য’ নামে অভিহিত হয়। মঙ্গলকাব্যের মধ্যে পৌরণিক শ্রেণির গৌরীমঙ্গল, ভবানীমঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, গঙ্গামঙ্গল, চ-ীকামঙ্গল এবং লৌকিক শ্রেণির মধ্যে শিবায়ন বা শিবমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল (বা বিদ্যাসুন্দর), শীতলামঙ্গল, রায়মঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, সারদামঙ্গল, সূর্যমঙ্গল উল্লেখযোগ্য।