কাশদাসী মহাভারত
সপ্তদশ শতকে কাশীরাম দাস পদ্যে মহাভারত রচনা করেন। কাশীদাসী মহাভারত আঠারো পর্ব এবং একশত পর্বাধ্যায়ে বিভক্ত। কাশীরাম মূল সংস্কৃত মহাভারতের আক্ষরিক অনুবাদ না করে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির দ্বারা মূল কাহিনিকে কিছুটা বদলে রচনা করেছেন। চৈতন্য-পরবর্তী যুগে রচিত এই গ্রন্থে বৈষ্ণব কাশীরামের ভক্তিবাদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। সম্পূর্ণ গ্রন্থটি পয়ার চতুর্দশপদী ও ত্রিপদী ছন্দে লিখিত হয়েছে।
কাশীরাম দাস পরবর্তী মহাভারত
কাশীরামের পরে মহাভারত রচয়িতা হিসেবে আরো যাঁদের নাম পাওয়া যায় তাঁরা হলেন ঘনশ্যাম দাস, অনন্ত মিশ্র, রামনারায়ণ দত্ত, রামকৃষ্ণ কবিশেখর, শ্রীনাথ ব্রাহ্মণ, কবিচন্দ্র চক্রবর্তী, ষষ্ঠীধর সেন, তৎপুত্র গঙ্গাদাস সেন, বাসুদেব, ত্রিলোচন চক্রবর্তী, দৈবকীনন্দন, কৃষ্ণরাম, রামনারায়ণ ঘোষ, লোকনাথ দত্ত, রাজেন্দ্র দাস, গোপীনাথ দত্ত, গঙ্গাদাস সেন, সৃষ্টিধর সেন প্রমুখ। এদের রচনা প্রায় অসম্পূর্ণ। তাই সেগুলি সুধীসমাজে তেমন প্রচার পায়নি। উনিশ শতকে কালীপ্রসন্ন সিংহ এবং রাজশেখর বসুর গদ্যানুবাদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
অন্যান্য অনুবাদ
ইংরেজি ভাষায় মহাভারত প্রথম অনুবাদ করেন কিশোরীমোহন গঙ্গোপাধ্যায়। এটি মুনশিরাম মনোহরলাল প্রকাশনী হতে ১৮৮৩ থেকে ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে প্রকাশিত হয়। গীতা প্রেসের পক্ষ থেকে প-িত রামনারায়ণদত্ত শাস্ত্রী পা-ে রাম হিন্দি ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ করেছেন। অষ্টাদশ শতকে সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় ফয়জি ও আবদুল কাদির বদাউনি ফারসি ভাষায় মহাভারত অনুবাদ করেন, যার নামকরণ করা হয় ‘রজম্লামেহ্’। তামিল ভাষায় মহাভারতের অনুবাদ করেছেন মানালুর রঙ্গচরিয়ার।
আঞ্চলিক সংস্করণ
ভারতে, মহাভারতের তিনটি পৃথক সংস্করণ পাওয়া যায়- উত্তর ভারতীয়, দক্ষিণ ভারতীয় ও মালাবারী। মালাবারী মহাভারত আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ২য় শতকে পরিপূর্ণতা লাভ করে। বাকি দু’টি সম্ভবত আরও কিছুকাল পরে পরিপূর্ণ হয়ে আধুনিক রূপ লাভ করেছে। মহাভারতের তামিল সংস্করণটি তেরুক্কুট্টু বা কাত্তৈক্কুট্টু নামে মঞ্চে অভিনীত হয়, এতে প্রধানত দ্রৌপদীর চরিত্রের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
মহাভারতের সটীক সংস্করণ
সময়ের সাথে সাথে মহাভারতের কাহিনী বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হওয়ায় মূল কাহিনীটিকে উপলব্ধি করা দুরূহ হয়ে পড়ে। এই সমস্যার সমাধানকল্পে পুণেতে অবস্থিত ভা-ারেকর প্রাচ্য গবেষণা সংস্থা (১৯১৯-১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে) সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় প্রাপ্ত মহাভারতের প্রায় সকল পা-ুলিপির (প্রায় ১০,০০০) অনুসন্ধান ও সংগ্রহ করে একই প্রকার ৩৫,০০০ শ্লোক নিয়ে ১৮ খ- যুক্ত ১৩০০০ পৃষ্ঠার মহাভারত গ্রন্থের একটি সটীক ও সমীক্ষাত্মক সংস্করণ প্রকাশ করেন। এটি সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে বেশ সমাদৃত।
চলচ্চিত্র ও দূরদর্শন
ভারতে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের আগেও মহাভারত নিয়ে প্রচুর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে দানবীর সূর কর্ণ নামে এক তেলুগু ছবি তৈরি করেন এন টি রাম রাও। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে শ্যাম বেনেগাল পরিচালিত কলিযুগ ছবিটিও মহাভারতের কাহিনির ভিত্তিতে নির্মিত হয়। ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ ঝাঁ মহাভারতের কাহিনির উপর আংশিক ভিত্তিতে তৈরি করেন রাজনীতি ছবিটি। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের অ্যানিমেটেড ফিল্ম ‘মহাভারত’ ভারতের সর্বাপেক্ষা ব্যয়বহুল অ্যানিমেটেড ছবি হিসেবে উৎকর্ষ লাভ করেছে। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে রবি চোপড়ার পরিচালনায় মহাভারত ধারাবাহিক ভারতের দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়।