মাস্ক ( mask) ও করোনাভাইরাস জীবাণু বীজাণু এবং বিবিধ

ড. মোহাম্মদ আমীন

মাস্ক ( mask) ও করোনাভাইরাস জীবাণু বীজাণু এবং বিবিধ

মাস্ক ( mask): সংস্কৃত মুখকোশ থেকে উদ্ভূত খাঁটি বাংলা শব্দ মুখোশ অর্থ (বিশেষ্যে) মুখের আবরণ, ইংরেজিতে যাকে বলা হয় mask। বাংলায় কপটতা অর্থেও মুখোশ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। তবে করোনাভাইরাসের আক্রমণ হতে বাঁচার জন্য অধুনা নাকেমুখে যা পড়া হচ্ছে তার সঙ্গে কপটতার কোনো সম্পর্ক নেই। এই মাস্ক-এর অর্থ মুখের আবরণ, মুখাবরণ। যেমন: করোনা সর্বমারির কারণে বহুল আলোচিত মুখাবরণ N-95 মাস্ক।

N-95 মানে কী? N এর পূর্ণরূপ Non resistant to oil এবং 95 অর্থ এই মাস্কটি বায়ুতে ভাসমান ৯৫ ভাগ বস্তুকণা, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি পরিধানকারীর নাকেমুখে প্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারে।তবে তরল পদার্থের প্রবেশ প্রতিরোধ করতে পারে না।

ড. মোহাম্মদ আমীন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান 3M (Minnesota Mining and Manufacturing company) ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে N-95 মাস্ক তৈরি করে। অতঃপর টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের (The University of Tennessee) অধ্যাপক পিটার সাই (Peter Tsai) N-95 মাস্কে ভাইরাস-প্রতিরোধ প্রযুক্তি যুক্ত করেন। প্রসঙ্গত, চায়না রাজকীয় দপ্তরের চাকুরে (Lien-teh Wu) ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে মাঞ্চুরিয়া প্লেগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার বছর কাপড় দিয়ে এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়ারোধী মাস্ক আবিষ্কার করেন। বিশ্বের ইতিহাসে এটিই ছিল ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধের সুস্পষ্ট উদ্দেশ্যে প্রস্তুতকরা প্রথম মাস্ক (mask) বা মুখাবরণ।

 
করোনাভাইরাস না কি করোনা ভাইরাস:  ‘করোনা’ শব্দের সঙ্গে যুক্ত করে ভাইরাসটির নাম রাখা হয়েছে: ‘করোনাভাইরাস’। ল্যাটিন ‘করোনা (corona )’ বা গ্রিক ‘কোরনে বা করোনা (korone)’ শব্দের অর্থ— সূর্য হতে ছড়ানো রশ্মি, যাকে বলা হয় জ্যোতির্বলয়। গ্রিক পুরাণমতে, ‘করোনা’ হচ্ছে—দেবদেবীর মাথায় পরিহিত মুক্তাখচিত রাজকীয় বা ঐশ্বরিক তাজ, যা থেকে ছড়িয়ে পড়ে জ্যোতির্বলয়ের মতো রশ্মি। হীরকখণ্ড হতেও এমন আলো বের হয়। এটিও করোনা।
সুতরাং ‘করোনা’ কোনো রোগ বা রোগের নাম নয়। তাই ‘করোনা ভাইরাস’ নয়, ‘করোনাভাইরাস’। ভাইরাসটির নামই রাখা হয়েছে করোনাভাইরাস। আমাদের স্কুলের এক ধর্মীয় শিক্ষকের নাম ছিল: ইমাম। তাঁকে আমরা ডাকতাম ইমাম হুজুর। অন্যরা ডাকতেন ইমাম সাহেব। তবে তিনি কোনো মসজিদের ইমাম ছিলেন না।

বীজাণু ও জীবাণু:  সংস্কৃত বীজাণু (বীজ+অণু) অর্থ (বিশেষ্যে) রোগ সৃষ্টি করে এমন অতি ক্ষুদ্র এককোষবিশিষ্ট জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া (bacteria), রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু। কোরোনাভাইরাস একটি বীজাণু। সংস্কৃত জীবাণু (জীব+অণু) অর্থ (বিশেষ্যে) খালি চোখে দেখা যায় না এমন অতি ক্ষুদ্র প্রাণী, ইংরেজিতে microbe।

পার্থক্য: জীবাণু রোগ সৃষ্টিকারী বা ক্ষতির হতে পারে আবার নাও হতে পারে। তবে বীজাণু সর্বদা রোগ সৃষ্টিকারী। অর্থাৎ সব বীজাণু, জীবাণু কিন্তু সব জীবাণু, বীজাণু নয়।
 
ণত্ববিধি: বানানে ণ কেন? অণু থেকে বীজাণু ও জীবাণু। অণু বানানে স্বাভাবিক ণ। ক্রিয়ামূলে ণ থাকলে তা থেকে উদ্ভূত সকল শব্দে ণ থাকে। তাই বীজাণু ও জীবাণু বানানে ণ। অনুরূপ: পরমাণু, অণুবীক্ষণ প্রভৃতি।
নিমোনিক: জীবাণু ও বীজাণুর মধ্যে কোনটি সর্বদা ক্ষতিকর এ নিয়ে সংশয় লেগে গেল কী করবেন? মনে করুন: পৃথিবীর সব জীব ক্ষতিকর নয়। তাই সব জীবাণুও ক্ষতিকর নয়। এজন্য এটির নাম জীবাণু।অন্যদিকে, সব বিষ ক্ষতিকর। তাই বিষের ‘ব’ দিয়ে নির্মিত বীজাণুও বিষের মতো সর্বদা ক্ষতিকর।

করোনাভাইরাস : শব্দ অর্থ বিকাশ এবং ইতিবৃত্ত

লিংক: https://draminbd.com/মাস্ক-mask-ও-করোনাভাইরাস-জীবা/

Language
error: Content is protected !!