কীভাবে হলো দেশের নাম (আফ্রিকা)
ড. মোহাম্মদ আমীন
মাদাগাস্কার (Madagascar)
মালাগাসি ভাষায় (Malagasy) মাদাগাস্কার দ্বীপকে বলা হতো মাদাগাসিকারা (Madagasikara) এবং দ্বীপে বসবাসকারীদের (Malagasy) বলা হতো। মাদাগাস্কার স্থানীয় কোনো শব্দ নয়। শব্দটি মধ্যযুগে ইউরোপীয়ান দ্বারা প্রচারিত হয়েছে। ত্রয়োদশ শতকের বিখ্যাত ভিয়েনসিয়ান (Venetian) অভিযাত্রী মার্কো পলোর (Marco Polo ) লেখায় প্রথম শব্দটির আক্ষরিক রূপ দেখা যায়। মার্কো পোলোর লেখায় সোমালি পোর্ট মোগাদিসু (Mogadishu) এর নাম ভুলবশত মাদাগিয়েসকার (Madageisca) রূপে লিপ্যন্তর হয়েছিল। এরপর নামটি মানচিত্র ও অভিযাত্রীদের মুখে মুখে ব্যাপকভাবে পরিচিত হয়ে ওঠে। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট লরেন্স দিবসে পর্তুগিজ অভিযাত্রী ডিউগো ডিয়াস (Diogo Dias) দ্বীপটিতে অবতরণ করে নাম রাখেন সাও লোউরেনকো (Sao Lourenco)। তবে তার নামটি প্রচারিত হয়নি। মার্কপোলোর দেওয়া নামটিই রেঁনেসা ম্যাপের কারণে ব্যাপক প্রচারিত হয়ে ওঠে।
মোগাদিসু নামটি পর্সিয়ান শব্দ মাক্দ-ই-শাহ (Maq’ad-i-Shah) হতে এসেছে। এর অর্থ ‘শাহ এর আসন (seat of the Shah)’। প্রাচীনকালে এ দ্বীপে পারস্য সাম্রাজ্যের বেশ প্রভাব ছিল। এলাকাবাসী পারস্য সাম্রাজ্যের ‘শাহ’ বা ‘রাজা’কে মান্য করতেন। তাই শাহ এর সম্মানে দ্বীপটির নাম রাখা হয় মোগাদিসু।
মাদাগাস্কারের সরকারি নাম রিপাবলিক অব মাদাগাস্কার। প্রাক্তন নাম মালাগাছি রিপাবলিক। এটি ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকান উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র। মাদাগাস্কারের মোট আয়তন ৫,৮৭,০৪১ বর্গকিলোমিটার বা ২,২৬,৫৯৭ বর্গমাইল। তন্মধ্যে জলীয় ভাগের পরিমাণ ০.০০৯%। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, মাদাগাস্কারের জনসংখ্যা ২,২০,০৫,২২২ জন এবং প্রতি বর্গকিলোমিটার লোকসংখ্যা ৯১.১ জন। আয়তন বিবেচনায় মাদাগাস্কার পৃথিবীর ৪৭-তম বৃহত্তম দেশ এবং জনসংখ্যা বিবেচনায় ৫৩-তম। কিন্তু জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় পৃথিবীর ১৭৪-তম জনবহুল দেশ। এখানকার অর্ধেক অধিবাসী স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আদি ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী, ৪৮% খ্রিস্টান এবং বাকিরা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
২০১৪ খ্রিস্টাব্দের হিসাবমতে, মাদাগাস্কারের জিডিপি (পিপিপি) ৩৩.৬৪২ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ১,৪২৯ ইউএস ডলার। অন্যদিকে, জিডিপি (নমিনাল) ১১.১৮৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার এবং মাথাপিছু আয় ৪৭৫ ইউএস ডলার। মুদ্রার নাম আরিয়ারি (ariary)। রাজধানী এন্তানানারিভো (Antananarivo)। মাদাগাস্কারের অধিবাসীদের মালাগাছি বলা হয়। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন দেশটি ফ্রান্স হতে স্বাধীনতা লাভ করে। সরকারি ভাষা মালাগাছি ও ফ্রেঞ্চ। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দের ১৪ অক্টোবর মাদাগাস্কারের পতাকা গৃহীত হয়।
মাদাগাস্কার বিশ্বে জীববৈচিত্র্যের হটস্পট নামে পরিচিত। আমদানি করা না হলে এখানকার বন্যপ্রাণীর ৯০% অন্য কোনো দেশে পাওয়া যায় না। মাদাগাস্কারের হস্তিপাখি (Elephant Bird) পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাখি। ভ্যানিলা উৎপাদন ও রপ্তানিতে মাদাগাস্কার পৃথিবীর অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম দ্বীপ। দুর্লভ বন্যপ্রাণী সমৃদ্ধ সাফারি পার্কের রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা অর্জনে মাদাগাস্কার অতুলনীয়।
মাদাগাস্কার পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশের একটি। মোট সড়ক পথের কেবল ১১% পাকা, বাকিটা কাচা। মাদাগাস্কারের ৯০% লোক ২ ডলারের কম অর্থে জীবিকা নির্বাহ করে। রাজনীতিক অস্থিরতা, সামাজিক দ্বন্দ্ব প্রভৃতি দারিদ্রতার অন্যতম কারণ। অধিকাংশ মালাগাছি সর্বপ্রাণবাদি। খ্রিস্টানধর্মের প্রভাব সত্ত্বে অধিকাংশ মালাগাছি যাদুটোনা ও তাদের পূর্বপুরুষের যাদুকরি শক্তিতে বিশ্বাসী। শুধু গ্রামে নয়, শহরেও অনেক মালাগাছি তাদের মৃত আত্মীয়দেরকেও পরিবারের সদস্য মনে করে। মৃতদের সমাহিত করার সময় তার নৃত্য করে এবং ছবি তোলে।
লিংকসমূহ
ঘানা (Ghana) : ইতিহাস ও নামকরণ
রোয়ান্ডা (Rwanda) : ইতিহাস ও নামকরণ
গিনি (Guinea) : ইতিহাস ও নামকরণ
গিনি-বিসাউ (Guinea-Bissau) : ইতিহাস ও নামকরণ
কেনিয়া (Kenya) : ইতিহাস ও নামকরণ
লেসোথো (Lesotho): ইতিহাস ও নামকরণ
লাইবেরিয়া (Liberia) : ইতিহাস ও নামকরণ
লিবিয়িা (Libya) : ইতিহাস ও নামকরণ
সূত্র : কীভাবে হলো দেশের নাম (আফ্রিকা), ড. মোহাম্মদ আমীন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা।